tag:blogger.com,1999:blog-57392729333267775362024-03-17T00:36:13.444-06:00বাংলা ভাষীযে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী,
সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.comBlogger53125tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-20191452896515523722010-06-01T12:54:00.001-06:002010-06-01T12:54:54.192-06:00যন্ত্র গণকের যন্তর মন্তর - ৩<img src="http://www.ala.org/img/alonline/computer%20guy.jpg" style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204); clear: both;" width="400px;" /> <br /><br />(<a class="eng" href="http://www.somewhereinblog.net/blog/ragibhasanblog/28911437" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">পর্ব ১</span></a>) (<a class="eng" href="http://www.somewhereinblog.net/blog/ragibhasanblog/28912341" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">পর্ব ২</span></a>)<br /><br /><strong>সাত্তার সারের ভাত ঘুম</strong><br /><br />শেষমেশ ভাত ঘুমটা আর জুত করে দেয়া গেলোনা ...<br /><br />ক্লাস এইট সি-সেকশনের ক্লাস টিচার আবদুস সাত্তার স্যারের আজ মেজাজ বেজায় খারাপ। কলেজিয়েট স্কুলের সবচেয়ে বদমাশ ছাত্রদের ধরে ধরে ভরা হয়েছে এই শাখায়, আর এদের বাঁদরামি সামলাতে হয় উনাকেই। দুপুর পেরুলেই ক্লাস প্রায় ফাঁকা, ক’দিন আগে স্টেশন রোডের এক সিনেমা হল থেকে ৪০ জন ছাত্রকে হাতেনাতে ধরা হয়েছিলো। ইদানিং বেতেও কাজ হচ্ছে না, ছেলেপেলে অবস্থা বুঝে দুটো শার্ট পরে আসে যাতে ব্যথা না লাগে।<br /><br />এহেন দুরন্ত ছাত্রদের সামলাতেই যেখানে দিন যায়, সেখানে হেড স্যার গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো করে বাড়তি কাজ চাপিয়ে দিয়েছেন। সামনে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, তার জন্য মার্চপাস্ট করাতে হবে ছাত্রদের দিয়ে; সাধারণত রশীদ স্যার এ কাজটা করেন, কিন্তু তিনি আজ ছুটিতে। তাই এই বাঁদরদের নিয়ে পিটি প্র্যাকটিস আজ তাঁকেই করতে হবে, কড়া এই দুপুরের রোদে। ছেলেপেলেগুলো প্রচন্ড দুষ্ট – আর তাদেরই কি না উচ্চতার ভিত্তিতে লাইন করে দাঁড় করিয়ে প্যারেড শেখাতে হবে।<br /><br />প্রচন্ড খারাপ মেজাজ নিয়ে সাত্তার স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। বান্দরকুলশিরোমণি ছাত্র শফিককে সামনে পেতেই বেতালেন খানিকক্ষণ। তাতেও মেজাজ ভালো হলো না। বাঁদরগুলোকে লাইন করে ঠিকমতো দাঁড়াতে বললে তারা উলটো মশকরা শুরু করে দেয়, কে কোথায় দাঁড়াবে, তা উনাকেই ঠিক করতে হবে।<br /><br />সময় হাতে অল্প, এর মধ্যে ৫০টা বাঁদর ছাত্রকে কীভাবে তিনি উচ্চতার ভিত্তিতে সাজাবেন?<br /><br />----<br /><br />আসুন, আজ দেখা যাক, সাত্তার স্যারকে আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি ...<br /><br /><strong>সর্টিং বা বাছাইকরণ</strong><br /><br />বাছাই করা, অর্থাৎ ক্রমানুসারে সাজানো তথ্য বিশ্লেষণের একটি মৌলিক সমস্যা। এক গাদা সংখ্যাকে ছোট থেকে বড়, কিংবা বড় থেকে ছোট, অথবা অনেকগুলো নামকে বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো – এরকম সমস্যা আমাদের প্রতিনিয়তই সমাধান করতে হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানে এই সমস্যাটির সমাধানের কৌশলগুলোকে বলে সর্টিং অ্যালগরিদম। আজ আমরা দেখবো এই সর্টিং এর কিছু সহজ কৌশল।<br /><br /><strong>সিলেকশন সর্ট</strong><br /><br />এই সর্টিং কৌশলের মূল ধারণাটা খুব সহজ। তালিকাকে ছোট থেকে বড়তে সাজাতে হবে? তাহলে প্রথম ধাপে তালিকার সবচেয়ে ছোট সংখ্যাটা খুঁজে নিন। সেটাকে আলাদা করে রাখুন। এবার বাকি গুলো থেকে সবচেয়ে ছোটটি বেছে নিন, আগের সংখ্যাটির পরে রাখুন এটাকে। এভাবে প্রতি ধাপে তালিকার বাকি অংশের সবচেয়ে ছোট সংখ্যা বেছে বেছে নিয়ে পেছনে যোগ করতে থাকুন, তাহলেই পরিশেষে পেয়ে যাবেন ছোট থেকে বড়তে বাছাই করা একটা তালিকা।<br /><br />ধরা যাক, সাত্তার স্যারের সামনে আছে রফিক, শফিক, হিমাদ্রি, জুয়েল, ফারুক, ও দেবকান্ত। এদের উচ্চতা একেক রকম, রীতিমতো বাটকু শফিক যেমন আছে, সেরকম ঢ্যাঙা গোছের ফারুকও আছে। এদের উচ্চতাগুলো, ইঞ্চিতে, ধরা যাক, (৬৩, ৫৫, ৬৫, <strong>৫২</strong>, ৭১, ৫৬)।<br /><br />তাহলে প্রথম ধাপে আমরা পেলাম সবচেয়ে বেঁটে হলো শফিক, অর্থাত ছোট সংখ্যা, ৫২। শফিককে সাত্তার স্যার বললেন মাঠের মধ্যে লাইনের শুরুতে দাঁড়াতে। (ভেঙচি কাটা দেখে ফেলাতে বাড়তি শাস্তি হিসাবে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখলেন)। যাহোক, অংকের হিসেবে ব্যাপারটা দাঁড়ালো এরকম, আমাদের হাতের তালিকার শুরুতে রাখলাম [৫২]। বাকি সংখ্যার তালিকাটা হলো (৬৩, <strong>৫৫</strong>, ৬৫, ৭১, ৫৬), আর তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলো ৫৫। সেটাকে হাতের তালিকার পেছনে রাখলে হয়, [৫২, ৫৫]।<br /><br />বাকি সংখ্যার তালিকা (৬৩, ৬৫, ৭১, <strong>৫৬</strong>), সেখানকার ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ৫৬। তাকে বাছাই তালিকার পেছনে দিলে সেটা হয় [৫২, ৫৫, ৫৬]।<br /><br />বাকি সংখ্যার তালিকা (<strong>৬৩</strong>, ৬৫, ৭১), সেখানকার ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ৬৩। তাকে বাছাই তালিকার পেছনে দিলে সেটা হয় [৫২, ৫৫, ৫৬, ৬৩]।<br /><br />বাকি সংখ্যার তালিকা (<strong>৬৫</strong>, ৭১), সেখানকার ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ৬৫। তাকে বাছাই তালিকার পেছনে দিলে সেটা হয় [৫২, ৫৫, ৫৬, ৬৩, ৬৫]।<br /><br />আর বাকি রইলো ৭১, (ক্লাসের সবচেয়ে ঢ্যাঙা ছোকরা গুঁফো ফারুক, তার উচ্চতা এখনই কলেজে পড়া ছেলেদের মতো!!)। ৭১ সেটা তালিকার সবচেয়ে বড় সংখ্যা, তাকে বাছাই তালিকার পেছনে জুড়ে দিলে পাই [৫২, ৫৫, ৫৬, ৬৩, ৬৫, ৭১]। ব্যস, বড় থেকে ছোটতে সাজানো হয়ে গেলো তালিকাটা।<br /><br />আরেকটা উদাহরণ দেখা যাক নিচের ছবিতে (উৎসঃ উইকিপিডিয়া) -<br /><br /><img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/9/94/Selection-Sort-Animation.gif" style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204); clear: both;" width="400px;" /> <br /><br />এভাবে না হয় ৬ জন ছাত্রকে কম থেকে বেশি উচ্চতায় সাজানো গেলো, কিন্তু সময় কেমন লাগলো? এখানে দেখা যাচ্ছে, ছয় জনের জন্য ছয় ধাপ লেগেছে। আবার প্রতি ধাপে বাকি সংখ্যার তালিকার সবচেয়ে ছোটটি বের করতে হয়েছে। কাজেই মোট ছাত্রের সংখ্যা ক হলে এই পদ্ধতিতে সময় লাগছে গড়পড়তায় ক ধাপ x প্রতি ধাপে গড়ে ক’টি তুলনা, মানে গড়পড়তার গোজামিলে কxক।<br /><br />এর চেয়ে দ্রুতও নিশ্চয় কাজটা করা সম্ভব? ৫০টা বাঁদর ছেলেকে এক এক করে এমন করে সাজাতে গেলে সারা দিন লাগবে, তাই সাত্তার স্যার এবার ক্লাসের ফার্স্ট বয় পার্থ, তাকে ডেকে কাজটা ধরিয়ে দিলেন। উনার আবার দুপুরের ভাতঘুমটা পেয়ে বসেছে।<br /><br /><strong>বাবল সর্ট বা বুদ্বুদ বাছাই</strong><br /><br />পানি বা সাবান পানির মধ্যে স্ট্র ডুবিয়ে বুদবুদ বানিয়েছেন ছেলেবেলায়? কিংবা এখনো? যদি করে থাকেন তাহলে হয়তো দেখেছেন, বড় বুদবুদ অনেক দ্রুত ভেসে উঠে?<br /><br />পার্থর মাথায় এলো এই বুদ্ধিটা, এক এক করে কে সবচেয়ে ছোট তা বের না করে অন্য পদ্ধতি খাটাবে। লম্বু কাউকে পেলেই লাইনের পেছনের দিকে ঠেলে দেবে।<br /><br />যা বুদ্ধি সেই কাজ, পার্থ সবাইকে এক বারে লাইনে দাঁড় করিয়ে ফেললো। এর পর শুরু করলো এই কাজটা, প্রথমজন থেকে শুরু করলো। প্রত্যেককে পরের সাথে তুলনা করে, যদি আগেরজন পরের জনের চাইতে লম্বা হয়, তাহলে লম্বুজনের সাথে বেঁটেজনের জায়গা বদল করে দেয়। এভাবে শেষ জনের আগের জন পর্যন্ত যাবার পরে আবার প্রথম থেকে শুরু করে, তবে এবার শেষ জনের দুইজন আগে গিয়ে অদলবদল বন্ধ করে।<br /><br />আবারও উদাহরণ হিসাবে (<strong>৬৩, ৫৫</strong>, ৬৫, ৫২, ৭১, ৫৬) তালিকাটা দেখা যাক।<br /><br />প্রথম দুইজনের উচ্চতা ৬৩ ও ৫৫, কাজেই লম্বু ৬৩কে দ্বিতীয় স্থানে পাঠানোতে তালিকাটা দাঁড়ালো (৫৫, <strong>৬৩, ৬৫</strong>, ৫২, ৭১, ৫৬)। এবারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জনের জোড়া (৬৩, ৬৫) এর মধ্যে ৬৫ লম্বু, কাজেই জায়গা বদলের দরকার নাই। তার পরের জোড়া (৬৫, ৫২) কে জায়গা বদল করে পাই (৫৫, ৬৩, ৫২, <strong>৬৫, ৭১</strong>, ৫৬)। তার পরের জোড়া (৬৫, ৭১) ঠিক আছে। সর্বশেষ জোড়া (৭১, ৫৬) কে জায়গা বদল করানোতে পাওয়া গেলো (৫৫, ৬৩, ৫২, ৬৫, ৫৬, ৭১)।<br /><br />এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে একই কাজ শুরু থেকে করতে হবে, কিন্তু সবশেষের জায়গার লম্বু ফারুককে বাদ দিয়ে,<br /><br />(<strong>৫৫, ৬৩</strong>, ৫২, ৬৫, ৫৬, ৭১) -> (<strong>৫৫, ৬৩</strong>, ৫২, ৬৫, ৫৬, ৭১) (১ম দুইজন ঠিক আছে)<br /><br />(৫৫, <strong>৬৩, ৫২</strong>, ৬৫, ৫৬, ৭১) -> (৫৫, <strong>৫২, ৬৩</strong>, ৬৫, ৫৬, ৭১) (জায়গাবদল)<br /><br />(৫৫, ৫২, ৬৩, ৬৫, ৫৬, ৭১) -> (৫৫, ৫২, <strong>৬৩, ৬৫</strong>, ৫৬, ৭১) (ঠিক আছে)<br /><br />(৫৫, ৫২, ৬৩, <strong>৬৫, ৫৬</strong>, ৭১) -> (৫৫, ৫২, ৬৩, <strong>৫৬, ৬৫</strong>, ৭১) (জায়গাবদল)<br /><br />এবার ৩য় পর্যায়ে একই কাজ শুরু, কিন্তু সবশেষের লম্বু ফারুক, আর তার আগের হিমাদ্রীকে বাদ দিয়ে।<br /><br />(<strong>৫৫, ৫২</strong>, ৬৩, ৫৬, ৬৫, ৭১) -> (<strong>৫২, ৫৫</strong>, ৬৩, ৫৬, ৬৫, ৭১) (জায়গাবদল)<br /><br />(৫২, <strong>৫৫, ৬৩</strong>, ৫৬, ৬৫, ৭১) -> (৫২, <strong>৫৫, ৬৩</strong>, ৫৬, ৬৫, ৭১) (ঠিক আছে)<br /><br />(৫২, ৫৫, <strong>৬৩, ৫৬</strong>, ৬৫, ৭১) -> (৫২, ৫৫, <strong>৫৬, ৬৩</strong>, ৬৫, ৭১) (জায়গাবদল)<br /><br />এবার ৪র্থ পর্যায়েও একই কাজ শুরু, কিন্তু শেষের তিনজনকে বাদ দিয়ে। এভাবে করতে থাকলে আর দুই ধাপ পরেই আমরা পাবো সাজানো তালিকাটি, (৫২, ৫৫, ৫৬, ৬৩, ৬৫, ৭১)।<br /><br /><img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/3/37/Bubble_sort_animation.gif" style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204); clear: both;" width="400px;" /> <br /><br />(বাবল সর্টের অ্যানিমেশন - উইকিপিডিয়া)<br /><br />পার্থ অবশ্য এতো দূর যেতে পারেনি। স্যার একটু তন্দ্রাতে যেতেই ফারুক পার্থকে মনের সুখে কিছুক্ষণ গাট্টা দিলো। আঁতেল পোলার মাতব্বরী এই রোদে আর কাঁহাতক ভালো লাগে।<br /><br />শোরগোল শুনে সাত্তার স্যারের ঘুমটা গেলো ভেঙে। এখনো কাজ হয়নি দেখে মেজাজ সপ্তমে চড়লো, তাই এক রাউন্ড শাস্তি শেষে দায়িত্বটা এবার দেঁড়েল কুদ্দুসকেই দিলেন।<br /><br /><strong>মার্জ সর্ট বা জোড়া বাছাই</strong><br /><br />কুদ্দুস পড়ায় লবডঙ্কা হলেও কাজের বুদ্ধি প্রখর। বাবা দানু মিঞা সওদাগরের খাতুনগঞ্জের আড়তে বসতে হয়না এখনো, কিন্তু সেখানকার হালচাল ছোটবেলা থেকে দেখে আসাতে এই ধরণের কাজগুলো সহজে করে ফেলতে পারে। কেবল পরীক্ষার খাতাতেই কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। এই নিয়ে ২ বার ফেল করে ক্লাস এইটেই আটকে আছে।<br /><br />যাহোক, কুদ্দুসের মাথায় এলো, এতো ঝামেলা না করে কাজটাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলা যাক। যেমন, আগের উদাহরণের তালিকাটা দেখা যাক। (৬৩, ৫৫, ৬৫, ৫২, ৭১, ৫৬) এই তালিকাটা এক বারে সাজানো কঠিন। তাই কুদ্দুস প্রথমেই এই তালিকাকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেললো (৬৩, ৫৫, ৬৫) আর (৫২, ৭১, ৫৬)।<br /><br />বুদ্ধিটা হলো, এই দুইটা তালিকাকে প্রথমে সাজিয়ে ফেলবে, তার পর এদের দুই তালিকাকে একসাথে জোড়া লাগাবে।<br />(৬৩, ৫৫, ৬৫) তালিকাটাকে কীভাবে সাজাবে? একই রকম, দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা হলো। মাঝের জনকে তো আর কাটা যায় না, তাই তালিকাটা না হয়, (৬৩, ৫৫) আর (৬৫) এভাবে ভাগ হলো।<br /><br />এবার তো প্রথম তালিকাটা, মানে (৬৩, ৫৫) কে সাজানো সোজা, এদের জায়গা বদল করেই পাওয়া গেলো (৫৫, ৬৩)। তার সাথে (৬৫) এই তালিকাটাকে জোড়া লাগাবো কীভাবে? দুই পাশে দুই তালিকার ছাত্রদের দাঁড় করালো কুদ্দুস। তার পর দুই তালিকার সামনের মাথায় যারা আছে, তাদের তুলনা করলো, যে ছোট, তাকে নেয়া হলো। তাই প্রথমে ৫৫ আর ৬৫ এর তুলনা করে নেয়া হলো ৫৫কে। তার পরে ৬৩ আর ৬৫ এর তুলনা করে ৬৩কে, আর এর পর যেহেতু প্রথম তালিকা শেষ, তাই দ্বিতীয় তালিকার সবাইকে পরপর নিয়ে পাওয়া গেলো (৫৫, ৬৩, ৬৫)।<br /><br />ব্যাস, শুরুর তালিকাটা গুছানো হয়ে গেলো, পরের ৩ জনের তালিকাটাও একইভাবে গুছিয়ে পাওয়া গেলো (৫২, ৫৬, ৭১)।<br /><br />এবার কুদ্দুসের হাতে দুটো দল, (৫৫, ৬৩, ৬৫), আর (৫২, ৫৬, ৭১)। এদেরকে জোড়া লাগানোর কাজ শুরু করলো কুদ্দুস।<br /><br />(<strong>৫৫</strong>, ৬৩, ৬৫), (<strong>৫২</strong>, ৫৬, ৭১), [ ] -> (৫৫, ৬৩, ৬৫), (৫৬, ৭১), [<strong>৫২</strong>] (৫৫ আর ৫২ এর মধ্যে ৫২ ছোট)<br /><br />(<strong>৫৫</strong>, ৬৩, ৬৫), (<strong>৫৬</strong>, ৭১), [৫২] -> (৬৩, ৬৫), (৫৬, ৭১), [৫২, <strong>৫৫</strong>] (৫৫ আর ৫৬ এর মধ্যে ৫৫ ছোট)<br /><br />(<strong>৬৩</strong>, ৬৫), (<strong>৫৬</strong>, ৭১), [৫২, ৫৫]->(৬৩, ৬৫), (৭১), [৫২, ৫৫, <strong>৫৬</strong>]<br /><br />(<strong>৬৩</strong>, ৬৫), (<strong>৭১</strong>), [৫২, ৫৫, ৫৬] -> (৬৫), (৭১), [৫২, ৫৫, ৫৬,<strong>৬৩</strong>]<br /><br />(<strong>৬৫</strong>), (<strong>৭১</strong>), [৫২, ৫৫, ৫৬,৬৩]-> ( ), (৭১), [৫২, ৫৫, ৫৬, ৬৩, <strong>৬৫</strong>]<br /><br />( ), (<strong>৭১</strong>), [৫২, ৫৫, ৫৬,৬৩]-> ( ), ( ), [৫২, ৫৫, ৫৬, ৬৩, ৬৫, <strong>৭১</strong>]<br /><br />ব্যাস, গুছানো শেষ। আর এতে ঝামেলাও কম হলো। ঠিক কতোটা কম, কুদ্দুস নিজেও টের পায়নি, কিন্তু আমরা অংক করে দেখতে পারি, ক জন ছাত্র থাকলে তাদের সাজাতে সময় লাগবে ক x log(ক) সময়, যা আগের দুটো পদ্ধতির চাইতেই অনেক কম।<br />মার্জ সর্টের বিভিন্ন ধাপের আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক নিচের ছবিতে (সূত্রঃ উইকি),<br /><br /><img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/e/e6/Merge_sort_algorithm_diagram.svg/618px-Merge_sort_algorithm_diagram.svg.png" style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204); clear: both;" width="400px;" /> <br /><br /><strong>পাদটীকা-</strong><br /><br />সর্ট বা বাছাইয়ের হাজারো পদ্ধতি আছে, একেক ক্ষেত্রে একেকটি প্রযোজ্য। কম্পিউটার ব্যবহারের প্রতিটি ক্ষণেই যন্ত্রগণক ভেতরে ভেতরে এই সর্টিং করে চলেছে, তাই দ্রুতগতির সর্টিং বা বাছাই পদ্ধতি কম্পিউটার বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সর্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে দেখতে পারেন উইকিপিডিয়াতে।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com12tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-77552375929750211112010-06-01T12:52:00.000-06:002010-06-01T12:53:10.005-06:00নামের বাহার, বাহারী নাম, ফরমুলাতে, ফেলেছি ঘাম (২)<p> <a href="http://media.somewhereinblog.net/images/ragibhasanblog_1269671052_1-Comprend_pas2.png" rel="lytebox"><img style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204);" src="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/ragibhasanblog_1269671052_1-Comprend_pas2.png" /></a> </p> <p style="text-align: left; line-height: 1.8em;"> (<a class="eng" href="http://www.somewhereinblog.net/blog/ragibhasanblog/29095694" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">আগের পর্বের পর</span></a>) স্কুলের ইতিহাস বইতে মোগল/পাঠান আমলের বিরক্তিকর ইতিহাস গিলতে হয়েছিলো, তাতে একটা ব্যাপার প্রায়ই দেখতাম, অমুকে তমুক জায়গার সিংহাসন দখল করে সুলতান হওয়ার পরে সমুক নাম ধারণ করেছেন।<br /><br />সেই ধাঁচেই আজ থেকে আমি “<strong>জোজো মানু</strong>” নামটি ধারণ করলাম।<br /><br />ঘাবড়ে গেলেন? নাহ, এটা আমার আকীকা দেয়া নাম নয়, কিংবা মায়ানগরের সিংহাসনেও চড়ে বসিনি, বরং এটা আমার আফ্রিকীয় নাম। আরো খোলাসা করে বলতে গেলে, এটা আমার ঘানার আকান গোত্রপদ্ধতির নাম।<br /><br />ঘানার <a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Akan_names" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">আকান জাতির</span></a> এই নামের রীতি পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশেই চালু আছে। এই পদ্ধতির চমৎকার দিকটা হলো, নাম রাখা নিয়ে কোনো ঝামেলা টামেলা নেই, “শিশুর সুন্দর নাম” জাতীয় বই, কিংবা দাদা-নানার চাপে পড়ে তুঘলকী আমলের নাম রাখারও ফ্যাকড়া নেই। পুরো নামটা চমৎকার এক ফরমুলাতে পড়ে।<br /><br />দেখা যাক, ফরমুলাটা কী রকম।আকানদের নিয়ম অনুসারে নাম হবে দুই অংশের – প্রথম অংশটি হবে সপ্তাহের কোন বারে জন্ম হয়েছে, সেই বারের নাম। আর দ্বিতীয় অংশে থাকবে বাবা-মার কতো নম্বর সন্তান, সেটা।<br /><br />ঘানার কফি আন্নান এর কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার? ভদ্রলোকের নাম কফি আন্নান কেনো হলো, তা জানতে হলে ঘানার এই জাতিগোষ্ঠীর নামের কায়দাটা বুঝতে হবে। কফি মানে হলো শুক্রবার, আর আন্নান মানে চার নম্বর। সব মিলে বোঝা যায়, জাতিসংঘের এই সাবেক মহাসচিব ছিলেন বাবা-মার চার নম্বর ছেলে সন্তান, যার জন্ম শুক্রবারে।<br />কফি যদি মেয়ে হতেন, তাহলে তাঁর প্রথম নামটি হতো আফিয়া। দিনভিত্ত্বিক নামের তালিকাটি নিচে দিয়ে দিলাম, এই সিস্টেমে সহজেই নিজের আফ্রিকীয় নামটি বানিয়ে নিতে পারেন।<br /><br />(বার) -- (ছেলের নাম) -- (মেয়ের নাম)<br /><br />সোমবার – কোয়াদ্দো বা কোজো বা জোজো - আদজোয়া<br />মঙ্গলবার – কোয়াবেনা / কোবি – আবিনা<br />বুধবার – কোয়াকু/কোকু – আকুয়া/আকুবা<br />বৃহস্পতিবার – ইয়াউ/ইয়াবা/ বাবা/আবা – ইয়ায়া<br />শুক্রবার – কফি – আফিয়া<br />শনিবার – কোয়ামে – আম্মা / আমা<br />রবিবার – আকওয়াসি/ কোয়েসি/ সিসি – আকোসুয়া<br /><br />আর ক্রমবাচক নামের পদ্ধতি হলো<br />১ম সন্তান – পিয়েসি বা বার্কো/অর্কো,<br />২য় সন্তান – মানু বা মাআনু<br />৩য় সন্তান – মেনসা বা মানসা<br />৪র্থ সন্তান – আনান বা আন্নান<br />৫ম সন্তান – নুম বা আনুম<br />৬ষ্ঠ সন্তান – নসিয়া বা এসিয়েন<br />৭ম সন্তান – আসোন বা নসোয়া<br />৮ম সন্তান – বতওয়ে<br />৯ম সন্তান – আক্রোন বা নক্রুমা<br />১০ম সন্তান – বদু বা বদুয়া<br />১১শ সন্তান – দুকু<br />১২শ সন্তান – দুনু<br />সবচেয়ে ছোট সন্তান - কাকিয়ে<br /><br />আবার কী অবস্থাতে জন্ম সেটাও অনেক সময় নামের অংশ হতে পারে, যেমন মাঠে ঘাটে জন্ম হলে আফুম, যুদ্ধাবস্থায় জন্ম হলে বেকু, এরকম।<br /><br />এবার বলুন তো, কোয়ামে নক্রুমা কী বারে জন্মেছিলেন, আর কত নম্বর সন্তান?<br /><br />ছক তো দিয়েই দিলাম, এবার চটপট নিজের আফ্রিকীয় নামটি বের করে নিন।<br /><br />-----------------------<br /><br />এবার আফ্রিকা থেকে চলে আসি আমাদের পড়শী বার্মার দিকে। নামের দিক থেকে <a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Burmese_name" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">বর্মীদের মতো</span></a> স্বাধীনতা আর কেউ পেয়েছে কি না সন্দেহ। বর্মী নামের কোনো সিস্টেমই নেই। এমনকি জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ধারণ করাটাও সেখানে স্বাভাবিক। আর নাম পাল্টাতে হলে সরকারী খাতায় অফিসে দৌড়াদৌড়িরও দরকার নেই।<br /><br />আর নাম? বর্মীদের অনেকেরই নাম আগে ছিলো এক syllable বিশিষ্ট। হুমায়ুন আহমেদের বইতে বোধহয় পড়েছিলাম, কারো বাচ্চার নাম “নু” রাখা নিয়ে রসিকতা। বর্মীদের কিন্তু এরকম নাম রাখারই চল ছিলো শখানেক বছর আগেও। বিংশ শতকে এসেই কেবল তারা দুইধ্বনির নাম রাখা শুরু করে। কিন্তু তার মধ্যেও অনেক অংশ আসলে “চাচা”, “আংকেল” এই ধরণের। উদাহরণ দেই, বার্মার প্রথম প্রধানম্পন্ত্রীর নাম ছিলো “উ নু” (U Nu), তাঁর নামের প্রথম অংশ উ আসলে বোঝায় “জনাব” বা “মিস্টার” (অথবা সম্মানার্থে আমরা যেমন বলি “চাচা”, সেরকম)। তাঁর আসল নামটি হলো কেবলই “নু”।<br /><br />আগের উদাহরণের কফি আনানের মতোই জাতিসংঘের আরেক মহাসচিব ছিলেন বর্মী কূটনীতিক উ থান্ট। যথারীতি, তাঁর নামেরও উ অংশটি হলো জনাব, আর থান্ট হলো তার আসল নাম।<br /><br />অনেক সুপরিচিত বর্মীরই নামের অধিকাংশ অংশ এরকম জনাব বা “চাচা” বা “আন্টি” এরকম বোঝায়। যেমন, মহিলাদের নামে ব্যবহৃত “দ” (Daw) এর অর্থ হলো “বেগম”। মং হলো ছোটভাই। সায়াদও হলো পণ্ডিত, বোগইয়োক মানে সেনাপতি। মিন মানে রাজা।<br /><br />সুপরিচিত বর্মী রাজনীতিবিদ অং সান সু কীর নামের ব্যাপারটা অনেকাংশে আধুনিক নামকরণ রীতির উদাহরণ। গত বেশ অনেকদিন ধরেই চল শুরু হয়েছে বার্মায়, বাবা মার নাম নামের পেছনে যোগ করে দেয়া। সু কীর নামের প্রথম অংশ “অং সান” আসলে সু কীর জন্মের সময়ে তাঁর বাবার যে নাম ছিলো, সেটাই। সু হলো তাঁর দাদীর নাম। আর কী হলো তাঁর মায়ের নাম।<br /><br />সুকীর বাবা অং সানের নাম জীবনের শেষদিকে এসে হয়ে যায় বোগইয়োক অং সান, কারণ ততদিনে তিনি সেনাপতি হয়ে গিয়েছিলেন। অং সানের বাবার নাম ছিলো উ ফা (মানে জনাব ফা), আর মায়ের নাম ছিলো দ সু, নামে বেগম সু।<br /><br />---------------<br /><br />বর্মী নামের প্যাঁচে পড়ে মাথা ঘুরতে শুরু করেছে? তাহলে চলুন ঘুরে আসি কোরীয় উপদ্বীপ থেকে।<br /><br /><a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Korean_name" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">কোরিয়ার কারো সাথে যদি পরিচয় থাকে</span></a> , তাহলে প্রায় অবধারিত ভাবে বলতে পারি,তার পদবীটি হবে কিম, লী, পার্ক, চো/কো, কিংবা চ্যান (বা চ্যাং, ঝ্যাং)। কোরীয়দের পদবীর ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য একেবারেই নেই। কোরিয়ার পদবীর পরিসংখ্যানটা দেখুন, ২২% লোকের পদবী কিম, ১৪% এর লী, ৮.৫% হলো পার্ক, আর ৪% করে কো/চো এবং চ্যাং/ঝ্যাং। কোরিয়ায় মোট পদবীর সংখ্যা ২৫০টি হলেও পার্ক/লী/কিম এরা মিলে দখল করে রেখেছে ৪৫% । তাই ঠাট্টা করে বলা হয়, কোরিয়ার কোনো রাস্তাতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে একটা ঢিল ছুড়লে সেটা মিস্টার পার্ক, মিস্টার কিম বা মিস্টার লী’র গায়ে গিয়ে লাগবেই।<br /><br />গুজব চালু আছে, কোরীয়দের মধ্যে নাকি ছেলে মেয়ের পদবী এক হলে বিয়ে করা মানা।আসলে ব্যাপারটা ওরকম ভয়াবহ না, কোরিয়ার রীতি অনুযায়ী প্রতি পরিবারের পদবী ছাড়াও “বন” বলে গোত্রসূচক আরেকটা নাম আছে। বিয়ের নিয়ম হলো, বন আর পদবী এক হলে বিয়ে করা মানা। একই পরিবার বা গোত্রের মধ্যে বিয়ে এড়াতে এই রীতি চালু করা হয়েছে।<br /><br />কোরীয়দের নামের আরেকটা ব্যাপার হলো প্রজন্ম নাম। মানে একই পরিবারের ভাই বোন বা চাচাতো ভাইবোনদের নামের মাঝের অংশটি এক হবে, আর সেটা হলো সেই প্রজন্মের নাম।<br /><br />সব মিলে কোরীয়দের নামের ফরমুলা হলো : পদবী, প্রজন্মনাম, ব্যক্তিগত নাম<br /><br />অবশ্য অনেক সময়ে ব্যক্তিগত নামটা মাঝেও বসতে পারে।<br /><br />যেমন, কোরীয়ার বর্তমান নেতার নাম কিম জং ইল। এখানে কিম হলো পদবী, জং হলো তাঁর ব্যক্তিগত নাম, আর “ইল” হলো প্রজন্মের নাম। নেতার ভাইয়ের নাম কিম পিয়ং ইল। আর নেতার তিন সন্তানের নাম হলো কিম জং নাম, কিম জং চুল, আর কিম জং আন । মানে এই প্রজন্মের নাম হয়েছে জং।<br /><br />(চলবে)<br /><br />(বাংলাদেশীদের নামের ফরমুলার প্রজেক্টের কথা মাথায় আছে। পরে এক সময় দেয়া হবে, আপাতত চা খেতে গেলাম বলে লেখার সময় পেলাম না, আর <a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Fermat%27s_Last_Theorem#Fermat.27s_conjecture" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">ব্লগের মলাটে জায়গা এতো কম</span></a> , ফরমুলাটা পুরো লিখতেও পারছি না, নইলে দেখিয়ে দিয়েই ছাড়তাম ... )<br /><br />(তথ্যসূত্র ও ছবি - উইকিপিডিয়া) </p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-5470169634563434942010-06-01T12:51:00.000-06:002010-06-01T12:52:13.050-06:00নামের বাহার, বাহারী নাম, ফরমুলাতে, ফেলেছি ঘাম<img src="http://www.clipartguide.com/_named_clipart_images/0511-0810-2000-5812_Confused_Man_clipart_image.jpg" style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204); clear: both;" width="400px;" /> <br />বাঙালিদের নামের গড়ন কেমন, এই নিয়ে কৌতুহল জেগেছিলো এক সময়। গণকবিদ্যাতে মাথা নষ্ট করার সুবাদে অভ্যাস হয়ে গেছে, সবকিছুর অ্যালগরিদম খোঁজা। তাই বাঙালিদের নামের রেগুলার এক্সপ্রেশন তথা কোন ফরমুলাতে বাঙালি নাম বানানো চলে, তা নিয়ে চিন্তা করতে গেলাম।<br /><br />গিয়ে বেমক্কা ঝামেলা, বিদেশী যেমন ইংরেজদের বা মার্কিনীদের মতো বাঙালি নামের তো আগা মাথা নেই। উদাহরণ দেই -- <strong>মার্কিনীদের</strong> নাম হয় অনেক সময়েই ত্রিপদী -- প্রথম নামটিকে ওরা খ্রিস্টীয় নামও বলে, মাঝের নামটি ওরা কালে ভদ্রে ব্যবহার করে, তবে প্রায় সবারই থাকে, আর দাদী নানী চাচা খালা মামা ইত্যাদি আত্মীয়দের কারো নামে দেয়া হয় বলে শুনেছি, আর শেষের নামটি? সেতো মার্কিনীদের বংশপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই মার্কিনী নামের ফরমুলা অনেকটা এরকম<br /><br /><br /><em>মার্কিনী নাম = (প্রথম নাম) (মাঝের নাম)? (শেষ নাম)</em><br /><br />(কম্পু-অবিজ্ঞানীদের জন্য টীকা, ? চিহ্নটি বোঝাচ্ছে এই অংশটি ০ বা ১ বার থাকবে, মানে মাঝের নাম একটি হবে অথবা থাকবেই না।)<br /><br />অনেকের আবার সিনিয়র জুনিয়র, ৩নম্বর এমন লেজুড় থাকে, সেটাকে ফরমুলাতে যোগ করলে পাই<br /><br /><br /><em>মার্কিনী নাম = (প্রথম নাম) (মাঝের নাম)? (শেষ নাম) (ক্রমবাচক)</em><br /><br />এখানে প্রথম নামটি আবার অনেক ক্ষেত্রেই বাইবেলে বর্ণিত শ-কয়েক নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, যদিও শেষ নামটি অজস্র অজস্র রকমের হয়। তাই দেখবেন, মার্কিনী বা ইংরেজদের প্রথম নাম টম,জন, পিটার, উইলিয়াম, জর্জ -- এইসব বাইবেলীয় মহামণিষীদের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে, কোনো ক্লাসরুমে "জন, কৈ গেলা" বলে ডাক দিলে হয়তো গোটা দশেক জন জবাব দেবে।<br /><br /><strong>রুশদের </strong>নামেরও ফরমুলা আছে, যেমন<br /><br />রুশ নাম = (ব্যক্তিগত নাম) (বাপের নাম) (গুষ্টির নাম)<br /><br />যেমন, ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন মানে হলো এই চাঁদুর নাম হলো ভ্লাদিমির, বাপের নামও ভ্লাদিমির, আর তাদের বংশের নাম পুতিন।<br /><br /><strong>আরবদের</strong> নামের বিশাল সিস্টেম, তাদের নাম হলো এরকম<br /><br /><br /><em>আরব নাম = (ইসম) | (কুনিয়া) | (নাসাব) | (লাকাব) | (নিসবা)</em><br /><br />(গণকদের উদ্দেশ্যে বলি, কিছুটা গন্ডগোল আছে ফরমুলাতে, এগুলোর ক্রম এরকম নাও হতে পারে সব ক্ষেত্রে)<br />যেখানে ইসম হলো ব্যক্তিটির মূল নাম, কুনিয়া হলো তার ছেলে/মেয়ের থেকে আসা নাম, নাসাব হলো পিতৃবংশের নাম, লাকাব হলো উপাধি জাতীয় নাম যা দিয়ে ব্যক্তিটির বৈশিষ্ট্য বোঝায়, আর নিসবা হলো ব্যক্তিটির পেশা।<br /><br />মাথায় প্যাঁচ খাবার আগে একটা উদাহরণ দেই,<br /><br /><em>আবু করিম মুহাম্মদ আল-জামিল ইবনে নিদাল ইবনে আবদুলআজিজ আল ফিলিস্তিনি<br /></em><br /><br />এর মানে হলো, করিমের বাপ, মুহাম্মদ, দেখতে বড় সুন্দর, নিদালের ছেলে, আবদুল আজিজের নাতি, ফিলিস্তিননিবাসী।<br /><br /><strong>দক্ষিণ ভারতীয়দের</strong> নামের আবার বেজায় অদ্ভুত সিস্টেম। ওদের নাম সর্বসাকুল্যে একটাই হয়। লাস্ট নেইম, সারনেইমের বালাই নেই। (আমার এই সিস্টেমটা বেশ পছন্দ হয়েছিলো, কিন্তু তার পর মনে হলো আমার স্কুলের ক্লাসে চারজন বাবু ছিলো, তাদের এক পর্যায়ে বাবু-১ থেকে বাবু-৪ পর্যন্ত নাম্বারিং করা হয়েছিলো)!<br /><br />উদাহরণ হিসাবে <a class="eng" href="http://www.csail.mit.edu/user/849" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">এই ভদ্রলোকের নাম দেখুন - অরবিন্দ</span></a> নামটাই তিনি ব্যবহার করেন কেবল। সামনে পিছনে কিছু নেই। এমনকি ওনার রিসার্চ পেপারগুলোতেও একই অবস্থা (ভাবখানা অনেকটা বাংলা সিনেমার নায়কদের মতো, এক নামেই পরিচিত)।<br /><br />নাম তো আর অঢেল নেই, তাই বাবু-১ থেকে বাবু-৪ এর মতো দশা সহজেই হতে পারে, তা এড়াতে অনেক সময় দক্ষিণ ভারতীয়রা নিজেদের পেশা বা বর্ণ বা বাড়ির নাম লাগিয়ে দেয়। অথবা লাগিয়ে দেয় বাপের নাম।<br /><br />কিন্তু আরো ইন্টারেস্টিং হলো এদের আদ্যাক্ষর পদ্ধতি -- ধরা যাক একই ক্লাসে দুইটা গোপাল আছে, একজনের বাপের নাম রাম, আরেকজনের বাপের নাম শ্যাম। এখানে দক্ষিণীরা সহজ সিস্টেম করে ফেলেছে, স্কুলের খাতায় নাম লেখাবার সময়ে প্রথমজনের নাম হবে আর. গোপাল (R. Gopal), আর দ্বিতীয় জনের হবে এস গোপাল (S Gopal)। এজন্য অনেক দক্ষিণীর নামেই দেখবেন এরকম আদ্যাক্ষর, কিন্তু ওটা দিয়ে কী হয়, তা আর বলা নেই। যেমন বিখ্যাত গণিতবিদ রামানুজানের নাম খুঁজলে দেখবেন, এস রামানুজান। এস দিয়ে অনেক খানে "শ্রীনিবাস" হয়, তা বলা আছে, কিন্তু আসলে এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝেই ফেলেছেন, রামানুজানের বাপের নাম ছিলো শ্রীনিবাস, আর রামানুজান মোটেও তাদের পদবী টদবী না।<br /><br /><strong>চীনাদের</strong> নামের সিস্টেম আবার উলটো, মানে বংশপদবী আগে, তার পর বসবে নাম। অবশ্য বিদেশে আসলে অন্যদের সুবিধার জন্য ওরা নিজের নামটাও উলটে নেয়। তাই হং চ্যাং জাতীয় কারো নাম যদি দেখেন মার্কিন মূলুকে, তাহএল বুঝবেন চীনারা নিজদেশে তাকে চ্যাং হং বলেই ডাকবে।<br /><br />----------<br /><br />শুরুটা করেছিলাম বাঙালি নামের ফরমুলা বের করার ইচ্ছা নিয়ে, কিন্তু লেখা বিশাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই, তাই যতি টানলাম এখানেই। ৩ ফুটি তুষারে চাপা পড়েছে মায়ানগর, আঁতেল শিরোমণি দুই একজন ছাত্র ছাড়া আর সবাই লেপমুড়ি দিয়ে রয়েছে, তাই পড়াবার ঝামেলা থেকে মুক্ত আপাতত। কাজেই বাঙালি নামের ফরমুলাটা নাহয় আগামী পর্বের জন্যই জমা থাক ...<br /><br />(শিরোনামটি অর্থহীন ছড়ার অপচেষ্টা। নাম এর সাথে "দাম", "ঘাম", "গাম", "চাম", "জাম", "ধাম" এসবের মিল পেলেও মাথায় আর কিছু আসলোনা। কাজেই আপাতত এটাই শিরোনাম রইলো)Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com4tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-54849311636461589722010-06-01T12:50:00.000-06:002010-06-01T12:51:10.429-06:00ব্যানের রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়ইতিহাসের আদিলগ্নে যখন থেকে মানুষ লিখতে শিখলো, তখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে তথ্যগোপনের যুগ। শাসক গোষ্ঠী, কিংবা ধর্মগুরুদের হাতে অপছন্দের বা বিপরীত রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শের তথ্য নিপীড়িত হয়েছে, বাধা দেয়া হয়েছে তথ্যের অবাধ বিস্তারে।<br /><br />সেন্সরশীপের রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি দিয়েছিলো রোমান সভ্যতা। ৪৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে স্থাপিত হয় সরকারী সেন্সরশীপ দপ্তর, যার কাজ ছিলো ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব তথ্য, জ্ঞান বা মতবাদের উপরে খড়গহস্ত হওয়া। সেসময়ের অন্য সভ্যতাগুলোও তৎপর হয়ে ওঠে সেন্সরশীপে, গণতন্ত্রের জন্মভূমি গ্রিসেও চালু হয় বিরোধীপক্ষীয় মতবাদ ব্যান করার প্রয়াস। এই গ্রিক সেন্সরের হাতে বলি হতে হয় দার্শনিক সক্রেটিসকে, ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সক্রেটিসের মতবাদকে সেন্সর করা হয় হেমলক বিষের মরণকামড়ে।<br /><br />প্রাতিষ্ঠানিক সেন্সরশীপ কঠোরতর হয় রোমান ক্যাথলিক চার্চের হাতে। অখ্রিস্টান, কিংবা খ্রিস্টধর্মের অন্যান্য শাখার, বা বিজ্ঞানের বিভিন্ন মতবাদ, অথবা বইপত্র গণহারে নিষিদ্ধ হতে থাকে চার্চের হাতে। ১৫৫৯ সালে পোপ চতুর্থ পল নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেন। সভ্যতা এগিয়ে গেলেও বইপত্র সেন্সর করা কিন্তু থামেনি, নিষিদ্ধ বইয়ের এই তালিকাটি প্রকাশ পেয়ে চলেছিলো বিংশ শতকেও, মাত্র ১৯৬৬ সালে এই তালিকাটি ভ্যাটিকান প্রত্যাহার করে নেয়।<br /><br />রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন মতামত/তথ্য সেন্সর করার রীতি সব স্বৈরাচারী সরকারই চালু রেখেছে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে। নাৎসি জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে হালের বার্মা কিংবা গণচীনের সরকার চেষ্টা করে চলেছে জনগণকে তথ্যবঞ্চিত করে রাখার, দ্বার বন্ধ করে তথ্যকে রোখার। ছাপা বইপত্রের আমলে এটা করা ছিলো বেশ সহজ। সরকারই যেখানে ছাপাখানাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, সেখানে গোপনে ছাপা বা হাতে লেখা ছাড়া অন্য সব কিছুকে দমন করা চলে সহজেই।<br /><br /><strong>দমন-পীড়ণে পারঙ্গম এই তথ্য-খেকো সরকারগুলোর সমস্যা করে দেয় ইন্টারনেট। </strong>নব্বইয়ের দশকে গবেষণাগার থেকে আম-জনতার কাছে ছড়িয়ে যাওয়া এই ইন্টারনেটে তথ্য বিস্তার পেয়ে চলে দুর্দম গতিতে; দেশ স্থান কাল নির্বিশেষে তথ্যের অবাধ চলাচল শুরু হয়ে যায় সারা বিশ্বে। ইন্টারনেটের এই সর্বব্যাপ্ত রূপটির কারণে তথ্য সেন্সর করা হয়ে যায় রীতিমত অসম্ভব। আগে যেখানে দেশের ভেতরের বিরোধীমতবাদের কর্মীটিকে পুলিশী হয়রানী কিংবা নির্যাতন করে চাপা দেয়া যেতো তার কণ্ঠকে, সেখানে ইন্টারনেট দেশের সীমার বাইরে ছড়িয়ে দেয় সেই তথ্যের বিস্তার। দেশের জেলে-রিমান্ডে কাউকে পুরে তথ্য চাপা দেয়া চলে, কিন্তু ইন্টারনেটের আমলে হয়তো সেই তথ্যটি রয়েছে দুনিয়ার অপর প্রান্তের কোনো সাইটে, যেখানে তথ্যখেকো সরকারের দলবলের প্রভাব নেই।<br /><br />তাই ইন্টারনেট সমস্যা করে দেয় গণচীন, ইরান, বার্মা, কিংবা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর। চীনে গণতন্ত্রকামী তরুণদের অভাব নেই, তারা চায় তাদের দেশের বর্তমান ব্যবস্থার সমস্যাগুলোর সমাধান। ইন্টারনেটের এই সর্বব্যাপ্ত তথ্য জোয়ার ঠেকাতে শুরুতে অনেক কায়দা কৌশল খাটানোর প্রয়াস চলে। বাংলাদেশের ফেইসবুক বা ইউটিউব ব্যানের মতো অতি সাধারণ কৌশল, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা ইন্টারনেট গেইটওয়েতে ব্যান করে দেয়া হয় বিভিন্ন সাইট। কিন্তু এসব কৌশল খুব সহজেই এড়ানো যায়, প্রক্সি সার্ভার দিয়ে এসব বাধা এড়ানোটা রীতিমত ডাল-ভাত।<br /><br />চীনা সরকার এটা বুঝে ফেলে অল্প দিনেই। বাংলাদেশের ফেইসবুক বিরোধী মোল্লাদের দৌড় ও স্ট্যামিনা অল্পই, রাস্তাঘাটে বাদ-জুমা মিছিল করে ফেইসবুকের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েই তারা খালাশ, বড়জোর সরকারকে চাপ দিয়ে কয়েকদিন লোক হাসানো ফেইসবুক ব্যান করাতে পারে, কিন্তু তার পর এই প্রজেক্টে ক্ষান্ত দেবে তারা, এ মোটামুটি জানা কথা। কিন্তু চীনা সরকারের একেবারে গোড়ায় কুঠারাঘাত করতে পারে বিরোধী মতাদর্শ। তাই ইন্টারনেট সেন্সরশীপে চীনারা নিয়োগ করেছে অত্যাধুনিকতম সব প্রযুক্তি।<br /><br />বাংলাদেশের গেইটওয়ে ব্যানের মতো যেসব ব্যান-প্রযুক্তি মামুলি কৌশলে এড়ানো চলে, তা তো আছেই, তার পাশাপাশি চীনা সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে একটি রাষ্ট্রীয় ইন্টারনেট সেন্সরশীপ ব্যবস্থা। এ নিয়ে চীনের বাইরের ইন্টারনেট প্রযুক্তিবিদদের আগ্রহের কমতি নেই, চীনের এই সেন্সর পদ্ধতির ডাকনাম দেয়া হয়েছে, দ্য গ্রেট ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল (অর্থাৎ চীনের মহা-ইন্টারনেট-প্রাচীর)। প্রায় ৩০ হাজার সরকারী পুলিশ নিযুক্ত আছে এই প্রজেক্টে। সরকারীভাবে গোল্ডেন শিল্ড নামে পরিচিত এই প্রজেক্টে যেসব কৌশল খাটানো হয়, তার মধ্যে রয়েছে, আইপি ব্যান করা, ডমেইন নেইম ফিল্টারিং, ইউআরএল ফিল্টারিং, কিংবা প্যাকেট ফিল্টারিং। চীনের এই মহাতথ্যপ্রাচীর বিস্তৃত রয়েছে তাদের সারা দেশ জুড়েই।<br /><br />খড়গহস্ত সরকারের এই তথ্য দমনের বিরুদ্ধে আশার আলো কি নেই? অবশ্যই আছে, ইন্টারনেটের প্রযুক্তিবিদেরা তথ্যের মুক্তিতে শুরু থেকেই বিশ্বাসী। তাই তথ্যখেকো সরকারদের এসব অত্যাচার এড়াতে তৈরী হয়েছে নানা কৌশল। কম্পিউটার নিরাপত্তার উপরে গবেষণার কারণে এহেন নানা পদ্ধতির কথা বিস্তারিতভাবে জেনেছি অনেকদিন ধরেই ... এগুলোর উপরে দুটি নামজাদা কনফারেন্স রয়েছে, সেখানে প্রতিবছর বিজ্ঞানীরা সেন্সরশীপ এড়াবার বিভিন্ন কৌশল উপস্থাপন করে চলেছেন।<br /><strong><br />সেন্সরশীপ এড়াবার নানা কৌশলের</strong> মধ্যে রয়েছে,<br /><br /><br />* আইপি ব্যান প্রতিরোধ (প্রক্সি সার্ভার দিয়ে এটা এড়ানো যায়),<br /><br />* ডমেইন নেইম ব্যান প্রতিরোধ (সরাসরি আইপি লিখে এড়ানো যায়),<br /><br />* ইউআরএল ফিল্টারিং (ওয়েব লিংক যাচাই করে নিষিদ্ধ শব্দ পেলে ব্যান করা, ভিপিএন বা এসএসএল দিয়ে এড়ানো যায়),<br /><br />* প্যাকেট ফিল্টারিং (ওয়েবপেইজ সহ বিভিন্ন ডেটা প্যাকেটের ভেতরে উঁকি দেয়া, আর নিষিদ্ধ কোনো শব্দ পেলেই ঘ্যাঁচাং করে ফেলা, এড়াবার কৌশল হলো এনক্রিপশন বা তথ্যগুপ্তিকরণ)।<br /><br />* অনিয়ন রাউটিং, মানে অনেকটা ভুত থেকে ভুতে পদ্ধতি। সরাসরি ফেইসবুকে যেতে সরকার বাধা দিলে তার বদলে নির্দোষ কোনো ঠিকানায় রিকোয়েস্ট পাঠানো, সেখান থেকে যাবে পরের ধাপে, এভাবে কয়েক ধাপ পেরিয়ে ফেইসবুকে যাওয়া, আর ফেরার পথে একই ভাবে সোজাপথে (যা ব্যান করা আছে) না গিয়ে ঘুর পথে ফেইসবুকের পাতাটি নিয়ে আসা, এই পদ্ধতিই হলো অনিয়ন রাউটিং (পেঁয়াজের মতোই কয়েক স্তর পেরিয়ে যাওয়া আর কি... )। আর এর সফল সফটওয়ার হলো টর। এটা ছাড়াও আল্ট্রাসার্ফ, ফ্রিগেট সহ নানা ওপেন প্রক্সি ব্যবহারকারী সফটওয়ার দিয়েও এসব বাধা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।<br /><br />----<br /><br />তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তথ্যখেকো সরকারদের চলছে বড়োই দুর্দিন। আগে পুলিশী হুমকি বা ব্যানের ভয়ে ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়া চলতো, কিন্তু আজ ইন্টারনেটের আমলে কোনো ওয়েবসাইটকে পুরোপুরি ব্যান করে দেয়া রীতিমতো অসম্ভব। খোদ ক্ষমতাশালী চীন সরকারও ব্যর্থ, সেখানে অন্যদের কথা বলাই বাহুল্য। ইন্টারনেট যদি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া না হয়, তবে এসব সাইট ব্যানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোটা আজ ছেলেখেলায় পরিণত হয়েছে। <strong>তথ্য দমনের যে হাজার বছরের ঐতিহ্য ধর্মগুরু বা রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা বজায় রেখেছিলো, ইন্টারনেটের মুক্তিকামী তারুণ্য সেই মহাপ্রাচীরে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে, আর নিত্য নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভেঙে চলেছে নিপীড়নের সেই অচলায়তন।</strong><br /><br />টেক-মুর্খতার অবসান হোক।<br /><br /><br /><strong>লিংক</strong><br /><br /><a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Internet_censorship_in_the_People%27s_Republic_of_China#Technical_efforts_at_breaking_through" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">গণচীনের মহা তথ্য প্রাচীর এড়ানোর নানা কৌশল।</span></a>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-28004995251972535892009-04-20T01:38:00.000-06:002009-04-20T01:39:18.497-06:00আমি কী হনু রে সিনড্রোম ও তার গপ্পো<img src="http://img14.imageshack.us/img14/5615/wikispiderman.jpg" style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204); clear: both;" width="400" /> <br /><br />উইকিপিডিয়াকে মোটামুটি একটা আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানা বলা যেতে পারে, নানা কিসিমের মানুষজন নানা মতলবে আনাগোনা করে এইখানে। আমার মতো বেকুব কয়জনায় মনের সুখে জ্ঞান যোগ করে, কিন্তু বিপুল পরিমান মানুষ ঐখানে আসে অন্য ধান্ধায়। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় গলাবাজি, কিংবা জাতীয়তাবাদের ছড়াছড়ি তো আছেই, তার সাথে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো আছে, "আমি কী হনু রে" সিনড্রোমে (আকীহরে) আক্রান্ত ব্যক্তিরা।<br /><br />"আকীহরে" সিনড্রোমের মোদ্দা কথা হলো, নিজেই নিজেকে বিখ্যাত মনে করা, তার পর বিদ্যাসাগরের সেই অমৃত বাণীকে আক্ষরিক ভাবে নেয়া ("আপনা ঢাক আপনি বাজাইও। অপরকে দিলে ফাটাইয়া ফেলিতে পারে")। এহেন আকীহরে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা উইকিতে হাজির হয়, তার পর প্রথম সুযোগেই নিজের একটা জীবনী লিখে ফেলে।<br /><br />জীবনী নিবন্ধের ক্ষেত্রে উইকির বেশকিছু মাপকাঠি আছে। যেমন, লেখকদের ক্ষেত্রে নামকরা গণমাধ্যমে লেখকের লেখা নিয়ে একাধিক আলোচনা থাকলে, কিংবা লেখক পুরষ্কার পেয়ে বসলে, তারপর তাকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা যায়। রাজনৈতিক পাতি নেতারা গুরুত্বপূর্ণ না, কিন্তু কোনো সংসদ বা অন্য পদে নির্বাচিত হলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এসবের মধ্যেও অনেক ফাঁক বা গ্রে এরিয়া আছে। তবে মোটামুটি ভাবে সাধারণ হিতাহিত কাণ্ডজ্ঞান থেকেই বোঝা যায়, কে আসলেই খ্যাতনামা, আর কে অখ্যাত।<br /><br />সমস্যাটা দাঁড়ায় যখন আকীহরে ব্যক্তিরা হাজির হয়। শুরুতেই এরা নিজের নামে একটা এন্ট্রি খুলে বসবে। "দ্রুত বিচার আইন" এর মতো উইকিতেও "দ্রুত অপসারণ" প্রক্রিয়া আছে, তার মাধ্যমে ট্যাগ করে দেয়া যায় হাবিজাবি এন্ট্রিগুলো (যেমন "আক্কাস একজন বাংলাদেশী ছাত্র। তার বাড়ি অমুক স্থানে। ফুন লম্বর ০১৭-১২৩৪৫৬৭৮।" এরকম)। কিন্তু আকীহরে ব্যক্তিটি একটু চালাকচতুর হলেই ধরে ফেলবে, দ্রুত বিচারের খড়গ থেকে বাঁচতে হলে দুই একটা আসল/নকল "সূত্র" দিয়ে ফেলতে হবে। সেটা দিয়ে ফেললে আমলাতান্ত্রিকতায় আর ওটা দ্রুত অপসারণ করা যাবে না, যেতে হবে অপসারণ প্রস্তাবনা, অথবা অপসারণের ভোটে। ঐ অপসারণ ভোটের সময়ে একজন প্রস্তাব রাখে, আক্কাসের জীবনীটি অমুক নীতিমালার অধীনে অপসারণ করা হোক, আর বাকিরা আলোচনা করে একমত, অথবা "মানিনা" এই মতে। অবশ্য যেকোনো মতের সপক্ষে বলতে হয়, কোন যুক্তিতে -- যুক্তি-ফুক্তি ছাড়াই "আক্কাসরে ভালা পাই তাই মানি না" এই রকম কথা বললে ঐটা আমলে আনা হবে না। ৫ থেকে ৭ দিন এই ভোটের পালা চলে তার পর একজন প্রশাসক সিদ্ধান্ত নেয়, হ্যাঁ নাকি না জয়যুক্ত হয়েছে, তার পর নিবন্ধ রাখা হয় বা মোছা হয়।<br /><br />বাংলাদেশের লোকদের জীবনী নিবন্ধগুলোর উপরে নজর রাখি, আগে উইকি কি এইটা মানুষে না বুঝলেও ইদানিং "সচেতনতা" বেড়ে গেছে, তাই এখন সপ্তায় না হলেও মাসে একটা দুইটা আকীহরে জীবনী যোগ হয়। বাংলাদেশী উইকিপিডিয়ানদের সংখ্যা বেশ কম, সেই সুযোগে আকীহরেরা নানা ভুজুং ভাজুং দেয়ার চেষ্টা করে, হাবিজাবি জিনিষকে "রেফারেন্স" বলে দাবী করে বসে।<br /><br />উদাহরণ দেয়া যাক, লন্ডনপ্রবাসী জনৈক ব্যক্তি (নাম বলবোনা) পেশায় সম্ভবত ব্যবসায়ী, আর শখ হলো মহাকাশ সম্পর্কে পড়া, নিজের পয়সায় একটা "উপন্যাস" ছাপিয়েছেন। এই ব্যক্তির হঠাৎ আকীহরে রোগ পেয়ে বসলো, ব্যস, শুরু করে দিলেন নিজের নামে জীবনী। তাও আবার ছদ্মনামের একাধিক উইকি ইউজার অ্যাকাউন্ট থেকে (নাম আলাদা কিন্তু কাম দেখলেই বুঝি একই লোকের কাজ)। এই লোকের কাজ হলো বিভিন্ন থিওরি বের করা, তার পর দাবী করা সেই নাকি প্রথম ব্যক্তি যে ঐরকম থিওরি বের করেছে। বলাবাহুল্য, তার এইসব তত্ত্ব ছাপা হয়না কোনো গবেষণা জার্নাল কিংবা কনফারেন্সে, তার প্রকাশের ভেন্যু হলো বিভিন্ন নিউজগ্রুপ বা নিজের সাইট।<br /><br />বাংলাদেশের মিডিয়ার একটা সমস্যা আছে, বিজ্ঞান বিষয়ক অনেক কিছুকেই যাচাই বাছাই না করেই এরকম প্রতারকদের কথা ফাটিয়ে লিখে (বাঙালির কৃতীত্ব এরকম ধাঁচে, "নয়ন সুপারকম্পিউটার", "কচির শূণ্য থেকে বিদ্যুৎ দ্রষ্টব্য)। তো, জনাব আকীহরে "জ্যোতির্বিদ" এরকম কিছু রিপোর্ট লিখিয়ে নিয়ে তার পর "বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিকাল অ্যাসোসিয়েশন"কেও পটিয়ে ফেললেন, তার পর কায়দা করে সেই সমিতির "অনারারি মেম্বার" হিসাবে "মর্যাদা" অর্জন করলেন। ব্যস, আকীহরে হিসাবে নিজের জীবনীতে ঐটাও ফাটিয়ে যোগ করে দিলেন, হাজার হলেও বিদেশী কারো পক্ষে নাসা আর বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিকাল অ্যাসোসিয়েশনের পার্থক্য করা কঠিন, তাই নাসার ফেলো আর বাস এর অনারারি ফেলোর পার্থক্য ধরতে না পেরে অপসারণের ভোটে জেতা যাবে সহজে, এই ধান্ধায়। সেবার অনেক কষ্টে সৃষ্টে এই আকীহরে "জ্যোতির্বিদ" এর ধাপ্পাবাজি প্রমাণ করতে পারা গেছিলো।<br /><br />--<br /><br />গত সপ্তাহে আরেক আকীহরে এলো, তার অবশ্য পথ অন্য, সে হলো আকীহরে গায়ক। বাংলাদেশের সঙ্গীত ধারা সম্পর্কে আগে হালনাগাদ ছিলাম, ইদানিং দূরে থাকলেও এতো দূরে নাই যে বিশ্বকোষীয় কাউকে চিনবো না। "জ্যা" আদ্যাক্ষরের এই গায়কের এন্ট্রি দেখে তাই ঘাবড়ে গেলাম, এমনই কি বয়স হলো যে এমন "বিখ্যাত" গায়ককে চিনি না!! এই আকীহরে আবার একগাদা পত্রিকার রেফারেন্স দিয়ে এসেছে তার ছদ্মনামের উইকি একাউন্ট থেকে।<br /><br />খোঁড়াখুড়ি শুরু করলাম, তার পর বেরুলো অন্য ঘটনা, ডেইলি স* নামের পত্রিকার একাধিক শাখা, উদীয়মান পাতা, আর জীবনধারা পাতায় ঐ আকীহরে গায়কের নামের উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু দুই আলাদা কলাম লেখকের লেখাতেই বিশাল এক প্যারাগ্রাফ হুবুহু মিলে যায়। পরে আরেক বাংলাদেশী উইকিপিডিয়ান নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী জানালো, ঐ পত্রিকার এসব পাতায় সাধারণত স্কুল কলেজের ছাত্ররা লিখে থাকে, তাই সম্ভবত আকীহরের বন্ধু বান্ধব টাইপের কেউ চোথা অনুসারে লিখেছে। আকীহরে আবার নিজের "মাইস্পেইস" পাতাকেও "রেফারেন্স" টেনেছিলো, পরে বেরুলো ঐ বিশাল প্রশংসামূলক কথামালা আসলে তার নিজের মাইস্পেইসের আত্মজীবনী থেকে নেয়া।<br /><br />বলাই বাহুল্য, আকীহরে গায়কটির আত্মজীবনীও মানদন্ডে পাত্তা পায়নি, পটল তুলেছে ক'দিন আগে।<br /><br />---<br /><br />আকীহরেদের আপাতত ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে, কিন্তু এদের দৌরাত্ম ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একসময় নিজের ওয়েবপেইজেই এদের আনাগোনা সীমিত ছিলো, কিন্তু এখন ফেইসবুকে ফ্যান ক্লাব নিজেরটা নিজেই খুলে বসা* থেকে শুরু করে উইকিতেও হানা দেয়া শুরু হয়েছে। আর তার উপরে বাংলাদেশের বাংলা পত্রিকাগুলো জব্বারীয় পুরানো কাগু-বাংলা নিয়ে বসে থাকাতে সার্চ করা সেখানে অসম্ভব, কাজেই কে আসলে বিখ্যাত, আর কে আকীহরে, তা বোঝা কষ্টকর। উইকির এটা একটা দূর্বলতা, তবে উল্লেখযোগ্যতার নীতিমালার কড়া প্রয়োগ, আর সবকিছুর রেফারেন্স প্রদান বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে আকীহরেদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা ওখানে করা হয়।<br /><br />অবশ্য অনেক সময়ে আকীহরেরা নানা ফ্যাসাদেও পড়ে যায়, যেমন আকীহরে জীবনী অপসারণের প্রস্তাবনাতে অনেক সময়েই ঐ ব্যক্তিটি কীরকম নগন্য তা নিয়ে বিশাল আলাপ হয়, এবং মোছার সপক্ষের লোকেরা নানা প্রমাণ হাজির করে। গুগলের কল্যাণে এক সময়ে অনেক আকীহরের নাম দিয়ে সার্চ করলে এই সব মর্মান্তিক আলোচনাই চলে আসতো, বাস্তব জীবনে মাথা কাটা যাবার মতো সব কথা আকীহরেকে খোঁজা ব্যক্তিদের চোখে এসে যেতো। বিপুল সংখ্যক আকীহরের "মানহানী" হচ্ছে বলে উইকিকে মামলার ভয় দেখানোতে এখন আর ঐ আলোচনার পাতা গুলা গুগলকে দেখতে দেয়া হয় না।<br /><br />হাজার হলেও, আকীহরে সিনড্রোম বলে কথা ... সমালোচনা সহ্য করা, কিংবা নিজেদের আসল রূপের প্রকাশ সওয়াটা তাদের পক্ষে অনেক অনেক কঠিন ...Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com6tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-74834958583732933172009-04-14T14:59:00.000-06:002009-04-14T15:01:16.323-06:00স্মৃতিচারণে হ্যাল, ইলিয়াক আর মোজাইক - তারুণ্যের দিনবদল<p> <img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/a8/New_NCSA_Building_UIUC_by_Ragib.jpg/800px-New_NCSA_Building_UIUC_by_Ragib.jpg" width="450" align="center" /> </p> <h1>১</h1> <p><a href="http://gladiator.ncsa.uiuc.edu/Images/logo/logo_sample_horizontal.jpg" rel="lightbox[post-23367]"><img src="http://gladiator.ncsa.uiuc.edu/Images/logo/logo_sample_horizontal.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a><br /><a href="http://www.ncsa.uiuc.edu/" target="_blank" class="bb-url">National Center for Supercomputing Applications </a>(NCSA) বা মার্কিন জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্রের নামটা শুনেছিলাম অনেকদিন আগেই। না শোনার অবশ্য কারণ নেই, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের হেল্প মেনুটি খুললেই অল্প কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা যেতো, তারা ওখানে ব্যবহার করেছে NCSA এর প্রযুক্তি। </p> <p>ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনের সাথে সুপারকম্পিউটিং এর যোগাযোগ অনেকদিনের। সেই ১৯৫২ সাল থেকে, অর্থাৎ কম্পিউটারের প্রাথমিক যুগ থেকেই এখানে সুপারকম্পিউটার বানানোর কাজ চলছে, ILLIAC -1 থেকে শুরু করে ILLIAC-4 পর্যন্ত সবগুলো কম্পিউটার একসময় এখানেই তৈরী হয়েছিলো। যারা <a href="http://en.wikipedia.org/wiki/2001_%28movie%29">2001 - A Space Odyssey</a> দেখেছেন, তারা হয়তো মনে করতে পারবেন, <a href="http://en.wikipedia.org/wiki/HAL_9000" target="_blank" class="bb-url">HAL</a> নামের সেই খুনে কম্পিউটারটির কথা, ওর জন্ম হয়েছিলো কিন্তু এই আরবানা নামের শহরেই। (মানে, উপন্যাস ও সিনেমাতে এর জন্মস্থান দেখানো হয়েছিলো এখানে)। </p> <h1>২</h1> <p> <img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/1/1f/Hal-9000.jpg" /><br />(ছবির কম্পিউটার HAL 9000, যার জন্ম আরবানাতে) </p> <p>HAL এর কথা পড়েছিলাম 2001 উপন্যাসটিতে, সে ৯০র দশকের প্রথম দিকের কথা ... তখন কি আর জানতাম, এক যুগ পরে এই ভুট্টাক্ষেতের পাঠশালাতে পড়বো এক সময়? তাই ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর প্রথম দিনেই হানা দেই কম্পিউটার বিজ্ঞান ভবনটিতে, আর কী আশ্চর্য!! সেখানকার একতলাতে HAL নামের কম্পিউটারটির উপরে বিশাল কাঁচের ডিসপ্লে!! আসলে গল্পে দেখানো হয়েছিলো (১৯৬৮ এর দিকে লেখা) যে আরবানাতে কম্পিউটার প্ল্যান্টে ১৯৯৭ সালে HAL তৈরী হয়েছিলো, তাই ১৯৯৭ সালে এখানকার কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে ঘটা করে HAL এর জন্মদিন পালন করা হয়, সাইন্স ফিকশন ভক্তরা দল বেধে সারা আমেরিকা থেকে এখানে আসে।</p> <p>তো, এতো বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কেনো আর্থার সি ক্লার্ক বেছে নিয়েছিলেন কম্পিউটারটির জন্মস্থান হিসাবে? তার কারণ জানতে চেয়েছিলাম এখানকার এক অধ্যাপকের কাছে, ঘটনাচক্রে তিনি আবার উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করে থাকেন। তাঁর কাছ থেকে জানা গেলো, স্ট্যানলি কুব্রিক আর আর্থার সি ক্লার্ক সিনেমাটা বানাবার সময়ে কারিগরী উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজনকে, তার সুবাদেই HAL এর জন্মস্থান আরবানা। আসলে ষাটের দশকের শেষভাগ থেকেই কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এখানকার সুনাম ছড়িয়েছিলো।</p> <h1>৩</h1> <p> <img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/7/7d/Illiac_II_Modules.jpg" /><br />(ILLIAC 3, বর্তমানে আস্তাকুড়ে বা গ্যারেজে পড়ে থাকা তার যন্ত্রাংশ) </p> <p>ILLIAC নামের প্রথম ৩টি প্রজন্মের কম্পিউটার অতো খ্যাতি বা কুখ্যাতি পায়নি, যেটা পেয়েছিলো ILLIAC-4। এই কম্পিউটারটি সত্তরের দশকের শুরুর দকে তৈরীর পরিকল্পনা নেয়া হয়, তখনকার দিনের নতুন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু কুখ্যাতির কারণ অন্য -- এই সুপারকম্পিউটারটির অর্থায়ন আসে মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে, আর সময়টা ভিয়েতনাম যুদ্ধের কাল, পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে উদ্দাম তারুণ্য যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে তখন সোচ্চার। তাই এখানকার ক্যাম্পাসেও লাগে যুদ্ধবিরোধী হাওয়া, সেনাবাহিনীর পয়সায় কম্পিউটার বানিয়ে তাতে মানুষ মারার অস্ত্রের নকশা করা হবে, এরকম কোনো কিছুর বিরোধিতা করে ছাত্ররা। বিশাল সেই ছাত্র আন্দোলনের মুখে কম্পিউটারটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়, পরে ক্যাম্পাস থেকে বহু দূরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যপ্রান্ত নাসার গবেষণাগারে তৈরী হয় এটি।</p> <p>ইলিয়াকের ঘটনা ইতিহাস হয়ে যায়, মার্কি যুক্তরাষ্ট্র হেরে ভুত হয়ে ভিয়েতনাম ছেড়ে আসে, তারও ১০ বছর পর NCSA স্থাপিত হয় ১৯৮৬ সালে, মার্কিন সরকার পুরো দেশজুড়ে কয়েকটি জায়গায় সুপারকম্পিউটারের গবেষণাগার বানায়, যাতে করে পুরো দেশের বিজ্ঞানীরা এগুলো ব্যবহার করতে পারে। NCSA তে গত এই ২৩ বছর জুড়ে অনেকগুলো প্রচন্ড ক্ষমতাধর সুপারকম্পিউটার স্থাপিত ও তৈরী হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার গবেষকেরা নিজেদের সুপারকম্পিউটার না থাকলেও দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করতে পেরেছেন।</p> <p>--</p> <h1>৪</h1> <p>আমি যখন পা রাখি ভুট্টা ক্ষেতে, তখন সবাইকে প্রশ্ন করি, NCSA ভবনটি কোথায়। কোথায় গেলে দেখতে পাবো এই বিখ্যাত গবেষণাগারটিকে। জবাবে ৫টি ঠিকানা পেলাম, জানলাম পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে আছে এটি। এর মধ্যে একটি ভবন নাকি বানানো হয়েছিলো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঠেকানোর মতো শক্ত করে, যাতে তার ভেতরে থাকা সুপারকম্পিউটারটি রক্ষা পায়। এখন অবশ্য সুপারকম্পিউটার বলতে অতিকায় কোনো একটি মাত্র যন্ত্র বানানো হয়না, বরং র্যাকে রাখা হাজার কয়েক সাধারণ কম্পিউটারকে যুক্ত করে ক্লাস্টারভিত্তিক সুপারকম্পিউটার বানাবার চল এসেছে বহুদিন। তাই সুপারকম্পিউটারের কেন্দ্র হিসেবে NCSA এর খ্যাতিতে ভাগ বসিয়েছে অনেকেই। তার পরেও মাঝে মাঝেই প্রথম ১০ তালিকাতে এদের সুপারকম্পিউটার এসে যায়। </p> <p>২০০৪ এর শুরুতে NCSA-তে কাজ করার সুযোগ পাই, অবশ্য কোনো সুপারকম্পিউটারবিদের সাথে না, বরং একজন কম্পিউটেশনাল অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্টের সাথে। খটোমটো যে পদবীটি এই বিজ্ঞানীর ছিলো, তার সার কথা হলো, ইনি কম্পিউটার বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংমিশ্রণে কাজ করেন। কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে আসা তারার মিটিমিটি আলোকে কিংবা বেতার তরঙ্গকে ধরতে নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে বসেছে কয়েকশো রেডিও দূরবীন, সেখানকার সংকেতগুলোর বিপুল পরিমাণ উপাত্ত থেকে এই বিজ্ঞানী ছবি তৈরী করেন, ২০০০ সালের দিকে এক তারার মৃত্যুদৃশ্যের ছবি প্রকাশ করে পুরো বিশ্বজুড়ে খবর হয়েছিলেন। </p> <p>একদিন অবশ্য সুপারকম্পিউটারের পেটের ভেতরে যাবার সুযোগ ঘটে। বেশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো, ভবনে ঢোকার আগে বাইরে ক্যামেরা দিয়ে দেখে যাচাই করা হলো, সাথে পাহারাদার দেয়া হলো আমাদের। পেটের ভেতরে বললাম, কারণ পুরো বিশাল একটি কক্ষজুড়ে লাইব্রেরীর তাকের মতো অনেকগুলো শেলফ, আর তাতে বসানো আছে কয়েকহাজার নোড। প্রচন্ড তাপ সৃষ্টি হয়, তাই পুরো ঘরটির মেঝের নিচে বসানো আছে শীতাতপ যন্ত্র। এটি ছিলো তখন বিশ্বের ৪র্থ দ্রুততম সুপারকম্পিউটার।</p> <table width="100%" border="0"> <tbody><tr> <td> <a href="http://www.ncsa.uiuc.edu/UserInfo/Resources/Hardware/img/abe.jpg" rel="lightbox[post-23367]"><img src="http://www.ncsa.uiuc.edu/UserInfo/Resources/Hardware/img/abe.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a> </td> </tr> <tr> <td>(Abe নামের সুপারকম্পিউটারের কিয়দংশ)</td> </tr> </tbody></table> <p>---</p> <h1>৫</h1> <p>NCSA এর নাম আমি যে কারণে শোনার কথা শুরুতে বলেছিলাম, তার সাথেও মুখোমুখি হতে হয়, অবশ্য অন্যভাবে। নতুন তৈরী হওয়া NCSA ভবনের সামনে স্থাপিত হয় একটি ফলক, আগ্রহভরে দেখতে গিয়ে দেখি, প্রথম বহুল প্রচলিত ওয়েব ব্রাউজার মোজাইকের স্মারক ফলক ওটি (পুরো ক্যাম্পাসে স্থাপিত অন্য দুটি ফলকের একটি ২বার নোবেল বিজয়ী জন বার্ডিন, আর সিনেমাতে শব্দ যোগ করা বিজ্ঞানীটির স্মরণে)। ঘটনা হলো, এই NCSA তে কর্মরত অবস্থাতেই ১৯৯৩ সালে মার্ক অ্যান্ড্রিসেন আর এরিক বিনা নামের দুজন প্রোগ্রামার মাত্র একটি সপ্তাহান্তে বসে এই ব্রাউজারটি তৈরী করেন, দুজনে পরে শুরু করেন নেটস্কেপ নামের কোম্পানিটি, নব্বইয়ের দশকের যা পরাক্রমশালী মাইক্রোসফটেরও ত্রাস হয়ে যায়, নেটস্কেপ নামের ব্রাউজারটি দিয়ে।</p> <p> <img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/9/95/Mosaic_browser_plaque_ncsa.jpg/450px-Mosaic_browser_plaque_ncsa.jpg" width="450" align="center" /> </p> <h1>৬</h1> <p>মোজাইকের প্রযুক্তিটি অবশ্য মাইক্রোসফট নিজেও লাইসেন্স করে ব্যবহার করে, আর সে জন্যেই গত সংস্করণ অবধি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের কৃতজ্ঞতা স্বীকার পাতায় NCSA এর কথা বলা থাকতো। আমি মুখোমুখি হই অন্যজিনিষের, আমার প্রফেসর তাঁর পরিবারের সাথে যেদিন পরিচয় করিয়ে দিলেন, সেদিনই দেখা মিলে এরিক বিনার সাথে, যিনি আমার অ্যাডভাইজরের স্বামী। পিকনিকে এরিকের সাথে খোশগল্পের ফাঁকে ফাঁকে জানতে পারি মজার কাহিনী, মোজাইক বানানোর কাজটা ওরা করেছিলো NCSA তে কর্মরত অবস্থাতে, তাই নেটস্কেপ কোম্পানী খোলার সময়ে লাইসেন্স করার দরকার হয়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো মাথামোটা কর্মকর্তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়, নেটস্কেপ কোম্পানি বা অন্য যারাই ব্রাউজার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে, তারা তাদের লভ্যাংশের একটা বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেবে। মাথামোটা কর্মকর্তা এরকম "অলাভজনক" প্রস্তাবে রাজি হয়নি, বরং বলে, এসবের বদলে কয়েক লাখ ডলার দিলেই অনেক ভালো, তাই সানন্দে মেনে নেয় নেটস্কেপ ও অন্যান্যরা, পরে যখন নেটস্কেপ সহ অন্যান্য ব্রাউজার কোম্পানির লালে লাল রমরমা অবস্থা হয় আর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দাম হয়ে যায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় হাত। বেকুব একেই বলে আর কি।</p> <p>----</p> <p>নিজের গবেষণার ফাঁকে ফাঁকে NCSA কাজ করেছি প্রায়ই, বিজ্ঞানীটির সাথে ছাড়াও এখানকার সিকিউরিটি গ্রুপের সাথে কাজ করেছি। চমৎকার এই গবেষণাগারটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে, তার মধ্যে একটি হলো The Cave, তথা একটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি কক্ষ,যাতে ঢুকে নক্ষত্রমালার মাঝে ঘুরে বেড়ানো যায়, অথবা মানবদেহের মধ্যে ভ্রমণ করা চলে ভার্চুয়ালি। পুরো প্রতিষ্ঠানে নানান দেশের কয়েকশ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী কাজ করেন, বাংলাদেশী একজন প্রকৌশলী কাজ করতেন-- এখন অবশ্য উনি নেই, আর রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্টদের মধ্যে আমি ও আর দুই একজন কাজ করেছেন। </p> <h1>পাদটীকা</h1> <p>সর্বসাম্প্রতিক খবর হলো, এখানে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার ব্লু ওয়াটার্স বানাবার কাজ শুরু হয়েছে। এটাও মার্কিন সরকারের অর্থায়নে ও আইবিএমের সহযোগিতায়। হয়তোবা মানবকল্যাণ, ক্যান্সার গবেষণা, এসব কাজে ব্যবহার হবে এটি, অথবা মারণাস্ত্রের নকশা প্রণয়নে, কিন্তু ষাটের দশকের বিশ্ব আর নেই, তাই নেই এই সুপারকম্পিউটারটির বিরোধিতা। </p> <p>পৃথিবীটা বদলে গেছে, পালটে গেছে তারুণ্যও ...</p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-66654483779183724042009-02-17T15:08:00.002-06:002009-02-17T15:11:05.866-06:00যন্ত্র গণকের যন্তর মন্তর - ২<table width="95%" align="center" border="0"><tbody><tr><td colspan="2"><h2>করিম সাহেবের জাম্বুরা কেনা</h2> </td> </tr> <tr bgcolor="#fefefe"> <td> করিম সাহেব বাজারে গিয়েছেন জাম্বুরা কিনতে। দোকানী এক গাদা জাম্বুরা সাজিয়ে বসে আছে, সবগুলো দেখতে একই আকারের লাগছে। কিন্তু জাম্বুরা কিনে কিনে চুল পাকানো করিম সাহেব ভালো করেই জানেন, জাম্বুরা যত ভারী হবে, ততো তার স্বাদ ভালো, মজা বেশি।<br /><br />প্রশ্ন হলো, করিম সাহেব কী করে একগাদা জাম্বুরা থেকে সবচেয়ে ভারীটি বের করবেন। </td> <td><img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6d/Tosa_Pomelo.JPG/450px-Tosa_Pomelo.JPG" width="100px"" /></td> </tr> </tbody></table> <p><br /></p> <h2>পাঠ ২ </h2> <p>কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ এরকম সমস্যা প্রায়ই আসে, একটা তালিকা থেকে সবচেয়ে বেশি বা কম বা এরকম কিছু একটাকে খুঁজে বের করতে হবে। ধরা যাক, ১০০টা সংখ্যা দেয়া আছে, তার থেকে সবচেয়ে বড় সংখ্যাটা বের করতে হবে।</p> <p>বিশাল সমস্যা! বেকুব কম্পিউটারকে পুরাটা একবারে দিলে লেজে-গোবরে করে ফেলবে। আসুন, প্রথমে সমস্যাটাকে ছোট করে ফেলি। </p> <hr /> <p>১টা যদি সংখ্যা হয়, তাহলে তো আর ঝামেলা নাই। যেটা আছে, সেটাই সবচেয়ে বড়। কাজ শেষ।</p> <p>২টা যদি সংখ্যা হয়, তাহলে তাদের তুলনা করলেই পাবো কোনটা বড়। সংখ্যা দুইটা ডানহাত ও বামহাত – এই দুই জায়গায় নিয়ে বুঝতে পারি কোনটা বড়। করিম সাহেবের সমস্যায় যদি ফেরত যাই, তাহলে করিম সাহেব দুইটা জাম্বুরা দুই হাতে নিয়ে বুঝতে পারবেন সহজেই কোনটা ভারি।</p> <hr /> <p>এখন যদি দুই এর বেশি হয়, ধরা যাক ৩টা, তাহলে? সেটাও সহজ, প্রথমে করিম সাহেব প্রথম দুইটা জাম্বুরা দুই হাতে নিলেন, ধরা যাক ডান হাতেরটা ভারি। তখন বাম হাতেরটা ফেলে ৩য় জাম্বুরাটা বাম হাতে নিলেন, দেখতে চেষ্টা করলেন কোনটা ভারি। ডান হাতে আছে প্রথম দুইটার মধ্যের ভারিটা, আর বাম হাতে অন্যটা, এর মধ্যে যেইটা ভারি হবে, সেটাই ৩টা জাম্বুরার সবচেয়ে ভারিটা।</p> <p>এই কাজটাকে একটু সাংকেতিক ভাবে এভাবে লেখা যায়, ধরাযাক সংখ্যাগুলো আছে x, y, z এই তিনটা নামে, </p> <p>যদি X ও Y এর মধ্যে x বড় হয়, তাহলে x ও z এর মধ্যে যেটা বড়, সেটাই বৃহত্তম,</p> <p>অন্যথায় যদি </p> <p>X ও Y এর মধ্যে Y বড় হয়, তাহলে y ও z এর মধ্যে যেটা বড়, সেটাই বৃহত্তম।</p> <p>এই কথাটাই যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা যায়, যেমন ধরুন C ভাষায় লেখা যায় –</p> <hr /> <table style="width: 486px; height: 235px;" align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> if (x>y) { // যদি<br /> if (x>z) largest = x<br /><br /> else largest = z;<br /><br />} else {<br /><br /> if (y>z) largest = y;<br /><br /> else largest = z;<br /><br />} </td> </tr> </tbody></table> <hr /> <p>দুর্বোধ্য লাগছে? আসলেই ... এই জিনিষটাকে আরো সংক্ষেপে খুব সহজেই লিখতে পারি এইভাবে -</p> <hr /> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> if x>y largest = x else largest =y;<br /><p>if z>largest then largest = z;<br /></p></td> </tr> </tbody></table> <hr /> <p>মানে তিনটা সংখ্যার প্রথম দুইটার মধ্যে বড় যেটা, সেটার সাথে পরেরটার তুলনা করে যেটাকে বড় পাবো, সেটাই সবচেয়ে বড়।</p> <p>আচ্ছা, ৩টা সংখ্যার মধ্যে না হয় এই দুই লাইনে বের করা গেলো বড় সংখ্যাটি। কিন্তু যদি ৩টার যায়গায় ৩০০ বা ১কোটি সংখ্যা থাকে? করিম সাহেবের কথাই ধরা যাক, ঝুড়িতে যদি ৫০টি জাম্বুরা থাকে, তাহলে কী করবেন তিনি?</p> <p>মূলনীতিটা কিন্তু একই থাকছে, কাজেই এভাবে আগানো যেতে পারে,</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> <p>শুরুতে কোনটা ভারী, তা করিম সাহেব জানেননা, তাই তিনি আন্দাজে একটা বেছে নিয়ে ধরলেন সেইটাই সবচেয়ে ভারী। ঐ জাম্বুরাটাকে নিয়ে রাখলেন ডানহাতে।<br /></p> <p>এবার ঝুড়ি থেকে একটা একটা জাম্বুরা বাম হাতে নেন, আর দেখেন ডান হাতেরটার চেয়ে এই নতুনটা ভারী কি না।<br /></p><p>যদি ভারী হয়, তাহলে কথাই নেই, ডান হাতেরটাকে অন্য কোথাও রেখে দিয়ে ডান হাতে পাচার করে দেন বা হাত থেকে নতুন ভারী জাম্বুরাটি।<br /></p><p>এভাবে একটা একটা করে ঝুড়ির সবগুলো দেখা হয়ে গেলে সব শেষে করিম সাহেবের ডান হাতে যা থাকছে, সেটাই ঝুড়ির সবচেয়ে ভারী জাম্বুরা। </p></td> </tr> </tbody></table> <hr /> <p>এবার বেকুব কম্পিউটারকে এরকম ব্যাপার কীভাবে সাংকেতিক উপায়ে বোঝানো যায়, তার একটা রূপরেখা দেখা যাক। ধরাযাক, ১০০টি জাম্বুরা আছে, যাদের নম্বর দেয়া হলো ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত (কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা আবার ০ থেকে গোণা শুরু করে)। আর জাম্বুরা গুলোর ওজন ধরা যাক আছে weight[0] থেকে weight[99] এভাবে।</p> <p>আমাদের কাজ হবে বেকুব কম্পিউটারকে বোঝানো, ১০০টি জিনিষের মধ্যে সবচেয়ে ভারী কোনটা, সেটার ক্রমিক নম্বরটি আমাদের জানানোর কৌশল।</p> <p>শুরুতে, ধরে নেই প্রথমটি সবচেয়ে ভারী।</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> heaviest = 0 ; (প্রথমটির ক্রমিক নং হলো ০ ) </td> </tr> </tbody></table> <p>আর সবচেয়ে ভারী জাম্বুরাটির ওজন আমরা মনে রাখবো max_weight নামে, প্রথমে যেহেতু ধরেছি শুরুর জাম্বুরার ওজন বেশি, তাই সেটার ওজনকেই এখানে মনে রাখি।</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> max_weight = weight[0]; </td> </tr> </tbody></table> <p>এবার এক এক করে বাকি গুলোকে পরীক্ষা করি, দেখি এই max_weight এর বেশি পাই কি না</p> <p>(আমরা একটা একটা করে না লিখে বেকুব কম্পিউটার যেইটা ভালো পারে, সেই পুনরাবৃত্তি তথা লুপের মাধ্যমে করা যায়। সংখ্যা যেহেতু ১০০টি, কাজেই আমাদের অত বার মাপামাপির কাজ করলেই চলবে। এই জন্য কম্পিউটারকে নির্দেশ দেয়া যাক, ১০০ বার সে একটা করে ওজন তুলুক, তার পর দেখুক এইটা আগের চেয়ে ভারী কি না)</p> <hr /> <table width="100%" align="center" border="0"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td width="40%"> for (i = 1; i<100;> </td><td><small>এখন কোনটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, তা i এর মধ্যে রাখবো, আর প্রতি বার লুপের ভিতরের কাজ শেষ হলে ১ করে বাড়াবো। প্রথমটা (০তম) তো দেখেই ফেলেছি, তাই এখন দ্বিতীয়টা, মানে ক্রমিক নং ১থেকে ৯৯ পর্যন্ত বাকি ৯৯টা নিয়ে দেখলেই চলবে)</small><hr /> </td> </tr> <tr bgcolor="#dedede"> <td width="40%"> if (weight[i]>max_weight){ </td> <td> // <small>আগের ওজনদার-তম জাম্বুরার চাইতে এই নতুনটা ভারী কি?</small><hr /></td> </tr> <tr bgcolor="#dedede"> <td width="40%"> heaviest = i;<br /> max_weight=weight[i]<br /><br /> } </td> <td>(<small>তাহলে এই নতুনটাই সবচেয়ে ভারী)<br />(ঐটার ওজনটা মনে রেখে দিলাম)</small></td> </tr> </tbody></table> <p>ব্যস, এই কাজটুকু শেষ ওজন পর্যন্ত করে গেলেই সব শেষে heaviest এর মধ্যে পাবো সবচে ভারী জাম্বুরাটির ক্রমিক নম্বর, আর তার ওজন পাবো max_weight এর মধ্যে।</p> <p>---</p> <p>সুতরাং, আজকের পাঠে আমরা দেখতে পেলাম, ভারী হালকা বের করার কাজটা আমরা সুকৌশলে বেকুব কম্পিউটারের ঘাড়ে গছিয়ে দিতে পারি, যাতে করে আমরা নাকে তেল দিয়ে আরামে ঘুমোতে পারি, আর করিম সাহেবও জাম্বুরা কেনায় বিশাল দাওটি মারতে পারেন।</p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-18641148114405543292009-02-14T18:35:00.000-06:002009-02-14T18:36:47.336-06:00যন্ত্র গণকের যন্তর মন্তর - ১<table align="center" border="0"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td>ভূমিকা<br /></td> </tr> <tr bgcolor="#efefef"> <td> <a href="http://www.sachalayatan.com/ragib/21652#coding"><tiny>(সরাসরি চলে যান প্রথম পাঠে)</tiny></a> <center><br /><img src="http://www.ala.org/img/alonline/computer%20guy.jpg" align="center" /><br /></center><br /><small><br />আমার ছেলেবেলায় বিটিভিতে “বিন্দু থেকে সিন্ধু” নামের একটা অনুষ্ঠান দেখাতো। আশির দশকের কথা ... কম্পিউটার তখন দেশে আছে হাতে গোণা কয়েকটা মাত্র। টিভিতে সেই জাদুর বাক্স দেখে অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইতাম, ভাবতাম কী জাদু জানে এই যন্ত্রটা, কীভাবে করে দেয় সব কাজ। </small><p><small>ঘটনাচক্রে আমার বিদ্যা লাভ করা হয় এই গণক প্রকৌশলেই। প্রোগ্রামিং শেখার শুরুটা আমার কাগজে কলমে, মানে কম্পিউটার কেনার আগেই প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করি, মাস খানেক পরে সারা জীবনের বৃত্তির টাকাগুলো ভেঙে কম্পিউটার কেনা হয়। সে এক যুগ আগের কথা।</small></p> <p><small>এই এক যুগ ধরে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার বই এক গাদা দেখলাম। সেই হার্বার্ট শিল্ড থেকে শুরু করে ডেইটেল অ্যান্ড ডেইটেল সহ অনেক লেখকের লেখা সি বা জাভা শেখার বই পড়েছি, পড়িয়েছি। কিন্তু সবগুলো বইয়েরই একটা সাধারন বৈশিষ্ট্য, তা হলো, বইগুলোতে “প্রোগ্রামিং” শেখানো হয়না, যা শেখানো হয় তা হলো সংশ্লিষ্ট ভাষাটির বৈশিষ্ট্য, এবং তা দিয়ে কীভাবে প্রোগ্রাম লেখা যায়। </small></p> <p><small>কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর যে মূল ধারণা, তা সব ভাষার জন্যই প্রায় সমান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বইগুলোতে সেরকম করে মূল ধারণাগুলোর বদলে প্রায়োগিক দিকগুলোই প্রাধান্য পায়।<br />প্রোগ্রামিং শেখানোটা এক সময় আমার পেশা ছিলো। ছাত্রাবস্থায় ব্যাচে করে সি, জাভা, এসব শেখাতাম। আমার বিদেশে ভর্তির আবেদনের পেছনে যে লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিলো, তার পুরোটাই সেই প্রোগ্রামিং পড়ানোর আয় থেকে যোগান দেয়া। প্রায় দেড়শোর মতো ছাত্রকে একেবারে প্রাথমিক অবস্থার প্রোগ্রামিং শেখাতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনো ভাষা শেখানোর আগে প্রোগ্রামিং এর মূল ধারণাগুলো, আর কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে, তাই যদি শুরুতে শিখিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সেই ছাত্রের পক্ষে পরে যে কোনো ভাষাই শেখাটা অনেক অনেক সহজ হয়ে যায়।</small></p> <p><small>বুয়েটে শিক্ষকতার স্বল্প সময়ে প্রোগ্রামিং শেখাবার কোর্স আমি পাইনি, আর পেলেও লাভ হতোনা, কারণ গৎবাঁধা সিলেবাস আমূল পালটে ফেলাটা রীতিমত “অপরাধ” সেখানে। তাই অনেক দিন থেকেই আমার ইচ্ছা, একটা বই লিখবো, যাতে এই ব্যাপারে খুব সহজ করে কথাগুলো বলা যাবে। এই ধারাবাহিক লেখাগুলো এই সিরিজেরই অংশ।</small></p> <p><small>এই লেখাগুলো প্রোগ্রামিং যারা জানেন, তাদের জন্য মামুলি ব্যাপার। এটা মূলত একেবারে কম্পু-কানা নবীস শিক্ষার্থীদের জন্য। তাই ভাষাগত জটিলতা দেখতে পেলেই জানিয়ে দেবেন, আমি ভাষাগুলো আরো সহজ করার চেষ্টা করবো। মিস্তিরি মানুষ হিসাবে ভাষায় দক্ষতা আমার নগন্য, কাজেই দুর্বোধ্য ভাষার ব্যবহার দেখলে সেটাও ধরিয়ে দেবেন।</small> </p></td> </tr> </tbody></table> <p><a name="coding"></a><br />পাঠ ১</p> <p>কম্পিউটারের বুদ্ধি কতটুকু? গল্প উপন্যাসে যাই পড়ে থাকুননা কেনো শুরুতেই একটা গোপন কথা ফাঁস করে দেই -- কম্পিউটার একটা চরম নির্বোধ যন্ত্র মাত্র। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার আগেই তাই এই বিষয়টা মেনে নিতে হবে ... টিভি ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন, অথবা বাসার ফ্যানটির মতো যেমন বিদ্যুৎ দিয়ে চলে, ঠিক তেমনি কম্পিউটারও বিদ্যুতে চলা একটি যন্ত্র।</p> <hr /> <p>তাহলে, কম্পিউটার এতো সব সমস্যার সমাধান কীকরে করে? এর মূলে রয়েছে অ্যালগরিদম, বা গণনা পদ্ধতি। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কম্পিউটার সমস্যা সমাধান করতে পারে, তার একমাত্র কারণ হলো, আমরাই সমস্যাগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভেঙে দেই, আর কীভাবে সমাধান করতে হবে, তাও কম্পিউটারকে বাতলে দেই। এই “বাতলে দেয়া বুদ্ধি”টুকু বাদে কম্পিউটার কেবলই সিলিকন-জার্মেনিয়ামের কিছু যন্ত্রাংশের সমাহার।</p> <hr /> <p>কম্পিউটার তাহলে কেনো এতো সফল? তার কারণ একটাই, আমাদের বাতলে দেয়া পদ্ধতিতে ছোট ছোট কাজগুলো প্রচন্ড দ্রুতগতিতে কম্পিউটার করতে পারে। হিসাব নিকাশ করার জন্য কম্পিউটারের যে সার্কিট বা বর্তনী রয়েছে, তাতে প্রতি সেকেন্ডে লাখ লাখ থেকে কোটি কোটি ওরকম হিসাব করা যায়। তাই আমাদের বাতলে দেয়া পদ্ধতিতে ছোট ছোট সেই ধাপগুলো কম্পিউটার চোখের নিমেষে করে ফেলে।</p> <hr /> <p>কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর মূল কথা হলো সমস্যা সমাধানকে ছোট ছোট ধাপে ভেঙে ফেলা। একেবারে বড় সমস্যা সমাধান হয়তো কঠিন, কিন্তু সমস্যাটাকে সমাধানযোগ্য ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে ফেলতে পারলেই কম্পিউটারের মতো নির্বোধ যন্ত্র দিয়ে সেটা সমাধান করা যাবে।</p> <p>আজ আমরা একটা গাণিতিক সমস্যা দিয়ে এই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করবো। ধরা যাক, আপনাকে বলা হলো ১ থেকে ৫ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করতে হবে, অর্থাৎ ১+২+৩+৪+৫=? । কাজটা খুবই সহজ, ক্লাস ২ এর বাচ্চাদের দিলে আধা মিনিটেই জবাব দিয়ে দেবে, প্রশ্ন হলো কম্পিউটারকে কীভাবে বোঝাবো সেটা। তার আগে আপনি নিজে ভেবে দেখুন, আপনাকে কাজটা করতে দিলে কীভাবে সেটা করবেন।</p> <p>খুব আস্তে আস্তে ভাবুন। আপনি নিশ্চয়ই এক বারে ৫টা সংখ্যা যোগ করে বসেননি, তাই না? কাজটা যদি কাগজে কলমে দেয়া হয়, তাহলে আমরা সংখ্যাগুলোকে একটার নিচে আরেকটা লিখে ফেলি। তার পর উপর থেকে শুরু করি, একটা করে সংখ্যা নেই, এপর্যন্ত যা যোগফল ছিলো, তার সাথে সংখ্যাটা যোগ করি, তার পর একই কাজ পরের সংখ্যাটা দিয়ে করি। মুখে মুখে এভাবে চিন্তা করি, "এক আর দুইয়ে তিন, তিন আর তিনে ছয়, ছয় আর চারে দশ, দশ আর পাঁচে পনের", অর্থাৎ আমাদের চিন্তাটা ধাপে ধাপে আগাচ্ছে, প্রতি ধাপে একটা করে সংখ্যা আমরা আগের যোগফলে যোগ করে দিচ্ছি।</p> <p>হাতে হাতে করার জন্য, ধরা যাক আমরা টেবিলের উপরে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো রেখেছি, আর ডান হাতে সাময়িক যোগফলগুলো রাখবো। যোগ করার বুদ্ধিটা করলাম এমন, বাঁ হাত দিয়ে টেবিল থেকে একটা সংখ্যা তুলবো, আর সেটাকে ডান হাতে যা ছিলো তার সাথে যোগ করে ডান হাতেই ধরে রাখবো।</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> যেমন, ১ হতে ৫ পর্যন্ত যোগ করতে হলে, প্রথমে ডান হাতে কিছুই নাই, মানে ০। প্রথম সংখ্যাটি ১। সেটাকে শূন্যের সাথে যোগ করে পেলাম ১। <p>পরের সংখ্যাটি ২, সেটাকে আমাদের এপর্যন্ত যোগফল ১ এর সাথে সেটাকে যোগ দিলে হয় যোগফল ৩। </p> <p>পরের সংখ্যাটা ৩, সেটাকে আমাদের এপর্যন্ত যোগফল ৩ এর সাথে যোগ করে পেলাম নতুন ফল ৬।</p> <p>পরের সংখ্যাটা ৪, সেটাকে আমাদের এপর্যন্ত যোগফল ৬ এর সাথে যোগ করে পেলাম নতুন ফল ১০।</p> <p>পরের সংখ্যাটা ৫, সেটাকে আমাদের এপর্যন্ত যোগফল ১০ এর সাথে যোগ করে পেলাম নতুন ফল ১৫। </p></td> </tr> </tbody></table> <p>ব্যস, আমাদের যোগফল বের করার কাজটা শেষ, ১ থেকে ৫ এর যোগ ফল দাঁড়ালো ১৫।</p> <hr /> <p>উপরের হিসাবের ধাপগুলো দেখলে একটা জিনিষ হয়তো খেয়াল হবে, আমরা একই রকম কাজ (মানে বাঁ হাত দিয়ে টেবিল থেকে সংখ্যা তোলা, আর ডান হাতের সংখ্যাটার সাথে যোগ করার কাজটা) বার বার করছি, কেবল টেবিল থেকে তোলা সংখ্যাটা পালটে যাচ্ছে। আর আমরা এই পুনরাবৃত্তি করছি একটা সীমা পর্যন্ত, মানে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত যোগ ফল বের করার ব্যাপার থাকলে টেবিল থেকে ৫ তোলার পরেই থেমে যাচ্ছি। টেবিলের উপরে আরো অনেক সংখ্যা থাকতে পারে, কিন্তু আমরা খেয়াল করে ৫ পর্যন্ত তুলেই থামছি।</p> <p>এখন দেখা যাক, এই কাজটা বেকুব যন্ত্রগণককে কীভাবে বোঝানো যায় –</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> <p><small>ডান হাতে শুরুতে কিছু নাই | </small></p> <p><b>#(প্রথম ধাপ)#</b> ডানহাতে = ০ </p> <p><small>একেবারে শুরুতে বাম হাতও খালি</small></p> <p><b>#(দ্বিতীয় ধাপ)#</b> বামহাত = ০</p> <p><small>আমরা যেটা করবো, তা হলো বাম হাতে একটা একটা সংখ্যা তুলবো, শর্ত ৫ পর্যন্ত তুলার পরে থামবো। প্রতিবারে বাম হাতে আগে যা তুলেছিলাম, তার পরের সংখ্যাটি উঠাবো।</small></p> <p><b>#(তৃতীয় ধাপ)#</b> বামহাত (নতুন মান) = বাম হাতের আগের মান + ১</p> <p><small>এইবার ডানহাতে যা ছিলো, তার সাথে বাম হাতেরটা যোগ করে ডান হাতেই রাখবো |</small></p> <p><b>#(চতুর্থ ধাপ)#</b> ডান হাত (নতুন মান) = ডান হাতের পুরানো মান + বাম হাতে যা তুলেছি।</p> <p><small>এখন কাজ কি শেষ হয়েছে? মানে বাম হাতে ৫ তুলে ফেলেছি কি? যদি ফেলে থাকি, তাহলে কাজ শেষ, নইলে আবার উপরের ধাপে ফিরে যেতে হবে।</small></p> <p><b>#(পঞ্চম ধাপ)#</b> বাম হাতে যদি ৫ এর চেয়ে ছোট সংখ্যা থাকে, তাহলে কাজ শেষ হয়নি, সুতরাং তৃতীয় ধাপে ফেরত যাই। নইলে কাজ শেষ, পরের ধাপে যাই।</p> <p><span style="font-weight: bold;">#(ষষ্ঠ ধাপ)#</span> ডান হাতে যা আছে, সেটাই যোগফল, চটপট বলে ফেলি সেটা স্যারকে।</p> </td> </tr> </tbody></table> <p>তাহলে ৫ পর্যন্ত যোগ করাটা বোঝা গেলো। ১০০ পর্যন্ত কীভাবে যোগ হবে? একই পদ্ধতি, তাই না? কেবল শর্তের লাইনটিতে ৫ তুলে ফেলেছি কি না তার বদলে আমরা দেখবো ১০০ তুলেছি কি না। সেই একটা সংখ্যা পালটে দিলেই উপরের পদ্ধতিতে ১০০ পর্যন্তও যোগ করা যাবে।</p> <p>কম্পিউটারের সুবিধা হলো, এই বাম হাত ডান হাতের ব্যাপারটা আর শর্তগুলো একবার বুঝিয়ে দিলে কাজটা সে ৫ পর্যন্ত না, ৫ কোটি পর্যন্তও করতে দিলে অনায়াসে করতে থাকবে। বাচ্চাদের মতো বিস্কুট চকলেটের লোভ দেখিয়ে অংক করতে বসানো লাগবে না। </p> <hr /> <p>এই বুদ্ধিটা একটা সি ল্যাঙ্গুয়েজের প্রোগ্রাম আকারে লিখলে কেমন দাঁড়াবে দেখা যাক,</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> rightHand = 0 <small>(ডান হাত শুরুতে খালি)</small> <p>leftHand = 0 <small>(শুরুতে বাম হাতও খালি)</small></p> <p>do {<br /> leftHand = leftHand + 1 <small>(বাম হাতে আগের সংখ্যাটা যা ছিলো, তার পরেরটা নিলাম। প্রথম বারে কিছুই ছিলোনা, তার সাথে ১ যোগ করে পেলাম বাম হাতে ১)</small></p> <p> rightHand = leftHand + rightHand <small>(ডানহাতে আগে যা ছিলো, তার সাথে বামহাতেরটা যোগ করি, তারপর যোগফলটা ডান হাতেই জমা রাখি।)</small></p> <p>} while (leftHand <5)></td> </tr> </tbody></table> <p>do–while দিয়ে লেখা অংশটি একটি লুপ বা চক্রকোড। সেটি চলবে ততক্ষণ, যখন while এর পরের শর্তটি সত্য থাকবে। যতক্ষণ ঐ শর্তটি সত্য থাকবে, প্রোগ্রামটি লুপের শেষ মাথায় পৌছে আবার প্রথম অংশে লাফ দিয়ে যাবে।</p> <p>বাম হাতে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত সংখ্যা তুলে ফেলার পর শেষ বারে শর্তটি ভঙ্গ হবে, (কারণ বাম হাতে ৫), তখন এই লুপ আর চলবে না, লুপ শেষ হয়ে পরের অংশের কাজ শুরু হবে।</p> <p>ব্যস, এটাই হলো কম্পিউটারে সংখ্যা যোগের একটা প্রোগ্রাম। </p> <p>------</p> <p>(ব্যাখ্যা ছাড়া সি কোডটি হবে নিচের মতো)</p> <table align="center" border="1"> <tbody><tr bgcolor="#dedede"> <td> <p>rightHand = 0;<br />leftHand = 0;</p> <p>do {<br /> leftHand = leftHand + 1;<br /> rightHand = rightHand + leftHand;<br />} while (leftHand<5);></td> </tr> </tbody></table> <br /><div class="rating-intro"><span class="rating-intro-text"><br /></span></div>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com4tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-8894660273722731862009-02-01T15:51:00.002-06:002009-02-01T15:54:33.918-06:00কনশিতার দিনরাত্রি<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://www.sachalayatan.com/files/images/101_0200.JPG"><img style="margin: 0px auto 10px; display: block; text-align: center; cursor: pointer; width: 528px; height: 396px;" src="http://www.sachalayatan.com/files/images/101_0200.JPG" alt="" border="0" /></a><br /><p><br /></p><p>০১</p> <p>কম্পিউটার নিরাপত্তার উপরে সবচেয়ে বড় কনফারেন্সের একটি হলো এসিএম সিসিএস - প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠের আলেক্সান্দ্রিয়াতে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এই কনফারেন্সের উপলক্ষেই ২০০৬ এর শরতে ওখানে আমাদের যাওয়া। কনফারেন্স শেষে একটা দিন হাতে রেখেছিলাম, আমি আর আমার স্ত্রী জারিয়া ওয়াশিংটন শহরটা ঘুরে দেখার জন্য।</p> <p>পুরো শহরের সুরম্য সব অট্টালিকা আর মনুমেন্ট দেখে দেখে শরতের সেই রোদেলা বিকেলে চলে আসি মার্কিন রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসস্থান হোয়াইট হাউজের পাশে। দুনিয়ার একমাত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ভবনের চারপাশে অবশ্য দৃশ্যমান নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নেই। বাংলাদেশে যেমন রাষ্ট্রপতির বাসভবনের ধারে কাছে কাক পক্ষীকেও ঘেঁষতে দেয়না পুলিশের ব্যুহ, তেমনটা দেখা যাচ্ছেনা। চারিদিকে পর্যটকদের ভিড়, হোয়াইট হাউজের একেবারে দেয়াল ঘেঁষে এমনকি দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ক্যামেরা গলিয়ে চটাপট ছবি তুলছে সবাই।</p> <p>জারিয়া আর আমি হোয়াইট হাউজের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি, ভাবি এই নিতান্তই সাধারন চেহারার ভবনে দুনিয়া পালটে দেয়া ভালো মন্দ কতো সব ঘটনার সূচনা হয়, কতো কিছুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হোয়াইট হাউজের বিশাল পরিধি ঘুরে আসতে আসতে এসে যাই পেছনের দিকে, পেছনেই রয়েছে এক চিলতে জমিতে করা ছোট্ট একটা পার্ক। অন্য সব ট্যুরিস্টের সাথে আমরাও ছবি তুলতে থাকি, শক্তিমান রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রাণকেন্দ্রের স্মৃতি ধরে রাখতে।</p> <p>এমনি সময় আমার চোখ পড়ে পেছনের সেই পার্কটির দিকে। হোয়াইট হাউজের সীমানা প্রাচীর, তার পাশে একফালি রাস্তার ঠিক পরেই, ফুট পচিশেক দূরত্বে লাফায়েত স্কয়ার নামের পার্কের সীমানা। সেই সীমানার শুরুতেই এক বেঞ্চ আর তার পাশে রঙ্গীলা এক ছাউনি তৈরী করে বসে থাকতে দেখি প্রৌঢ়া এক রমণীকে। যুক্তরাষ্ট্রের বহু শহরে ঘোরার অভিজ্ঞতা থাকায় গৃহহীন মানুষের দেখা পেয়েছি বিস্তর, কিন্তু বিস্মিত হই খোদ হোয়াইট হাউজের পাশেই গৃহহীন ভিক্ষুকের বসতি দেখে। “দেশের সবার কাছে গল্প করা যাবে”, তা ভেবে পটাপট ছবি তুলে নেই ক্লান্ত চোখে চেয়ে থাকা এই রমণীর। তার পর ভুলে যাই তাঁর কথা ... সুরম্য ভবন আর সমাধির চাকচিক্যে হারিয়ে যায় সেই রমণীর কাতর দৃষ্টির স্মৃতি।</p> <p>০২</p> <p>আরবানাতে ফিরে যাই, কাজে কর্মে ব্যস্ত হয়ে মনে থাকেনা ছবিটির কথা। মাসখানেক পরে এক অলস দুপুরে ল্যাপটপের পর্দায় ছবিটা আবার ভেসে আসে, অকস্মাৎ কৌতুহল জেগে উঠে মনে। গুগলে খুঁজতে থাকি, কে এই রমণী, কীভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের পাশেই রয়েছে তাঁর বসতি। পরিচয়টা যখন জানতে পারি, অবাক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে থাকি কিছুক্ষণ।</p> <p>ক্লান্ত নয়নের এই প্রৌঢ়া রমণীর নাম কনসেপশন পিচ্চিওত্তো। বন্ধুদের কাছে কনশিতা বা কনি নামে পরিচিত কনসেপশনের জন্ম স্পেনে, ১৯৪৫ সালে। পরাক্রমশালী মার্কিন রাষ্ট্রপতির যেখানে বাস, সেই হোয়াইট হাউজের পেছনের লাফায়েত স্কয়ার পার্কে বসে কনশিতা নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন, পথকে নিজের ঘর বানিয়ে দিনরাত ২৪ ঘন্টা শক্ত কাঠের বেঞ্চে বসে শান্তির সপক্ষে, আণবিক বোমার বিরুদ্ধে তাঁর এই অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রাখছেন।</p> <p>সেই ১৯৮১ সাল থেকে, ২৭ বছর ধরে সারাক্ষণ!</p> <p>০৩</p> <p>কনশিতা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন স্পেন দূতাবাসের কর্মী হিসাবে। বিয়ে হয় এক ইতালীয় ব্যবসায়ীর সাথে, ওলগা নামে একটি মেয়ের জন্মও হয়। কিন্তু এক সময় ভেঙে যায় কনশিতার সংসার, মেয়েকে হারান, চলে যায় চাকুরিটিও। মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর, স্বামীর উপরে সন্দেহ রূপ নেয় অনেকটা অবসেশনে, আস্তে আস্তে মনে হতে থাকে সবাই তাঁর বিপক্ষে কাজ করছে, পুলিশ ও সন্দেহজনক সাদা পোশাকের মানুষেরা অনুসরণ করছে তাঁকে প্রতিনিয়ত। এভাবে আমেরিকা থেকে স্পেনে কিছু দিন কাটিয়ে কনশিতা ফিরে আসেন ফের আমেরিকাতে। এক সময় উপস্থিত হন হোয়াইট হাউজের দ্বারপ্রান্তে। নিজের ব্যক্তিগত প্রতিবাদ পালটে গেছে তখন দুনিয়ার সব দুঃখ, সব অনাচারের বিরূদ্ধে প্রতিবাদে, পরাশক্তির বিরূদ্ধে বিক্ষোভে। সদ্য পরিচিত টমাস নামের আরেক প্রতিবাদীর সাথে মিলে কনশিতা শুরু করে দেন আণবিক বোমার বিরুদ্ধে তাঁর প্রগাঢ় প্রতিবাদ।</p> <p>সেটা ছিলো প্রেসিডেন্ট রেগানের শাসনামলের শুরু – সেই ১৯৮১ সাল।</p> <p>রেগান চলে যান, আসেন বড় বুশ, তার পরে ক্লিনটন, এখন ছোট বুশ। রাজা আসে, রাজা যায়, কিন্তু কনশিতার প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। হোয়াইট হাউজের নাকের গোড়াতে এরকম উপস্থিতি সহ্য হয়নি পুলিশের ... তাঁর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয় পার্করক্ষী পুলিশ, ভেঙে দেয়া হয় কনশিতার ঝুপড়িটি। শুরুর দিকে হোয়াইট হাউজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে প্রেসিডেন্টের বাড়ির মাত্র কয়েক ফুট দূরেই তৈরী হয়েছিলো ঝুপড়িটি, কিন্তু পুলিশ সেখানে থাকতে দেয়নি। আদালতের আশ্রয় নেন কনশিতা, ১৯৮৩ সালে আদালত রায় দেয়, হোয়াইট হাউজের দেয়ালের পাশের ফুটপাতে থাকা যাবে না। কনশিতা, আর তার সঙ্গী টমাস আশ্রয় নেন ফুট ত্রিশেক দূরে, রাস্তার অপর পারের পার্কে।</p> <p>সেই পার্কের বেঞ্চ আর ঝুপড়িতে থাকতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, ওখান থেকে সরলেই পুলিশ সব ভেঙে দেয় বার বার। তাই সেই সময় থেকে আজ অবধি কনশিতা শীত গ্রীষ্ম সব সময়েই ২৪ ঘণ্টা ওখানে বসে থাকেন। শুয়ে ঘুমাবার উপায়ও নেই ... ভবঘুরে বিরোধী আইনের অধীনে পার্কে কারো মাটিতে শুয়ে ঘুমানো মানা। তাই পুলিশের ঝামেলা এড়াতে বেঞ্চে বসে ঘুমানো অভ্যাস হয়ে গেছে কনশিতার। ওয়াশিংটনের বিভিন্ন রেস্তোঁরা থেকে পুরানো বাসি খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রতিদিন, তাই খেয়ে বা অর্ধাহারে কেটে যায় কনশিতার দিনরাত্রি।</p> <p>ঝুপড়ির চারিপাশে ছবি আর ছবি ... আণবিক বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হিরোশিমার কিশোরীর ছবি, দুনিয়ার সর্বত্র আণবিক বোমার সন্ত্রাসের বিরোধী প্রতিবাদী সব ছবি। এরই মাঝে ক্লান্ত চোখে বসে থাকেন কনশিতা।</p> <p>২৭ বছরের প্রতিবাদ, এখনো শেষ হয়নি, প্রশান্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখার এ প্রতিবাদ, আজো অমলিন।</p> <p><span style="font-weight: bold;">পাদটীকা</span></p><p>[*] <a href="http://www.prop1.org/conchita/index.html" target="_blank" class="bb-url">কনশিতার কাহিনী নিয়ে ওয়েবসাইট</a></p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-71872629610776424652009-01-30T00:37:00.000-06:002009-01-30T00:38:05.190-06:00\ ভাষার ধর্ম | ধর্মের ভাষা /৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কয়েকজনে গিয়েছিলেন খেতে কলকাতার এক রেস্তোঁরাতে। পেটপুরে ভাত খাবার পরে বেয়ারাকে “পানি” দিতে বলাতে রেস্তোঁরার গোঁড়া মালিক সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে জেরা করেছিলেন, “আপনারা কি <strong>মোহামেডান</strong>”?<br /><br />জবাবে রসিক এক খেলোয়াড় বলেছিলেন, “কী যে বলেন দাদা, মোহামেডান হতে যাবো কেনো!! আমরা সবাই <strong>ভিক্টোরিয়ান</strong>”*।<br /><br />এক বাঙালি জাতি, সেই চর্যাপদের আমল থেকে বাংলা বলতে বলতে কখন যেনো নিজের অজান্তেই ভাষাকে ভাগ করে ফেলেছে ধর্মীয় লেবাসে।<br /><br />--<br /><br />জল নাকি পানি, এই বিতর্ক এই ভেদাভেদ এখন প্রকট হয়ে গেছে পূর্ব আর পশ্চিমবঙ্গে, আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে মুসলিম প্রধান এবং হিন্দু প্রধান এলাকাতে। এক সময় অর্কুট নামের ব্যর্থ সোশাল নেটওয়ার্কের এক কমিউনিটির সদস্য ছিলাম, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিলো (কাগজে কলমে), দুই বাংলার মিলন সাগর। কিন্তু ঘটিদের বাগে পেলে বাঙালেরা যেমন সাইজ করে, সেই কমিউনিটিতে হাতে গোনা দুই বাংলাদেশীর একজন হওয়াতে আমি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, উল্টোটাও সত্য। বাংলাদেশ = মুসলিম = সন্ত্রাসী এই ফরমুলাতে ধাতানী দেয়ার এক পর্যায়ে মস্তান দাদা যে থিওরি দিলেন, তা এরকম – বাংলাদেশের বাংলা আর বিশুদ্ধ বাংলা নেই, তা এখন উর্দুঘেষা বাংলাতে পরিণত হয়ে গেছে, যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই “জল” এর বদলে “পানি” বলে, যা নাকি খাস উর্দু থেকে চাপানো হয়েছে।<br /><br />ঘটি পশ্চিমবঙ্গবাসীদের এই তত্ত্ব আগেও শুনেছি ... কেবল আমিই শুনেছি তা না, আমাদের বাঙাল গর্ব সুনীল গাঙ্গুলীকেও শুনতে হয়েছে বহুকাল। হাজার হলেও সুনীল ফরিদপুরের খাস বাঙাল, ৪৭ এর দেশ বিভাগের পরে যখন তাঁর স্থায়ী নিবাস কলকাতায়, তখন তাঁকেও “পানি” নিয়ে উপহাসের স্বীকার হতে হয়েছে। আত্মজীবনী “অর্ধেক জীবন” বইটাতে সুনীল “পানি” শব্দের এই “ধর্মীয় লেবাস” সম্পর্কে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন, কেননা পানি শব্দটি আদতে সংস্কৃত মূল “পান্য” থেকে এসেছে বাংলাতে, তার পাশাপাশি হিন্দুস্থানীতে (ও তার অধুনা সন্তান হিন্দি ও উর্দুতে)। এক মূল সংস্কৃত ভাষা থেকে আসা জল হয়ে গেলো “খাঁটি বাংলা”, আর “পানি” হয়ে পড়লো “মুসলমানী (বিকৃত) বাংলা”, পশ্চিমবঙ্গে (এবং হয়তো পূর্ববঙ্গেও) প্রচলিত এই ধর্ম-শব্দ-ধারনার কারণ কী, সুনীল প্রশ্ন করেছেন সেখানে।<br /><br />---<br />সুনীলের প্রশ্নটা আমাকেও ভাবায়, বাংলাতে আরবী শব্দ যে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ নির্বিশেষে সবাই ব্যবহার করেন না, তা নয়। “কাগজ”, “কলম”, এরকম আরবী শব্দ ব্যবহারে তো কারোরই কোনো আপত্তি নেই। নেই আপত্তি “আইন” শব্দটিতে, কিন্তু সংস্কৃত পানি শব্দটি কীভাবে হয়ে গেলো “মুসলমান”, আর জল হয়ে গেলো “হিন্দু”?<br /><br />পারিবারিক সম্পর্কের শব্দগুলো চুড়ান্ত রকমের ধর্ম-ভিত্তিক, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সম্ভবত কেউই “আম্মা” বা “আব্বা” বলেননা, যেমন মুসলমানেরা বলেননা “পিসি”। পশ্চিমবঙ্গে সম্ভবত “ভাইয়া” শব্দটি সর্বত্র মুসলমান শব্দ বলেই বিবেচিত হয়, (গল্পে নাটকে মুসলমান চরিত্রগুলোর মুখেই আসে দেখি)। অথচ আরেকটু পশ্চিমে গেলেই হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সবাই ভাইয়া বলে চলে। ভাই শব্দটি কোথা থেকে এসেছে, অ-ভাষাবিদ আমার পক্ষে জোরসে বলা অত সহজ নয়, কিন্তু প্রায় নিশ্চিত যে সংস্কৃত “ভ্রাতঃ” শব্দ থেকেই এটা এসেছে, ইন্দো-ইয়ুরোপীয় সংযোগের সুবাদে যার ইংরেজি রূপ “ব্রাদার”। তাহলে ভাইয়া কেনো মুসলমান আর দাদা হলো হিন্দু?<br /><br />বাংলার এই ধর্মীয় শব্দভেদ তাহলে এলো কীভাবে? বাংলার পশ্চিমের এলাকাগুলো সব সময়ে যে মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিলো, তাও নয়, বরং বাংলার চাইতে ভারতের সেই সব এলাকায় মোগল পাঠান শাসকদের শাসন চলেছে অনেক বেশি। খোদ বাংলাদেশ তথা পূর্ববঙ্গেও সর্বত্র মুসলিম শাসন ছড়িয়ে যায় নি, তার পরেও কেনো পূর্ববঙ্গের ভাষায় তথাকথিত “মুসলিম” বাংলার আধিক্য, যেখানে পশ্চিমবঙ্গে তথাকথিত “শুদ্ধ” শব্দের ব্যাপকতা বেশি?<br /><br />--<br />কলকাতার সেই হোটেল মালিক জল আর পানিতে ধর্ম চিনতে চেষ্টা করেছিলেন। দাদা আর ভাই, জল আর পানি, -- কেমন করে যেন বাংলা শব্দগুলো চাপা পড়েছে ধর্মের লেবাসে, তাই গোসল আর স্নানে, নিমন্ত্রণ আর দাওয়াতে আমরা চিনে নেবার চেষ্টা করি মানুষের ধর্মীয় পরিচয়, এক লহমায় ফেলে দেই স্টেরিওটাইপে। সেই স্টেরিওটাইপ আমাদের মন মানসে নিয়ে আসে মরিচ, কিংবা স্থানভেদে লংকার ঝাল, কিংবা লবন অথবা নুনের মতো স্বাদ।<br /><br />-----------------------------<br /><br />[পাদটীকা ১] ভাষার উপরে উপরের লেখাটিতে বিস্তর “সম্ভবত” ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ অনেকটাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কুপমন্ডুক হিসাবে আমার দৃষ্টিসীমা একটু সীমাবদ্ধ, কাজেই অনেক শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণাটিও সেরকম। দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন।<br /><br />[পাদটীকা ২] সেই সময়ে ঢাকার দুই বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব ছিলো মোহামেডান আর ভিক্টোরিয়া<br /><br />[পাদটীকা ৩] বাংলা উইকিতে এই সংক্রান্ত ঝামেলা বাঁধার আগেই আমরা ভাবছি, ব্রিটিশ-আর-আমেরিকান বানানের/শব্দের মতো রীতিটা হয়তো বেছে নিবো। অর্থাৎ কেউ একটা বানান/শব্দ বেছে নিয়ে নিবন্ধ শুরু করলে সেটা "ঠিক" করার চেষ্টা হবে না, আর এলাকা ভিত্তিক বিষয়বুঝে শব্দ/বানান ব্যবহার করা হবে। দেখা যাক, এই ব্যাপারে শেষমেশ কী ঠিক করা চলে।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-53885097264618469392008-11-19T20:43:00.000-06:002009-01-19T16:45:03.577-06:00নমস্য ইউজার - গুগল, ইয়াহু!, আর আন্তর্জালের দূরদর্শিতা<p>বিশ্বব্যাপী জনসাধারনের আয়ত্বে ইন্টারনেটের আগমন যখন ঘটে ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে, তখন থেকেই দিনে দিনে ওয়েবসাইট নির্মান সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠেছে। এর সাথে সাথে তৈরী হয়েছে নানা বিজনেস মডেল বা ব্যবসায়িক কৌশলের।</p> <p>সফটওয়ার কোম্পানিগুলো আগে ব্যবসা করতো সফটওয়ারকে পণ্যের মতো কেনা বেচা করে। কিন্তু ইন্টারনেট আসার সাথে সাথে নতুন কৌশল আসে - ওয়েবসাইটভিত্তিক সার্ভিস। ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েবমেইল, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাট - এসবের পাশাপাশি হালে শুরু হয়েছে ওয়ার্ড প্রসেসর, স্প্রেডশীট, প্রেজেন্টেশন - এই সবগুলোকেই ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হাতের নাগালে এনে দেয়া।</p> <p>প্রথম দিকে এরকম সেবাদাতা সাইটগুলো নগদ পয়সা ছাড়া সেবা দিতে নারাজ ছিলো। মনে আছে, এক সময়ে ইয়াহু মেইলে ফ্রি দিতো ৬ মেগাবাইট, আর পয়সা দিলে ২০ মেগাবাইট। এর বেশি অল্প গেলেই মেইল বাউন্স শুরু করতো। কোম্পানীগুলো প্রথমে ভেবেছিলো, "ফেলো কড়ি, মাখো তেল" - এই পদ্ধতি ওয়েবদুনিয়াতেও কাজ করবে।</p> <p>কিন্তু দেখা গেলো, প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিনা মূল্যে অনেক সার্ভিস দিতে শুরু করেছে। আম-জনতাও বোকা না - সার্ভিস পেতে হলে টাকা দিতে হবে, টাকা না দিলে মুখ বন্ধ করে সার্ভিস দাতা কোম্পানির হম্বি তম্বি স্বৈরাচারী আচরণ সব সইতে হবে - সে যুগ আর নেই। ইয়াহুর পয়সা নেয়া ইমেইলের প্রতিদ্বন্দ্বী সার্ভিস হিসাবে এলো গুগলের জিমেইল, বিনা মূল্যে বিপুল জায়গা দিলো। "দাও টাকা, নইলে ইমেইল মুছে দিলাম", "টাকা দাওনা তো সার্ভিস চাও কেনো" - এরকম মানসিকতার সব সাইট রাতারাতি ধরা খেলো।</p> <p>২০০০ সালের দিকের ডট কম বিপর্যয়ের পরে এখন সব কোম্পানিই সাবধানী হয়ে গেছে। ইউজারেরাই এখন নমস্য - তাদের খুশি রাখতে পারলেই যে আয় হবে কোনো না কোনো ভাবে, সেটা এখন সবাই বোঝে। তাই এখন খোদ মাইক্রোসফটও অফিস লাইভের মাধ্যমে তাদের অনেক সার্ভিস দিচ্ছে বিনা মূল্যেই।</p> <p>---</p> <p>এতো কথা মাথায় আসলো আসলে গত সপ্তাহের এক বক্তৃতা শুনে। ইন্টারনেটে অনেক কিছুরই পথিকৃত ইয়াহু!র একটা রিসার্চ সেন্টারও আছে, সেখানে ওয়েব প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলে। সেই ইয়াহু রিসার্চের প্রধান বিজ্ঞানী <a href="http://research.yahoo.com/bouncer_user/96" target="_blank" class="bb-url">প্রভাকর রাঘবন</a> গত সপ্তাহে ইয়াহুর ব্যবসায়িক কৌশলে ব্যবহার করা প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে। গুগলের মতো ইয়াহুর মূল আয়টি আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সার্চ করার সময়ে মূল ফলাফল বামে আসে, আর পাতার একেবারে ডানদিকে কিছু সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখা যায়। ১০০ জনে দুই এক জন হয়তো সেখানে ক্লিক করে। তখন বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানি ইয়াহুকে কিছু পয়সা দেয়। অল্প মনে হলেও কোটি কোটি সার্চ দিনে করা হয়, কাজেই মোট হিসাবে পরিমাণটা কম না। বিলিয়ন ডলারের কোঠায় দাঁড়ায় সেটা।</p> <p>বিজ্ঞাপনগুলো আবার নিলামের মতো, যে কোম্পানী বেশি টাকা দিবে বিজ্ঞাপনে, তাদের বিজ্ঞাপনকেই আগে দেখাবে।</p> <p>তো, একজন প্রশ্ন করলো ডঃ রাঘবনকে, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করাতে যদি পয়সা পাওয়া যায়, তাহলে ইয়াহু! বামদিকের সার্চ রেজাল্টের সাথে বিজ্ঞাপন মেশাচ্ছেনা কেনো? ওখানে সার্চের ফলাফল হিসাবে খোঁজ করা শব্দগুলোর সাথে সম্পর্কিত সাইটের লিংক না দেখিয়ে, যারা টাকা দিচ্ছে বিজ্ঞাপনে, তাদের লিংক দেখালেই তো চলে। ইউজারেরা তো মাগনা মাগনা সার্চ করছে, ওদের পাত্তা দেয়ার দরকার কী? এমনি এমনি ফ্রি রেজাল্ট পাচ্ছে, সেই রেজাল্ট কোম্পানির বিজ্ঞাপন না আসল রেজাল্ট, তা নিয়ে ইউজারেরা কথা বলার অধিকার রাখবে কেনো!! না পোষালে অন্য সাইটে যেতেই পারে। ইয়াহু নিজের যাতে লাভ, তা করলেই পারে।</p> <p>জবাবে ডঃ রাঘবন বললেন, এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রস্তাব আসেনি তা না। কিন্তু ব্যাপারটাকে এভাবে দেখা যাক - ইউজারদের জন্যই তো বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দেবে। সেই ইউজারেরা যদি সন্তুষ্ট না হয়, তাদের কাংক্ষিত সার্চ ফলাফলের বদলে যদি বিজ্ঞাপন পান, তাহলে ইয়াহু হয়তো আজকে কিছু বিজ্ঞাপনের পয়সা পাবে। কিন্তু এই অতৃপ্ত ও অসন্তুষ্ট ইউজার ইয়াহু দিয়ে আর পরে সার্চ করবে না। ফলে আখেরে ক্ষতিটা হবে ইয়াহুরই ... ইউজারেরা না আসলে বিজ্ঞাপন দাতারাও চলে যাবে।</p> <p>কাজেই ইয়াহুর (এবং গুগলেরও) নীতি হলো, ইউজারদের নমস্য বলে জ্ঞান করা, তাদের খুশি রাখা। ইউজারদের খুশি রাখলে বিজ্ঞাপন দাতারা সেই ইউজারদের টানেই আসতে থাকবে।</p> <p>তাই আজকের ওয়েব দুনিয়াতে ইউজাররাই হলো নমস্য - ওয়েবসাইটের প্রাণই হলো ইউজারেরা। বিনা মূল্যে সার্ভিস নিলেও তাদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্যেই ওয়েবসাইটগুলো করে চলে প্রাণপণ চেষ্টা, তা হয়তোবা অনেকটা নিজেদের স্বার্থেই।</p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-62369428632044986912008-10-16T16:35:00.000-06:002009-01-19T16:36:38.247-06:00বাকের ভাইয়ের একদিন ...<p>"কোথাও কেউ নেই" নাটকটি নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে অর্জন করেছিলো বাঁধভাঙা জনপ্রিয়তা, বাকের ভাইয়ের চরিত্রকে আসাদুজ্জামান নূর এতো চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, সেই অতুলনীয় অভিনয়ের সুবাদে ঘরে ঘরে তখন বাকের ভাইয়ের জয়গান। পাড়ার মাস্তান, কিন্তু ভালো মানুষ বাকের ভাইয়ের বিবেক রয়েছে, সে বিবেক টাকার কাছে বিকিয়ে যায়নি, কপালদোষে মাস্তান হলেও ঠিক কাজটি করতে বাকের ভাই পিছ পা হন না। বাস্তব জীবনে সেরকম মাস্তান দুর্লভ হলেও কল্পনা করতে বাঁধা নেই, তাই বাকের ভাইয়ের ফাঁসীর আদেশ হলে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল বের হয়, ভয়ে হুমায়ুন আহমেদ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যান ক'দিনের জন্য।</p> <p>নব্বইয়ের দশক শেষ হয়ে আসে, হুমায়ুনের লেখাও ম্লান হয়ে যায়, বাকের ভাইয়ের কথাও জনমানুষের মন থেকে মুছে যায়।</p> <p>নব্বইয়ের দশকের শেষভাগের এক রোদেলা বিকেলে আমার মাথায় হঠাৎ ভুত চেপে বসে, একটা বেমক্কা আকারের বড়সড় হেডফোন কিনতেই হবে। বুয়েটে সদ্য প্রথম বর্ষে পড়ি, তখন সেটার হিড়িক চলছে, কানঢাকা জাহাজের হেডফোন কানে লাগালে বাইরের সব শব্দ চাপা পড়ে যায়।</p> <p>পলাশীর মোড় থেকে রিকশা চেপে বন্ধু প্রদীপ্তের সাথে যাই বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম মার্কেটে তখনো বসুন্দরা সিটির ঝকমকে বাজার খুলতে বহুদিন বাকি। ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির বাজার বলতে ওটাই। বাজারে অবশ্য ঠকে যাওয়ার বিশাল সম্ভাবনা, বেকুব ক্রেতাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙতে বিক্রেতারা সদা তৎপর। খেয়াল করে জিনিষ না কিনলে দুই তিনগুণ দাম দিতে হবে নির্ঘাত। চোখ কান খোলা রেখে আমরা তাই হাতড়ে বেড়াচ্ছি হেডফোনের সম্ভার। সস্তা চীনা নকল হেডফোনের ভীড়ে খাঁটি জাহাজী মাল পাওয়া দুস্কর, দোকানদার নকল মাল গছাতে সদা সচেষ্ট, তাকে ঝাড়ির উপরে রেখে বিজ্ঞ চেহারা করে দুই বন্ধু সর্দারী করছি। হেডফোন দুই একটা পছন্দ হয়ে যায়, কিন্তু না পরে কিনলে ঠকে যাবো, সেই জন্য পরখ করতে থাকি।</p> <p>এমন সময়ে ঘটল অভাবনীয় ঘটনা, পছন্দ হওয়া হেডফোনটা মাথায় পরে দেখতে যাওয়া মাত্র ডান পাশটা খুলে এলো অনায়াসে। বেকুব বনে গেলাম, কারণ জিনিষটা আগে থেকেই আলগা ছিলো, টেরই পাইনি।</p> <p>দোকানী তো ঈদের চাঁদ পেয়ে গেল মুহূর্তেই, সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে রীতিমত ঘিরে ধরলো আমাদের। "মাল ড্যামেজ কইরা ফালাইসেন", "ক্ষতিপূরণ দেন", এহেন হুমকির বন্যা বয়ে গেলো। হেডফোনের দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, সুকৌশলে সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগানো ছিলো, সেই সুপার গ্লু দিয়ে এটা ঠিক করার প্রস্তাব শুনে দোকানী রীতিমত ডিপজলের মতো অট্টহাসি হাসলো।</p> <p>বাধ্য হয়ে বললাম, ঠিক আছে, কিনেই নেই, দাম কতো? এতক্ষণ যেসব হেডফোনের দাম চাইছিলো ২০০-৩০০ টাকা, ঝোপ বুঝে কোপ মারার সুযোগে দোকানী এখন চেয়ে বসলো ৮০০ টাকা!! আমার বন্ধুটিও সুবোধ বালক, অবস্থা দেখে ঘাবড়ে মুখ চুন, পকেটে আমাদের কারোরই ৪০০ টাকার বেশি নেই,বহুদিন ধরে পেপারে পড়ে আসা হেডলাইনগুলো ভেসে এলো, দোকানে আটকে রেখে গণপিটুনি দেয়াতে এই মার্কেট আর ঢাকা কলেজের সামনের মার্কেটগুলোর দুর্নাম দীর্ঘদিনের। দোকানীর মতিগতি দেখেও তাই মনে হলো, চ্যালাদের হাত নিশপিশ করছে যেনো আমাদের দুজনকে বাগে পেয়ে।</p> <p>বুকে একটু সাহস এনে প্রতিবাদ জানালাম, ভাঙা জিনিষ কেনো এই দামে কিনবো ... কিন্তু দোকানী নাছোড়বান্দা, জরিমানা করে ছাড়বেই। আমাদের প্রতিবাদ দেখে দোকানী তার চ্যালাকে আদেশ দিলো, "অই, নুরা ভাইরে ডাক তো"!!</p> <p>নূরা ভাই কে, জানিনা, কিন্তু বুঝতে বাকি রইলোনা, স্টেডিয়াম মার্কেটের বাঁধা মাস্তান "ভাই" তিনি, বেয়াড়া ক্রেতাদের শায়েস্তা করে "বানাইয়া দেয়া"র কাজটা তিনিই করে থাকেন। বুয়েটে আর আস্ত অবস্থায় ফেরত যাওয়া হবে কি না, চিন্তায় পড়ে গেলাম, দোয়া দরুদের স্টক হাতড়াতে থাকি।</p> <p>আধা মিনিটেই নুরা ভাই হাজির। টিপিকাল মাস্তান চেহারা, সিনেমার পাতা থেকে উঠে আসা, গলায় সোনালী চেইন, টি শার্ট জিন্স, আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি। গাঁজা খোর লাল চোখে রাগরাগ ভঙ্গীতে আমরা দুই গোবেচারার দিকে তাকালেন, তার পর দোকানীর দিকে চেয়ে খেঁকিয়ে উঠলেন, "কি হইসে"?</p> <p>দোকানী বিজয়ের হাসি হেসে বললো, আমরা দুইজনে মিলে হেডফোন ভেঙে ফেলেছি, কাজেই নুরা ভাই যাতে একটু সাইজ করে দেন। আর প্রমাণ হিসাবে ভাঙা হেডফোন তুলে ধরলো নুরা ভাইয়ের কাছে।</p> <p>আমাদের অবস্থা তখন কেরোসিন, আজ বোধহয় নুরা ভাইয়ের হাতে "বানানো" হতে হবে... এহেনো চরম মুহূর্তে নুরা ভাই হেডফোনটা হাতে তুলে নিলেন, একবার সুপারগ্লু দিয়ে আগে লাগানো-এখন ভাঙা টুকরাটা দেখলেন, তার পর দোকানী আর আমাদের দিকে চাইলেন।</p> <p>তার পর?</p> <p>অবাক করে দিয়ে আমাদের দিকে চেয়ে বললেন,"ভাই, আপনারা এখান থেকে চলে যান তো এখনই"!!</p> <p>আমাদের হতভম্ব চেহারা তো আর দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু দোকানী ততোধিক হতভম্ব নুরা ভাইয়ের কথা শুনে, মিন মিন করে বলতে যাচ্ছিলো হেডফোনের কাহিনী, কিন্তু নুরা ভাইয়ের প্রকান্ড চিৎকারে চুপ মেরে গেলো, ভাঙা হেডফোন নিয়ে গোবেচারা দুজনকে হেনস্তা করার জন্য নুরা ভাই কষে কয়েকটা গালি দিলেন দোকানীকে। তার পর আবারো আমাদের দিকে চেয়ে বললেন, "ভাই আপনারা চলে যান"!!</p> <p>মত পাল্টানোর আগেই আমরা আর অপেক্ষা করিনি, এক দৌড়ে পগাড় পার। হেডফোন আর সেদিন কেনা হয়নি, হেডফোন কেনার শখও চলে যায় চিরতরে।</p> <p>কিন্তু কী দেখে নুরা ভাই মাস্তানীর রোল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, আজো জানা হয়নি। আর মাস্তানদের মধ্যে যে দুই একজন বাকের ভাই থাকে, অন্ধকারের মধ্যে থেকেও ন্যায়নীতি, বিবেক চলে যায় না সবার -- সেই বিশ্বাস পাকা হয়েছিলো সেদিন।</p> <p>হয়তো মানুষ কখনোই ১০০% খারাপ হয় না। মিলগ্রাম যাই বলুন না কেনো , হয়তো মানুষ সব অবস্থাতেই কিছুটা মনুষ্যত্ব বজায় রাখে।</p> <p>পৃথিবীটা তাই আজো টিকে আছে ...</p> <p>(রচনাকাল অক্টোবর ২০০৮)</p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-8070983202575890122008-06-09T16:37:00.000-06:002009-01-19T16:40:01.495-06:00লাখের বাতি<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/e/ef/%ED%8C%8C%EB%9E%91_%EB%B0%9C%EA%B4%91_%EB%8B%A4%EC%9D%B4%EC%98%A4%EB%93%9C.JPG"><img style="margin: 0pt 0pt 10px 10px; float: right; cursor: pointer; width: 195px; height: 146px;" src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/e/ef/%ED%8C%8C%EB%9E%91_%EB%B0%9C%EA%B4%91_%EB%8B%A4%EC%9D%B4%EC%98%A4%EB%93%9C.JPG" alt="" border="0" /></a>এক লাখ টাকা মানে কত্তো টাকা? <p>আমার ছেলেবেলাতে বড়লোক বোঝাতে লক্ষপতিরই চল ছিলো। আশির দশকে এক লাখ টাকায় অনেক কিছু হয়, সরকারী চাকুরের ২০ মাসের বেতন, একটা গাড়ির দামের পুরোটা না হোক, ৮০-৯০%, শহরের এখানে সেখানে বেশ খানিকটা জমি, -- এক লাখ টাকায় সব এসে যেতো হাতের নাগালে। সিনেমার নায়িকার বাবা পাইপ-হাতে ড্রেসিং-গাউন-পরে সিঁড়ি-দিয়ে-নামা চৌধুরী সাহেবরা হতেন সব সময়ে লাখ পতি। লাখ টাকা তাই সেই শৈশবের আমার চোখে ছিলো এক অভাবনীয় সম্পদ।</p> <p>দিন যায়, টাকার দাম কমতে থাকে। নব্বইয়ের দশকে এসে লাখ টাকার দাম পড়ে যায়, সরকারী চাকুরের ছয় মাস-বছরখানেকের বেতনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু আশির দশকে বড়ো হওয়া আমার প্রজন্মের কাছে লাখ টাকার মোহ রয়ে যায় অপরিবর্তিত।</p> <p>নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে যখন কারিগর হওয়ার পাঠশালাতে নাম লেখাই, লাখ টাকার মীথ রয়ে গেছে সবার মাঝে। হলবাসী আমরা খেটে খাওয়া, ঢাকাবাসী বাসার ছেলেমেয়েদের মতো টাকার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত না থেকে টিউশনি বা অন্য উপায়ে চলতে হয়, পারলে উলটো বাড়িতে টাকা পাঠানোর ব্যাপার এসে যায়। এহেন সময়েও লাখ টাকার কথা হাতছানি দেয় আমাদের। </p> <p>হুমায়ুন আহমেদের লেখা উপন্যাস তখনো জনপ্রিয়, সেরকম এক গল্পে পড়েছিলাম আমরা, গ্রামাঞ্চলে লাখ টাকার মালিক হলে "লাখের বাতি" জ্বালাতে হয়। সেই বাতির শিখা দেখে সবাই বোঝে, এখানে রয়েছে এক লাখপতি।</p> <p>আড্ডায় আড্ডায় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে এই কথাটা এসে যায়। আমার এক বন্ধু বেশ গুরুত্বের সাথেই নেয় এটাকে ... জানপ্রাণ পণ করে ঠিক করে, লাখের বাতি জ্বেলেই ছাড়বে। টিউশনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পন্থায় লেগে থাকে এজন্য। ৫০, ৬০, ৭০ হাজারে পৌছে অবশ্য আর আগায় না। তখন ব্যাটা নিলো নতুন কৌশল ...এক সময় দেখি ওকে সবাই এড়িয়ে চলছে, দূর থেকে দেখলেই গায়েব হয়ে যেতে চায়। ব্যাপারটা কী? কাছে যেতেই পরিষ্কার হলো, ও এখন লাখ টাকা ব্যাংকে বানানোর জন্য ধার করে চলেছে... সেভাবে চলতে চলতে এক সময় লাখের গণ্ডি পেরিয়ে গেলো, আমাদের কাছ থেকে দেখা হাতের নাগালের প্রথম লাখপতি ... বিশাল ছিল দেয়ার চেষ্টা পুরোটা না হলেও কিছুটা সার্থক হলো।</p> <p>কিন্তু লাখের বাতি? তার কী হবে? পাঠশালার ছাত্রাবাসে কখনোই বিদ্যুৎ যায় না ... (গোপন সূত্রে শুনেছি, বঙ্গভবন আর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পরেই নাকি আমাদের পাঠশালার গুরুত্ব দিয়ে রেখেছে , হয়তোবা আমাদের পাঠশালায় পড়া বৈদ্যুতিক কারিগরেরাই), কাজেই হারিকেন বা অন্য বাতি তো নেইই। কী আর করা, খুঁজে পেতে বের করা হলো একটা LED, (রেডিও টিভিতে মিটমিটে যে লাল আলো দেখেন, সেই আলোর বাতি)। গোটা দুয়েক দেড় ব্যাটারি বের করে সেই LED লাগিয়ে দিলাম আমরা নব্য লাখপতির জানালায়। বারান্দায় রাতের আলো আঁধারে লাখের বাতি দেখতে সবাই এলো ...</p> <p>হাজার হলেও লাখপতিকে হাতের কাছে পাওয়া তখনো ছিলো অনেকটাই অচিন্ত্য!!</p> <p>----</p> <p>পাদটীকা</p> <p>দলে দলে ছাত্রদের গণকচালনবিদ্যা পড়িয়ে পড়িয়ে আমিও লাখের বাতি জ্বালি মাস খানেক পরে, কিন্তু আমার লাখপতি জীবনের মেয়াদ ছিলো সপ্তাহ খানেক। বাবার হার্টের অপারেশন, আর বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের খরচে এক লহমাতেই লাখপতি আমি নেমে আসি দশ-হাজারীদের দলে।</p> <p>আর এখন? লাখ টাকার আর মূল্য নেই। আমাদের সবাই এখন লাখপতি ... মাস দুমাসেই লাখটাকা বেতন পায় দেশে পরিচিত অনেকেই। তবু বন্ধুর জানালায় লাখের বাতি জ্বেলে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, সেই আনন্দ দেখিনা লাখপতিদের দুচোখে।</p> <p>হাতি মরলে আজ আর লাখ টাকা হয় না ... লাখ টাকার, লাখপতিদের দিন শেষ।</p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-8471264854121921312008-03-22T16:40:00.000-06:002009-01-19T16:41:22.259-06:00স্টেরিওটাইপের কথকতা<p><span style="font-weight: bold;">স্টেরিওটাইপ</span> শব্দটা মূলত ঋণাত্মক অর্থেই ব্যবহৃত হয় ... কাউকে তার কোনো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ঢালাও ভাবে কিছু একটা ভাবাই এর অর্থ। কমেডি ঘরাণার মূল কৌশলগুলোর মধ্যে এটি একটা ... ভাঁড় গোছের চরিত্রকে দিয়ে ভাড়ামি করাতে হলে তাকে স্টেরিওটাইপড করে ফেলা যায়, আর যে গোষ্ঠীর মধ্যে ফেলা, তাদের দুর্নাম যেকারণে, তা দেখিয়ে দর্শকদের (যারা আবার ঐ গোত্রে পড়েনা) বিস্তর আমোদ দেয়া চলে।</p> <p>বাংলা নাটকে এই রকম স্টেরিওটাইপের ছড়াছড়ি। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যেসব নাটক হতো, তার নাট্যকারেরা উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসতেন বলে মনে হয় (হয়তোবা আমিও এখানে স্টেরিওটাইপে ফেলছি তাদের)। সেজন্য অধিকাংশ নাটকেই কমিক রিলিফ চরিত্রটি হতো নোয়াখালী বা চট্টগ্রামের, অবোধ্য অমার্জিত শব্দ চয়নে যাদের বিমল আনন্দ। নাটকের ঘটক হবে গোলটুপী পরা, বাম গালে একটা বড় আঁচিল থাকবে, হাতে একটা ছাতা। আদিবাসী কাউকে দেখাতে হলে তার নাম হবে মলুয়া, কথা বলবে “বটেক”, “বাবু”, “হামি” এরকম ভাষাতে। গ্রামবাসী নায়ক নায়িকার মা কথা বলবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রংপুরের ভাষাতে, অথবা নিতান্তই “শুদ্ধ” ভাষাতে। মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রটি হবে হতদরিদ্র, এবং অধুনা-ক্ষমতাধর-পূর্বে রাজাকার মোড়লের হাতে নিগৃহীত। নাটক থেকে সিনেমাতেও আসবে এসব স্টেরিওটাইপ, নায়িকার বড়লোক বাবার নাম হবে অবধারিত ভাবে “চৌধুরী সাহেব”, বাড়ির ভেতরে পরবেন ড্রেসিং গাউন, ধুমপানের পাইপ হাতে সিঁড়ি বেয়ে নামবেন। নায়ক গরীব কিন্তু শিক্ষিত হলে নির্ঘাত হবে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। বাংলা নাট্যকারদের দোষ দেই কীভাবে, স্বয়ং শেক্সপিয়ারের নাটকে স্টেরিওটাইপের ছড়াছড়ি ... ইহুদি শাইলক হয় ভিলেন, চার্লস ডিকেন্সের অলিভার টুইস্টের ঘৃণ্য ভিলেন ফ্যাগিনকেও দেখানো হয়েছে ইহুদি। সেরকম হালের মারদাঙ্গা টাইপের হলিউডী ছবিতে ভিলেনটা হয় আরব মুসলমান।</p> <p>নাটক-সিনেমা থেকে বাস্তবতার মধ্যেও একই দশা। হিন্দু হলেই ধরে নেয়া হবে, ব্যাটা একটু পরেই সব কিছু পাচার করে দেবে ভারতে, অথবা আওয়ামী লীগের সমর্থক হবে। কারো মাথায় টুপি থাকলে, বা মুঠোখানেক দাড়ি থাকলে সন্দেহ হবে, জামাত-শিবির কি না। চারুকলা কিংবা স্থাপত্যের ছাত্রদের হতে হবে লম্বা এলোমেলো চুলের সিগারেট ফোঁকা চেহারা, আর বুয়েটের প্রকৌশলবিদ্যার কারিগরেরা হবে চশমাপরা নিরীহ চেহারার বিশিষ্ট আঁতেল। বুদ্ধিজীবীরা হবে ফতুয়া বা পাঞ্জাবী পরা, কাঁধে শাল। সাফারি সুট কিংবা মুজিব কোটে বেরিয়ে আসবে রাজনৈতিক পরিচয়।</p> <p>এহেন মানসিকতা অব্যাহত থাকবে দেশের বাইরে এলেও। কৃষ্ণাঙ্গ দেখলেই সন্দেহ হবে, ছিনতাই করবে নির্ঘাত এখনই। (আমার এক বাঙালি বন্ধু এই সমস্যাতে পড়ে প্রায়ই ... হুডতোলা জ্যাকেট পরে ক্যাম্পাসের রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যায় হেঁটে গেলে নাকি উলটো দিক থেকে আসা ছেলে মেয়েরা সবাই ভয় পেয়ে রাস্তা পেরিয়ে অন্য দিকে হাঁটে)। </p> <p>মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের স্টেরিওটাইপ কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিলো মুদী দোকানদার হিসাবে ... ইদানিং অবশ্য গাদায় গাদায় দক্ষিণ এশীয় প্রকৌশলীদের দেখে সেটা কমেছে। ভিলেনের স্টেরিওটাইপের ব্যাপারটা কালে কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালটে গেছে ... বর্ণবাদের আমলে ভিলেন হতো কৃষ্ণাঙ্গরা ... তাদের “পাশবিকতা” দেখানো হতো, আর শ্বেতাঙ্গ নায়ক অসহায় নায়িকাকে উদ্ধার করতো এই কৃষ্ণাঙ্গ ভিলেনের কবল থেকে। বিংশ শতকের শুরুতে ইতালীয়দের অভিবাসন বেড়ে যায়, আর দরিদ্র ইতালীয় অভিবাসীরা অনেক শ্বেতাঙ্গ মার্কিনীর কাজ আরো কম বেতনে করে হাতিয়ে নেয়। ফলে সে সময়কার গল্প নাটকে সিনেমাতে ভিলেনের স্টেরিওটাইপে এসে পড়ে ইতালীয়রা। ইহুদীবিদ্বেষ অব্যাহত থাকায় ধনী ভিলেন দেখানো হতো এই ধর্মাবলম্বী কাউকে। সত্তরের দশকের শেষ থেকে আশির দশক জুড়ে জাপানি ব্যবসায়ীরা নবলব্ধ বিত্তে কিনতে থাকে আমেরিকার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এ সময়ের এশীয়-বিরোধী স্টেরিওটাইপিংটাও লক্ষ্যনীয়। গল্প সিনেমাতে এশীয় পুরুষ হলেই হতো গ্যাংস্টার, ধুর্ত ব্যবসায়ী, কিংবা বেকুব গোছের বোকাসোকা দোকানদার – মূল নায়কের সাথে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বোল বলে হাসির পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই তার কাজ।</p> <p>অবশ্য স্টেরিওটাইপ নিয়ে মস্করাও কম করা হয় না টিভি/সিনেমাতে। জনপ্রিয় মার্কিন কার্টুন দ্য সিম্পসন্সের সবগুলো চরিত্রই ইচ্ছাকৃতভাবে চরম স্টেরিওটাইপড। ভারতীয় মুদী-দোকানী অপু, কুটকৌশলী ব্যবসায়ী মিস্টার বার্ন্স, হোমার সিম্পসন নিজেই – সবই বিভিন্ন স্টেরিওটাইপ, আর ইচ্ছা করেই তাদের বিভিন্ন আচরণ দেখিয়ে স্টেরিওটাইপিংকেই মস্করা করা হয়। একই ব্যাপার দেখি আরেক জনপ্রিয় কার্টুন “ফ্যামিলি গাই”-তে, সবাই সেখানে স্টেরিওটাইপড, সবার কাজই স্টেরিওটাইপ অনুসারে।</p> <p>স্টেরিওটাইপিং নিয়ে যতই আলোচনা করা হোক না কেনো, হয়তো এটা থেকে বেরুনো সম্ভব না আমাদের কারো পক্ষেই। অনেক চিন্তা করে যা মনে হয়, এটা মানুষের অবচেতনে প্রোথিত একটা ব্যাপার – সেই আদিম কালে মানুষ যখন প্রকৃতি আর অন্য প্রাণীদের সাথে সংগ্রামে ব্যস্ত, তখন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো এক মুহুর্তেই যে, সামনে যা এসেছে তা শত্রু না মিত্র। আর সেই ক্ষণিক-সিদ্ধান্ত নিতে হলে চেহারা দেখে আন্দাজ করাটাই একমাত্র কৌশল ... আচরণ-বিচার করার সময় কোথায়। </p> <p>পূর্বপুরুষদের সেই প্রবৃত্তি আজও হয়তো রয়েছে আমাদের মনের গহীনে, তাই দেখামাত্র কাউকে ফেলে দেই স্টেরিওটাইপে, লেবেল লাগিয়ে দেই ইচ্ছে মতো। হয়তো এই প্রবৃত্তির কবল থেকে মুক্তি নেই আমাদের, যতোই চেষ্টা কসরত করি না কেনো। </p> <p>হয়তোবা এ আমাদের মানবিক সীমাবদ্ধতা।</p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-83580834710139958782008-03-18T17:44:00.002-06:002008-03-18T17:46:27.388-06:00২০০১ কিংবা ২০০৮/ অডিসির স্বপ্নদ্রষ্টার প্রস্থান<p style="text-align: center;"><span style="font-style: italic;"><br /></span></p><p style="text-align: center;"><span style="font-style: italic;">"The truth, as always, will be far stranger."</span></p><p><br /><span style="font-style: italic;"></span></p><p><span style="font-style: italic;"><br /></span></p> <p><img src="http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/3/32/Arthur_C._Clarke_2005-09-09.png" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" align="left" width="200" /></p> <p>আর্থার সি ক্লার্কের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে সেই স্কুলে থাকার সময়ে। সেবা প্রকাশনীর কল্যাণে ঝরঝরে অনুবাদে "সন্ধানী" বইটা পড়েছিলাম, লাগামহীন কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম মুহুর্তেই। অনেক পরে আসল বইটা, আর্থার সি ক্লার্কের "<a href="http://en.wikipedia.org/wiki/2001:_A_Space_Odyssey" target="_blank" class="bb-url">২০০১ - এ স্পেস অডিসি</a>" পড়ি, দেখি স্ট্যানলি কুব্রিকের হাতে তৈরী সিনেমাটিও। কিন্তু সন্ধানী আমাকে হঠাৎ করে বানিয়ে দেয় সাইন্স ফিকশনের চরম ভক্ত। ক্লাস নাইনে থাকার সময়ে পাড়ার এক ভাইয়ের কাছে ২০১0 - অডিসি ২ পেয়ে যাই, গোগ্রাসে গিলি পরের গল্পকথা। লালদিঘির পাশের ব্রিটিশ কাউন্সিলে আমার বড়বোনের কার্ড দেখিয়ে সিরিজের বাকি বইগুলোও একে একে পড়া হয়ে যায়।</p> <p>আর্থার সি ক্লার্কের জন্ম ইংল্যান্ডের সমারসেটে, ১৯১৭ সালে। অভাবের তাড়নায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেননি শুরুতে, শিক্ষাবিভাগে অডিটরের চাকুরি নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রয়াল এয়ারফোর্সে রেডার বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেন। যুদ্ধ শেষে লন্ডনের খ্যাতনামা কিংস কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যা ও গণিতে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি পান।</p> <p>লেখালেখির শুরু করেন ১৯৪৬ থেকে। ১৯৪৮ সালে লিখেন <a href="http://en.wikipedia.org/wiki/The_Sentinel_%28short_story%29" target="_blank" class="bb-url">দি সেন্টিনেল</a> নামের গল্পটি, যা পরে রূপ নেয় ২০০১ - এ স্পেস অডিসি উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে।</p> <p>এই গল্পটিতেই ক্লার্কের লেখনীর মূল ধারাটির আভাস পাওয়া যায়। পৃথিবীর মানব সভ্যতার সাথে অনেক শক্তিমান ও সুপ্রাচীন অপার্থিব সভ্যতার মোলাকাত ও তার পরিণাম নিয়ে ক্লার্ক লিখেছেন অধিকাংশ উপন্যাস। ক্লার্কের সেই ভবিষ্যত অবশ্য অন্ধকার বা ভীতিকর না, বরং মানবিকতায়, আশাবাদে পরিপূর্ণ সেই অনাগত দিনগুলো।</p> <p>১৯৫৬ সাল থেকে ক্লার্ক শ্রীলংকাতে বসবাস শুরু করেন। স্কুবা ডাইভিং শখ ছিলো ... সমূদ্রের অমোঘ আহবানে তাই রয়ে যান আজীবন শ্রীলংকার কলম্বোতে। </p> <p>সাইন্স ফিকশন ছাড়াও ক্লার্কের কল্পনাশক্তির কাছে আমরা, মানে এই ডিজিটাল দুনিয়া প্রচন্ডভাবে ঋণী। বিশ্বাস না হতে পারে, কিন্তু এই ক্লার্কই প্রথম ১৯৪৫ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহারের ধারনা দেন। ব্রিটিশ ইন্টারপ্ল্যানেটারি সোসাইটির একটি জার্নালে, এবং পরে ওয়ারলেস ওয়ার্ল্ড নামের সাময়িকিতে ক্লার্ক দেখান, মাত্র তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়েই সারা বিশ্বের সর্বত্র টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা সম্ভব।</p> <p>ক্লার্কের ভবিষ্যত-দর্শন এখানেই থেমে থাকেনি। হালের জনপ্রিয় ধারণা, <a href="http://en.wikipedia.org/wiki/Space_elevator" target="_blank" class="bb-url">স্পেস এলিভেটর</a>, এটাও জনমানুষের কাছে এসেছে ক্লার্কের উপন্যাস ফাউন্টেইন্স অফ স্পেস-এ। যদিও ধারণাটি নিয়ে আগে কিছু বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী আলোচনা করেছেন, জনপ্রিয় সাহিত্যে এর প্রথম উপস্থাপনা ঘটে এই উপন্যাসে।</p> <p>কৈশোরে আমার কাছে মহাবিশ্বের দুয়ার খুলে দেয়া সেই আর্থার সি ক্লার্ক আজ মারা গেছেন, শ্রীলংকার কলম্বোতে, ৯১ বছর বয়সে। ক্লার্কের এই মহাপ্রয়াণে নিবেদন করছি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। </p> <p>শেষ করছি ক্লার্কের কিছু বাণী দিয়ে।</p> <ul><li>Perhaps it is better to be un-sane and happy, than sane and un-happy. But it is the best of all to be sane and happy. Whether our descendants can achieve that goal will be the greatest challenge of the future. Indeed, it may well decide whether we have any future. </li><li>The Information Age offers much to mankind, and I would like to think that we will rise to the challenges it presents. But it is vital to remember that information — in the sense of raw data — is not knowledge, that knowledge is not wisdom, and that wisdom is not foresight. But information is the first essential step to all of these. </li><li>The greatest tragedy in mankind's entire history may be the hijacking of morality by religion. </li><li>It is not easy to see how the more extreme forms of nationalism can long survive when men have seen the Earth in its true perspective as a single small globe against the stars. </li></ul><div class="content clearfix"><li><p>ক্লার্কের সূত্র</p> </li><li> Clarke's First Law: When a distinguished but elderly scientist states that something is possible, he is almost certainly right. When he states that something is impossible, he is very probably wrong. </li><li> Clarke's Second Law: The only way of discovering the limits of the possible is to venture a little way past them into the impossible. </li><li> Clarke's Third Law: Any sufficiently advanced technology is indistinguishable from magic <p>----</p> </li><li>SETI is probably the most important quest of our time, and it amazes me that governments and corporations are not supporting it sufficiently. <p>------</p> </li></div><ul><li> ছবি - উইকিমিডিয়া কমন্স</li><li>তথ্যসূত্র - <a href="http://en.wikipedia.org/wiki/Arthur_C._Clarke" target="_blank" class="bb-url">উইকিপিডিয়াতে জীবনী</a> ও <a href="http://news.bbc.co.uk/1/hi/uk/7304004.stm" target="_blank" class="bb-url">বিবিসি নিউজ</a>।</li></ul>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-88784344361918263562008-02-06T23:52:00.000-06:002008-02-06T23:53:03.358-06:00কম্পিউটার নিরাপত্তার পাঠ - Denial of Service attack বা সেবা-বিঘ্নকারী আক্রমণ<strong>ডেনাইয়াল অফ সার্ভিস অ্যাটাক</strong> বা <strong>সেবা-বিঘ্নকরণ আক্রমণ</strong> হলো কোনো কম্পিউটার সিস্টেমের কোনো রিসোর্স বা সেবার (service) প্রকৃত ব্যবহারকারীদের বাধা দেয়ার একটি কৌশল। কোনো কম্পিউটার সিস্টেম বা ইন্টারনেট ওয়েবসাইটে এই আক্রমণ চালানোর মাধ্যমে ঐ সিস্টেম বা সাইটের যথাযথ কার্যক্রমকে ধীর গতির, বা অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।<br /><br /><br />এই আক্রমণ চালানোর একটা বেশ জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো বাইরে থেকে ঐ সিস্টেম বা সাইটের সাথে যোগাযোগের জন্য অসংখ্য বার্তা পাঠাতে থাকা। একটি বার্তা বিশ্লেষণ করতে করতে আরো বেশ কয়টি বার্তা যদি এসে পড়ে, তখন ঐ সিস্টেমটি আক্রমণকারীর পাঠানো বার্তা বিশ্লেষণেই ব্যস্ত থাকে, এবং প্রকৃত ব্যবহারকারীরা ধীর গতির সম্মুখীন হন।<br /><br /><br />ডেনাইয়াল অফ সার্ভিস আক্রমণের প্রধান দুটি মাধ্যম হলো<br /><br />* টার্গেট করা কম্পিউটারকে রিসেট করে দেয়া, অথবা তার সীমিত রিসোর্সগুলোকে ব্যবহার করে অন্যদের ব্যবহারের অযোগ্য করে ফেলা<br /><br />* আক্রমণের লক্ষ্য যে সিস্টেম বা সাইট, তার সাথে প্রকৃত ব্যবহারকারীদের যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া।<br /><br /><br /><strong>উদাহরণ</strong><br /><br />ধরা যাক, করিমের একটি সাইট আছে যার নাম কখগ ডট কম। এই ওয়েবসাইটটি যে খানে হোস্ট করা হয়েছে, সেখানে দৈনিক ১ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ কেনা আছে। দিনে ১০ হাজার হিট হয় এই সাইটে, এবং ৪০০ মেগাবাইটের বেশি ব্যান্ড উইডথ দরকার হয় না। এখন এই ওয়েবসাইটকে আক্রমনকারী শত্রু শওকত একটি স্ক্রিপ্ট লিখে ঐ সাইটে অজস্র ভুয়া হিট করতে থাকলো, ফলে এক ঘণ্টারও কম সময়ে ২৫০০০ হিট করে ১ গিগাবাইট সীমা অতিক্রম করে ফেলা হলো। এখন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের কেউই আর ঐ সাইটে যেতে পারবেন না।<br /><br /><br />ধরা যাক, করিম এবার আক্রমণ ঠেকানোর জন্য অসীম ব্যান্ডউইডথের ব্যবস্থা করলেন, এবং শওকতের কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেস নিষিদ্ধ করে দিলেন। এবার শওকত ভিন্ন পদ্ধতিতে আগালেন ... সরাসরি আক্রমণ করার বদলে "স্মার্ফ অ্যাটাক" (Smurf attack) নামের আক্রমণ করলেন। এই আক্রমণের সময়ে শওকত সরাসরি করিমের কম্পিউটারে আক্রমণ না করে ইন্টারনেটে হাজার হাজার সাইটে <a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Ping" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">ping</span></a> মেসেজ পাঠালেন। (সংযোগ ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য ping ব্যবহৃত হয়। এই মেসেজ কোনো কম্পিউটারে পাঠালে ঐ কম্পিউটার মেসেজের জবাবে আরেকটি মেসেজ প্রেরক কম্পিউটারে পাঠায়)। তবে শওকত পিং পাঠানোর আগে কারসাজি করে মেসেজের প্রেরকের নাম পালটে দিলেন, অর্থাৎ প্রেরকের ঠিকানার অংশে নিজের কম্পিউটারের আইপির বদলে করিমের সাইটের আইপি দিয়ে দিলেন। ফলে হাজার হাজার সাইট যখন এই পিং বার্তার জবাব দিবে, তখন সেই জবাব গুলো চলে যাবে করিমের কম্পিউটারে। একই সময়ে আসা এই হাজার হাজার বার্তা গ্রহণ করতে করতে করিমের কম্পিউটার আসল গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করার সময় পাবে না। ফলে ওয়েবসাইটটিতে যারা ঢুকতে যাবেন, তাঁরা ব্যর্থ হবেন।<br /><br />(কম্পিউটারের জগতের বাইরেও এরকম আক্রমণ চালানো যায়। যেমন ধরাযাক খবিরের মোবাইল ফোনে গনেশ ফোন করতে পারে, তা শওকত চায় না। তাই ফোন ঠেকানোর জন্য অনবরত খবিরকে মিস কল দিতে থাকলো। লাইন ব্যস্ত থাকায় খবিরকে আর গনেশ ফোনে পেলো না। এটাও সেবা-বিঘ্নকরণ আক্রমণের একটা বাস্তব উদাহরণ।)<br /><br />(বিস্তারিত জানতে <a class="eng" href="http://en.wikipedia.org/wiki/Denial-of-service_attack" target="_blank"><span style="font-family:solaimanlipi;font-size:100%;">ইংরেজি উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ</span></a> দেখুন)। <p> </p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-22063995584860540312008-02-01T15:38:00.001-06:002008-02-01T15:38:19.744-06:00ছোট গল্পগভীর অরণ্য।<br /><br /><br /><br />দুটি মানুষ ও একটি বাঘ।<br /><br /><br /><br /><br />একটি মানুষ ও একটি বাঘ।<br /><br /><br /><br />একটি বাঘ।<br /><br /><br /><br />(লেখক আমি নই, বহু আগে কোথাও পড়েছিলাম। গল্প কতো ছোট হতে পারে, তার উদাহরণ।)Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-41592781838011751412008-02-01T15:36:00.002-06:002008-02-01T15:37:18.076-06:00মামু কাহিনী<strong>১</strong><br /><br /><strong>মামু</strong>, অর্থাৎ আইন-শৃংখলা রক্ষী পুলিশ বাহিনীর সম্পর্কে বাঙালি হওয়ার সুবাদে মনে মনে একটা ভীতি জন্মগত ভাবেই প্রোথিত হয়ে গেছে ... তাই নীল-জামা, কালো-জামা দেখলেই একটু আঁতকে উঠে ভিজা বিড়াল সেজে রই। এহেন এই মামুর সংস্পর্শে দেশে পড়তে হয়নি বেশি, একবার এরশাদ মিঞার লটবহরের গার্ডের তাড়া খাওয়া বাদে।<br /><br />তবে চোরের দশদিন, গৃহস্তের/মামুর শেষদিন। কপালে সেই মামুদের মুখোমুখি হওয়া লেখা ছিলো, বিদেশ বিভুঁইয়ে এসেই তা হতে হলো। তাও আবার পিস্তল হাতে রীতিমত ধাওয়া।<br /><br />নাহ, ভিজা বেড়ালের মতো শান্ত-শিষ্ট লেজ-বিশিষ্ট এখানেও আমি, তবে ধাওয়া খাওয়ার কাহিনীটাও বিচিত্র। সদ্য দেশ থেকে এসে তখন ক্যাম্পাসের মধ্যে এক দেশী আর এক পাকির সাথে বাসা ভাড়া নিয়েছি। গাড়ি-টাড়ি কিছুই নাই, চলা ফেরার জন্য কিনলাম এক সাইকেল। কিন্তু যেই বান্দার কাছ থেকে কেনা, আমাকে আবুল পেয়ে ধরিয়ে দিলো এক রদ্দি মার্কা মাউন্টেইন বাইক। মাস দুয়েকের মধ্যে চাকার টিউবের রফাদফা।<br /><br />দেশে থাকতেও আমার সাইকেল ছিলো, কিন্তু দেশের মতো মোড়ে মোড়ে তো আর সাইকেলের চাকা মেরামতের দোকান আর ৫টাকায় পাংচার মেরামত করা পিচ্চি নাই। নিজে মেরামত করতে গিয়ে ধরা খেয়ে তাই বিরক্ত হয়ে পেছনের চাকাটা খুলে নিয়ে মাইলখানেক হেঁটে সাইকেল বিক্রির দোকানে নিয়ে ঠিক করালাম।<br /><br />মার্চ মাস ... স্প্রিং ব্রেক এর বন্ধ ... ক্যাম্পাসের সব চ্যাংড়া পোলাপাইন ফুর্তি করতে বীচ টাইপের জায়গায় কেটে পড়েছে। বিদেশ থেকে আসা "খ্যাত" গ্র্যাড স্টুডেন্টরাই পড়ে আছে ... সেই তালিকায় নাম লেখানো আমি চাকা ঘাড়ে করে বাসায় ফিরে, অ্যাপার্টমেন্টের বাইরের রাস্তায় বসে সাইকেলে চাকা ফিট করা শুরু করলাম। খোলা যতটা সহজ, লাগানো ততোটা না, তাই প্লায়ার্স আর রেঞ্চ হাতে প্যাঁচ দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠার দশা।<br /><br />এমন করে চাকায় প্যাঁচ মারতে কখন আমি ব্যস্ত, সামনে কার যেনো ছায়া পড়লো। ফিরে তাকিয়ে তো হার্টফেলের দশা ... রীতিমতো পিস্তল হাতে RAB স্টাইলে পোজ মেরে এক কালো-পোষাকের বিশালদেহী মামু দাঁড়িয়ে। বাজখাই কণ্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে, "এই, তুমি কী করো?"<br /><br />এমনিতেই মামুকে ভয়, তায় আবার পিস্তল হাতে! কাপড় চোপড় নষ্ট হয়নি, কিন্তু খাবি খাওয়ার জোগাড়। আজ অবধি ইংরেজি বলি প্রথমে বাংলাতে বাক্য বানিয়ে তারপরে ট্রান্সলেট করে। পিস্তলের মুখে তো আর তা সহজে হয়না ... আমতা আমতা করতে করতে মুখ থেকে সাইকেল মেরামতি সংক্রান্ত জগাখিচুড়ি কিছু বেরুলো বলে টের পেলাম। আমার অশ্বেতাঙ্গ চেহারা, আর মার্চ মাসের অল্প শীতেও বঙ্গের বিশাল জ্যাকেট গায়ে জবুথবু হয়ে থাকা দেখে মামুর সন্দেহ আরো বাড়লো। ক্যাম্পাস আবার সাইকেল চোরের আড্ডা খানা। পরিচিত সবারই সাইকেল চুরি একবার হলেও গেছে। ব্যাটা তাই পিস্তল আরো বাগিয়ে ধরে প্রশ্ন করলো, "কই থাকো তুমি?"<br /><br />পাশের অ্যাপার্টমেন্টটা দেখিয়ে কাজ হলোনা ... আর গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো আমার দুই রুমমেটও ঐ সময় বাসার বাইরে ... আমার কাছে চাবিও নাই। ভাগ্য ভালো, দিন দুয়েক আগেই ঠিকানা সহ স্টেট আইডি বানিয়ে এনেছিলাম। গ্রীজমাখা হাতে তড়ি ঘড়ি করে মানিব্যাগ খুলে ওটাই বাড়িয়ে ধরলাম। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক দেখে মামু ব্যাটা একটু আশ্বস্ত হলো, আমি পাশের অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা।<br /><br />পিস্তলটা নেমে আসলো, আর দেখি, মামু ওয়াকি টকি বের করে বলে, "Cancel the alert, I don't need backup" !!!! মানে আমার জাব্বা জোব্বা অশ্বেতাঙ্গ চেহারা আর হাতে রেঞ্চ দেখে মামু আমাকে শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বা নিদেনপক্ষে সাইকেল-চোর পার্টির নেতা বলে মনে করেছিলো, আর গোটা কয়েক মামু-গাড়ি ডেকে ফেলেছিলো কাছে আসার আগে!<br /><br />যাওয়ার সময় মামু রীতিমত ঝাড়ি দিয়ে গেলো, spring break এর সময়ে বীচে মাস্তি না করে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আছি কেনো, এই ব্যাপারে। নাকে খত দিয়ে আমিও প্রায় মুচলেকা দিলাম, আর সাইকেল মেরামতির কাজে নামবোনা ... দরকার হলে ঘাড়ে করে নিয়ে যাবো দোকানে।<br /><br /><strong>২</strong><br /><br />পরের সপ্তাহেই আবারো মামু দর্শন হলো, তবে সে আরেক কাহিনী। এও ঐ সাইকেল নিয়েই। সাইকেল-চোর-চক্রকে ধরার জন্য মামু পিস্তল নিয়ে টহল দিচ্ছে এলাকাতে, আগের সপ্তাহে হাতে নাতে তার প্রমাণ পেয়ে আমি বিগলিত, তাই সাইকেলের ইউলকের বদলে কেবল লক (তারের) দিয়ে বাড়ির খুঁটিতে বাইরে বেঁধে রেখেছিলাম। দু'দিনের মাথায় সাইকেল গায়েব! এবার মামু ডাকার পালা আমার ... কোনোদিন আর সাইকেলের দেখা পাবো না যেনেও মনের কষ্টে মামুর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বিশাল এক রিপোর্ট লিখালাম। এক "মামী" এসে সরেজমিন তদন্তও করে গেলো, আর জানালো, ক্যাম্পাসে কোথাও সাইকেলটা দেখতে পেলেই যাতে মামু ডাকি। ওরা আবার RAB এর মতো তৎপর না ... বিষ্ণুমুর্তির মতো নিজে থেকে কিছু খুঁজে নাকি দেখাটা ওদের কাজ না।<br /><br /><strong>৩</strong><br /><br />একই সপ্তাহে হলো দুইবার মামু দর্শন, আর ঘটনার কেন্দ্রে থাকা সেই সাইকেলটার বিদায়। এর পরেও একবার মামু দর্শন হয়েছে, অবশ্য তা হাইওয়েতে টিকেট দিয়ে কমিশন পাওয়ার আনন্দে উদ্বেল ছোট শহরের মামুর সাথে। বেকুব চেহারা করে সদ্য আম্রিকা আগত ভাব দেখিয়ে ঐবার নিস্তার পেয়েছি। সাইকেল এখন কঠিন মোটা ইউলকে বেঁধে রাখি, আর রাডার ডিটেক্টর দিয়ে মামুর শনি দৃষ্টি খেয়াল করে রাস্তায় চলি। হাজার হোক, মামু বলে কথা ...Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-27202579631467534342008-02-01T15:36:00.001-06:002008-02-01T15:36:46.212-06:00লাইব্রেরি কথনমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে এখানকার মানুষের লাইব্রেরি প্রীতি দেখে বেশ মুগ্ধ হই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা যমজ শহর শ্যাম্পেইন ও আরবানাতে লাইব্রেরি অনেকগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এক কোটির উপরে বই আছে (বাংলা বইও আছে বেশ কিছু)। এসব বাদেও রয়েছে প্রতিটি শহরের নিজস্ব লাইব্রেরি, আর সেগুলোতে পাঠকের ভীড়ও যথেষ্ট।<br /><br />এদেশে আসার শুরু থেকেই লাইব্রেরিতে আমিও ঘাঁটি গেড়ে বসেছি। বুয়েটে পড়ার সময় লাইব্রেরি থেকে কাজের বই নিতাম খুব কম - বেশি নিতাম ডানদিকের ধুলো পড়া দেয়াল ঘেঁষে থাকা অ-পাঠ্যপুস্তক এলাকার বই। বুয়েটে ইদানিং আর পাঠ্যবই বাদে অন্য কিচ্ছু কেনা হয় না, কিন্তু ষাটের দশকে মার্কিন দাতব্য সংস্থা বই পাঠিয়েছিলো প্রচুর , দান করা সেই বইয়ের মধ্যে সাহিত্য, গল্প, কবিতা, এরকম অনেক কিছুই ছিলো।<br /><br />বুয়েটের ছাত্রদের আঁতেল বলে অপবাদ রয়েছে, "আউট বই" (সেকেলে ভাষায় ...) পড়ে সময় নষ্ট করার চাইতে বরং চোথাবাজি টাইপের বা সার্কিট সলিউশন ধরনের শম সিরিজের বইতেই আগ্রহ বেশি। তাই ধুলো জমতে থাকে ঐ শেলফে, বছর বছরে প্রচুর ধুলো। আমি ঐ দিকটায় যাতায়াত শুরু করি ৯৯ সাল থেকে, অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, অনেক বই সেই ষাটের দশক থেকে আজ অবধি কেউ ধরে দেখেনি।<br /><br />এর পর থেকে ঐ জায়গাটা আমার খুব প্রিয় হয়ে পড়ে। লাইব্রেরিতে যেতাম ঐখানে ঘুরাঘুরি করার জন্য, আর কোনো ইন্টারেস্টিং বই পাওয়ার জন্য। উচ্চমার্গীয় সাহিত্য অবশ্য আমার মিস্তিরি-মাথার উপর দিয়ে যায়, কিন্তু ওখানে আমার ইন্টারেস্ট সাইন্স ফিকশন, আর ইংরেজি ছোটগল্পের প্রচুর বই ছিলো। "ও হেনরি"র গল্প গুচ্ছ (মনে আছে, সেই "ডেলা অ্যান্ড জিম" এর কাহিনী?) ওখানে পেয়েছি, আরো পেয়েছি হালের জুরাসিক পার্কের লেখক মাইকেল ক্রিকটনের শুরুর দিকে লেখা বই "অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইন"। আর শার্লক হোমস? তার সমগ্র পেয়েছিলাম ... পুরাটা ঘেঁটে ফেলেছি।<br /><br />শেষের দিকে ঐ তাকের সব বই পড়া হয়ে গিয়েছিলো, অধিকাংশই পুরো ৩০ বা ৪০ বছরে আমিই একমাত্র ইস্যু করেছি ... এমন। বইগুলো নেয়ার সময় লাইব্রেরিয়ান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতো আমার দিকে, আজব চিড়িয়া দেখছে, এরকম চাহনীতে। আসে পাশের বিশাল আঁতেল বাহিনী আর বয়েলস্টেডের ইলেক্ট্রনিক্স বইয়ের মাঝে নাক গুঁজে থাকা ছাত্রদের মধ্যে গল্পের বই ইস্যু করতে দেখলে হয়তো চিড়িয়া মনে করাটাই স্বাভাবিক। হাজার হলেও বাঙালি তো, বাধ্য না হলে বই পড়ানো আমাদের কঠিন ... (মুজতবা আলীর লেখাটা হাঁড়ে হাঁড়ে সত্যি)।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-43610814405952381502008-02-01T15:34:00.000-06:002008-02-01T15:35:43.806-06:00গুগল কথন ৬ - প্রযুক্তির স্রোতে অবগাহন (সমাপ্ত)গুগলপ্লেক্সের প্রধান ক্যাফেতে প্রতিদিন দুপুরে বা বিকেলে যেতাম ... ওখানকার ৫ রকমের বিভিন্নদেশী খাবারের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। এই ক্যাফেটার নাম "চার্লি'স ক্যাফে" ... জানতে চেয়েছিলাম একদিন, চার্লিটা কে? জানলাম, চার্লি ছিলো গুগলের প্রথম বাবুর্চি। যখন গুগলের মোট কর্মী সংখ্যা দশ বিশ জন, তখন যোগ দেয়া চার্লি বেতনের বদলে গুগলের কিছু শেয়ার পেয়েছিলো। যখন স্টক মার্কেটে গুগল শেয়ার ছাড়লো বছর কয়েক আগে, ততদিনে সেই সব শেয়ারের দাম হয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার। সেই মিলিয়নিয়ার চার্লি আজ গুগল থেকে অবসর নিয়ে নিজের রেস্তোঁরা খুলতে পেরেছে, কিন্তু তার নাম রয়ে গেছে।<br /><br />গুগলে কাজের পালা শেষ হয় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। তিনটা চমৎকার মাস সেখানে কাটাবার পর বুঝতে চেষ্টা করলাম, কেনো গুগল এতো প্রচন্ড সফল হয়েছে দুনিয়ার সেরা সব প্রোগ্রামারদের আকর্ষণ করতে। শুধু তিনবেলা মজাদার খাবার নিশ্চয় এর কারণ না ... অথবা গুগলের মহামূল্যবান শেয়ার/স্টকও প্রধান কারণ হতে পারে না। সিলিকন ভ্যালির অনেক কোম্পানিরই স্টক/শেয়ারের দাম তর তর করে বাড়ে। তাহলে ব্যাপারটা কী?<br /><br />ভেবে চিন্তে যেটা মনে হলো, গুগলের প্রধান সাফল্যের পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আর কর্মীদের কাজ করার অশেষ স্বাধীনতা দেয়া। এখানে সবাই সপ্তাহে একটা পুরো দিন পায় নিজের ইচ্ছা মতো কোনো কিছু নিয়ে কাজ করার। সেটা গুগলের কাজে আসুক বা না আসুক, কোনো সমস্যা নেই। এমনকি অন্য কাজের ডেডলাইন থাকলেও সপ্তাহে ঐ এক দিন সবাই পাবেই। আরো দেখেছি, পারস্পরিক সম্মান দেয়া। দেশে থাকতে দেখতাম, কোম্পানির মালিক তো বটেই, অফিসের বড়কর্তা তাদের অধীনস্ত সবাইকে "তুমি" বলে সম্বোধন করছে, আর অন্য সবাই বড়কর্তাদের হুজুর-সালাম দিয়ে চলেছে। কিন্তু গুগলে যেদিন ক্যাফের সাধারণ কর্মীদের খাবার লাইনে আমার ঠিক সামনে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনকে অন্য সবার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, তখন বুঝলাম এখানে পদমর্যাদার জোর খাটানো নেই। অফিসে গ্রুপের মিটিং থেকে শুরু করে সর্বত্র এটা অনুভব করেছি ... তিন মাসের জন্য আসা শিক্ষানবিশ ইন্টার্ন বলে আমার মতামতকে কেউ অবজ্ঞা করেনি, বরং যুক্তিসঙ্গত মতামত, অভিমত - এসব সবাই যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।<br /><br /><br />কর্মীদের অজস্র সুবিধা দেয়া, তিনবেলা রাজভোগ খাওয়ানো, কনফারেন্স বাইকে আড্ডা - এসবের মাধ্যমে মানুষ অফিসে বসে থাকছে সারাদিন, তা সত্যি, কিন্তু আসল কাজের উদ্দীপনা আসছে কাজের পরিবেশ, আর নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দেয়ার সুযোগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে। আর সেই সাথে মজা করার অসংখ্য সুযোগ তো আছেই ... দুই দিন পর পরই অফিসের সবাই হই চই করে ঘুরে বেড়াতো বিভিন্ন স্থানে। আমার এই তিন মাসের মধ্যেই ৪টা অফিস পিকনিক হয়েছে ... আর অন্য সময় একেবারে স্কি-করার ট্রিপ থেকে শুরু করে আরো অনেক চমৎকার অফ-সাইট ট্রিপ হয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের কোম্পানি মিটিং এর কথা আগেই বলেছি ... সেটাও এক বিশাল পার্টি। আর গুগলে কাজ করে নানা দেশের নানা ধর্মের লোকজন ... সবার জন্যেই সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। চীনা আর কোরীয় খাবারের উপরে আলাদা আলাদা একটা করে ক্যাফে তো আছেই, আর সেই সাথে বিভিন্ন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন হয় মূল ক্যাফেতেও। আমি থাকার সময় ভারতের ৬০তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে চার্লি'স ক্যাফেতে বিশাল খাবার দাবারের আয়োজন হলো। আবার শুক্রবারে মুসলমান কর্মীদের জন্য বিশেষ হালাল খাবারের ব্যবস্থা দেখেছি। শুনেছি, রমজান মাসে ক্যাফে গুলোতে ইফতারের ব্যবস্থাও করা হয় মুসলমানদের জন্য।<br /><br />গুগলের কর্মী সংখ্যা আজ ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজারের উপরে। তবে একটু মন খারাপ হলো এটা ভেবে, শিশির, সবুর, আর অল্প দুই-একজন ছাড়া এখানে বাংলাদেশী কর্মী নেই বললেই চলে। অথচ বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই। যে কয়দিন কাজ করেছি, মনে হয়েছে, এখানে কাজ করার মতো যোগ্যতা বাংলাদেশের অনেক প্রতিভাবান প্রোগ্রামারের রয়েছে। আমি আশাবাদী ... ভবিষ্যতে, বছর কয়েক পরেই গুগলে বাংলাদেশের আরো অনেক প্রাণবন্ত মুখের আবির্ভাব ঘটবে। ভারতের বাঙ্গালোর, দিল্লী, আর হায়দরাবাদের মতো বাংলাদেশেও গুগলের গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হবে।<br /><br />---<br /><br />অনেক মজার, অনেক স্মৃতির শেষে গুগলে কাজের পালা শেষ হলো আমার আগস্টের ১৭ তারিখে। শেষের দুই তিন দিন আমাদের বিদায়ী অনুষ্ঠানে কেটে গেলো, আমার হোস্ট রিচার্ড আর ব্রায়ানের সাথে পুরো অফিসের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া হলো বিভিন্ন স্থানে। একেবারে শেষ দিনে গুগলপ্লেক্সকে বিদায় জানাতে বেশ খারাপ লাগছিলো। তবু জীবনের গান চলতেই থাকে, ঘুরতে থাকে প্রযুক্তির স্রোতে গুগলের কর্মীদের অবগাহন, এগিয়ে চলে পৃথিবী।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-87954484501704147852008-01-21T13:21:00.001-06:002008-01-21T13:22:01.886-06:00গুগল কথন ৫ - কর্মীরা যেখানে রাজাগুগলের কর্মীদের সাথে কাজ করতে করতে অল্প দিন পরেই যেটা লক্ষ্য করি, সবাই প্রচন্ড কাজ পাগল। দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করার জন্য গুগল পয়সা দেয়। কিন্তু গুগলের কর্মীরা অফিসে থাকে আরও অনেক বেশি সময়। কাজে আসার ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা সময় নেই, যে যার মতো সময়ে আসতে পারে। অফিসে প্রথম দিনেই আমার বসকে প্রশ্ন করেছিলাম, কয়টার সময় আসতে হবে। রিচার্ড (আমার বস) বললো, তোমার যখন ইচ্ছা তখনই আসতে পারো। রিচার্ড আসতো সকাল নয়টার সময়, আর যেতো বিকাল ছয়টায়। আমি অবশ্য নয়টায় আসতামনা প্রতিদিন, যেতাম সাড়ে নয়টা বা দশটায়, আর বেরুতাম অফিস থেকে সাড়ে ছয়টা বা সাতটার দিকে। আমাদের গ্রুপের অন্য সদস্য ব্রায়ান এগারোটার দিকে এসে থাকতো রাত নয়টা সাড়ে নয়টা পর্যন্ত।<br /><br />কাজে ডুবে থাকার এই সাধারণ প্রবণতাটার পেছনে কারণটা কি, বুঝতে শুরু করলাম কয়েক দিন পর থেকেই। সিলিকন ভ্যালিতে কাজ পাগল মানুষদের কষ্টের ফসল হিসাবে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, কিন্তু তাদের মধ্যেও গুগলের কর্মীদের অফিসে পড়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টাটা বেশি। আসলে এর পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ হলো অফিসের পরিবেশটাকে অসাধারণ করে রাখা।<br /><br />শুরুতেই বলা যায় অফিস ও তার আসেপাশের স্থাপনা। আমার অফিসটার পাশে ল্যান্ডস্কেপিং করে ফোয়ারা, জলপ্রপাত, আর মিনি সাইজের লেক বানানো। ফুলের বাগানে গুগলের লোগোতে ব্যবহৃত মৌলিক বর্ণের নানা ফুল সাজানো আছে বিচিত্র নকশায়। প্রথমবার গেলে পার্ক বলে ভ্রম হতে পারে।<br /><br /><br />অফিসের ভেতরে আবার খাবারের ছড়াছড়ি। আগেই বলেছিলাম একবার, অফিসের প্রতি ১৫০ ফুট পর পর একটা মাইক্রোকিচেন রয়েছে। এর মানে হলো, দুই তিনটা বিশাল ফ্রিজে ভর্তি রয়েছে খাবার থরে থরে - স্যান্ডউইচ, চকলেট, কম করে হলেও ১০-১৫ রকমের ফলের রস, ডাবের পানি, কোক/পেপসির ক্যান, স্পেশাল মিনারেল ওয়াটার, আর এনার্জি ড্রিংক। পাশের টেবিলে বাদাম, চিপস, ফল, বীফ জার্কি (মাংশের শুটকি), এরকম অনেক কিছু। আর কফি তো আছেই। সবই ফ্রি - যার যখন ইচ্ছা এসে খেয়ে যাচ্ছে, বা দু-হাত ভর্তি করে অফিসে নিয়ে যাচ্ছে ভুরি-ভোজনের জন্য।<br /><br /><br />এতো গেলো কেবল মাইক্রোকিচেনের কথা। প্রতিটা অফিস ভবনেই রয়েছে একটা করে ক্যাফে। পুরো গুগলপ্লেক্স এলাকাতে ভবন ১৬টা, তার মানে বুঝতেই পারছেন, ক্যাফের সংখ্যাও ১৬। আর ক্যাফেগুলো মোটেও গতানুগতিক নয়, একেকটা ক্যাফে একেকটা ধাঁচে সাজানো। যেমন আমার অফিসের ক্যাফের নাম "অফ দা গ্রিড", ওখানে একটু অন্য রকমের বিচিত্র প্রকারের খাবার দিতো। নিজের ইচ্ছে মতো সালাদ বানিয়ে নেয়া, সব্জ্বীর নানা রান্না, আর মাংশের কিছু আইটেম। প্রায় দিনেই অদ্ভুত সব খাবার আসতো, যেমন ক্যাঙ্গারুর বার্গার, হরিণের মাংসের কাবাব, এরকম। সপ্তাহে একদিন বারবিকিউ হতো বাইরে, ঐ যে লেক আর জলপ্রপাতের কথা বলেছি, তার পাশে চাদর বসিয়ে পিকনিকের মতো করে খাওয়া চলতো। আর সকালে প্রতিদিন থাকতো ডিমভাজি সহ নানা রকমের নাস্তা, বিকেল ৩টার সময় আবার বিকালের নাস্তা দিয়ে পেট পুজার ব্যবস্থা থাকতো।<br /><br />পাশের ভবনেই ফাইভ নামের ক্যাফে, প্রতিটা খাবারে ঠিক ৫টা করে উপাদান দিয়ে তৈরী। আরেকটা ক্যাফে ছিলো ইউরোপীয় খাবারের। আরেকটা (প্যাসিফিক ক্যাফে) হলো চীনা, জাপানি সুশি ও অন্যান্য খাবারের। বিল্ডিং ৪৪এর ক্যাফেটা ছিলো স্লাইস - ওখানে রয়েছে দুর্দান্ত ফলের রস আর স্মুদি (লাসসি টাইপের)।<br /><br />তবে সব কিচ্ছুকে ছাড়িয়ে যায় গুগলপ্লেক্সের কেন্দ্রস্থলের "চার্লিজ ক্যাফে"। গুগলের প্রথম শেফ ছিলো চার্লি, তবে বেতনের বদলে শুরুতে গুগলের শেয়ার পেতো বলে চার্লি এখন মিলিয়নিয়ার হয়ে রিটায়ার করেছে, তার নামেই এখন রয়ে গেছে ক্যাফেটা। বিশাল ফুটবল মাঠের সাইজের ঐ ক্যাফেতে ৫টা সাবক্যাফে ছিলো - নমস্তে হলো ভারতীয় খাবারের, পাশেরটা জাপানী খাবার আর ইতালীয় খাবারের ক্যাফে, তার সামনেরটা "ইস্ট মীটস ওয়েস্ট" অর্থাৎ ফিউশন ধাঁচের। এছাড়াও ছিলো মেক্সিকান খাবার আর গতানুগতিক মার্কিন/ইউরোপীয় খাবারের দুটো সাব ক্যাফে। এগুলোতে প্রতিদিন দুপুর আর সন্ধ্যাতে ভীড় হতো প্রচন্ড। পুরোটা অবশ্য প্রচন্ড সুশৃংখল, সবাই ট্রে নিয়ে লাইন বেঁধে খাবার নিয়ে টেবিলে, অথবা বাইরের মাঠে বসানো পিকনিক টেবিলে চলে যায়। প্রতিদিন কম করে হলেও হাজার চারেক কর্মী এখানে খেয়ে থাকে। ভারতীয় বা চীনারাতো মনে হয় বিকেল বেলাতে পুরো পরিবারের বাপ, মা, বাচ্চা কাচ্চা সহ গোটা দশেক লোক সাথে নিয়ে আসে। উল্লেখ্য, প্রত্যেকেই অতিথি নিয়ে আসতে পারে, কোনো বাঁধা নেই। আর খাওয়া যে ফ্রি, তা তো আগেই বলেছি।<br /><br />গুগলের এই খাওয়ার অঢেল ব্যবস্থার কারণে নতুন আসা গুগল কর্মীরা হাপুস হুপুস করে খেতে থাকে, নিজের চোখে দেখা। "গুগল ফিফটিন" বলে কথা চালু আছে, গুগলে ঢোকার প্রথম দুই সপ্তাহে নাকি কর্মীদের ওজন বাড়ে ১৫ পাউন্ড অন্তত।<br /><br />শুধু কি খাওয়াই মূল আকর্ষণ? মনে হয় না, কারণ গুগলের অন্যান্য ব্যবস্থাও চমৎকার। চুল কাটা দরকার? কোন সমস্যা নেই, গুগলের চুল কাটার মিনিবাস আছে একটা, সারা দিন অফিসে অফিসে ঘুরতে থাকে, জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে পেলেই নেমে গিয়ে চুল কেটে ফেলা যায়। গাড়ির অয়েল চেইঞ্জেরও ব্যবস্থা আছে। আর ঐ রাজভোগ খেয়ে ওজন বাড়লে ভুড়ি কমানোর জন্য রয়েছে জিম। বাচ্চাদের রাখার জন্য নার্সারি। ডাক্তার, ডেন্টিস্ট। আর কাজ করতে করতে অবসন্ন বোধ করলে ম্যাসেজ করার জন্য অটোম্যাটিক চেয়ার ম্যাসাজ, বা এক ঘন্টার টেবিল ম্যাসাজের ব্যবস্থাও রয়েছে। আর যাতায়াতের জন্যও অনেক ব্যবস্থা -- নিজের গাড়ি না থাকলে বা প্রতিদিন ড্রাইভ করতে ইচ্ছা না হলে গুগলের শাটল গিয়ে নিয়ে আসবে, এমনকি ৪০ মাইল দূরের সান ফ্রান্সিস্কো থেকেও অনেকে গুগলের বাসে করে আসে। আর গুগলের ইলেকট্রিক গাড়িও অনেক কর্মীকে দেয়া হয়, চালাবার জন্য।<br /><br />আর সব সময় কাজ করা? তা নয় মোটেও, বরং খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে বিস্তর। ক্যাফের পাশেই ভলিবল কোর্ট, আর টেনিস খেলা, সাঁতার কাটা, কৃত্রিম স্রোতে সার্ফিং এর ব্যবস্থা, এসব তো রয়েছেই। কিন্তু তার চেয়েও ইন্টারেস্টিং হলো ভিডিও গেইমের কালেকশান, বাংলাদেশে আমরা যেমন খেলতাম কয়েন অপারেটেড মেশিন, সেরকম মেশিন সাজানো আছে। আমার অফিসের এক কোনাতে একটা বড় স্ক্রিন পেয়ে তো একজন দেখি রীতিমত ভিডিও গেইম কর্নার বানিয়ে ফেলেছিলো, উইই, পিএসপি, আর অন্য সব মেশিন দিয়ে।<br /><br /><br />সিলিকন ভ্যালির অন্যত্র অবশ্য এতোটা সুযোগ সুবিধা নেই। আমার বন্ধু কেউ কেউ ইন্টেলে কাজ করেছে, ওদের ক্যাফেতে নাকি পানিটাও কিনে খেতে হতো। গুগলের কর্মীরা থাকে রাজার হালে। অবশ্য এর পেছনে গুগলের লাভটাও অনেক। কর্মীদের এভাবে রাজার হালে রেখে রেখে অফিসে ধরে রাখাটা খুব সহজ হয়, সকাল থেকে এসে সবাই রাত করে ফিরে, মাঝের সময়টাতে পাগলের মতো কাজ করে চলে। আর মনে ফুর্তি আনার মতো সব ব্যবস্থা আছে বলে সারাদিন চরম উৎসাহে, আগ্রহে তৈরী করে চলে অসাধারণ সব সফটওয়ার।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-77608668335297611372008-01-19T00:32:00.000-06:002008-01-19T00:35:03.525-06:00গুগল কথন - ৪ : ব্রিন আর পেইজের কথা<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://farm1.static.flickr.com/49/165933204_bb08fd93ed.jpg?v=0"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer; width: 320px;" src="http://farm1.static.flickr.com/49/165933204_bb08fd93ed.jpg?v=0" alt="" border="0" /></a>সের্গেই ব্রিন আর ল্যারি পেইজ গুগলের প্রতিষ্ঠাতা দুই টগবগে তরুণ। তাঁদের পরিচয় হয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি করার সময়, আর ঐ সময়েই দুজনে মিলে পেইজর্যাংক নামের একটি অ্যালগরিদম লিখেন। পেইজর্যাংকের মূল লক্ষ্য ছিলো ইন্টারনেটের ওয়েবপেইজগুলোর সম্পর্ক বের করা, কোনো পেইজের গুরুত্ব বের করে ঐ অনুযায়ী একটা ক্রম বের করা। ব্যাস, এই পেইজর্যাংক অ্যালগরিদমটিই সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে গুগলের সূচনা করে দেয়। আগের সার্চ ইঞ্জিনগুলো কোন কোন ওয়েবপেইজে অনুসন্ধিত শব্দগুলো আছে, তা বের করতে পারতো, কিন্তু ওয়েবপেইজগুলোর র্যাংকিং ভালো ভাবে করতে পারতোনা বলে সার্চের ফলাফল ভালো আসতোনা।<br /><br />সার্চ ইঞ্জিন হিসাবে গুগলের মান অনেক ভালো, এটা বোঝার পরে ব্রিন আর পেইজ গুগলকে একটা স্টার্ট-আপ কোম্পানি হিসাবে শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। সিলিকন ভ্যালির অন্য অনেক নামজাদা কোম্পানির মতোই গুগলের যাত্রা শুরু হয় একটা গ্যারেজে, কিছু কম্পিউটার সার্ভার নিয়ে। গুটি কয়েক প্রোগ্রামার নিয়ে শুরু করা সেই গুগল আজ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে মূল্যায়িত এক মহীরূহে পরিণত হয়েছে।<br /><br />কিন্তু, ব্রিন আর পেইজকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এখনও দুজনে মাটির মানুষ, ভাবভঙ্গীতে সেই পিএইচডি করতে থাকা গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ছাত্রের মতো। গুগলে ইন্টার্নশীপ পাওয়ার সময় ভেবেছিলাম, পুরা গুগলের সবার বস ব্রিন, পেইজ, এবং গুগলের সিইও এরিক স্মিড্টকে আদৌ চোখে দেখতে পাবো কি না। বাংলাদেশে অন্য কারো কথা বাদ থাক, বুয়েটের শিক্ষকতা করার সময়েও বুয়েটের ভিসির সাথে দেখা করতে এক দিন ঘন্টা পাঁচেক বসে থাকতে হয়েছিলো। কোম্পানিগুলোর কথা তো বাদই দিলাম ... কোনো কোম্পানিতে সদ্য যোগ দেয়া কেউ কি আশা করতে পারে, কোম্পানির মালিকের সাথে সরাসরি কথা বলা বা বেফাঁস প্রশ্ন করা যাবে?<br /><br />প্রথম দিনেই ধারণাটা পালটে গেলো, ব্রিন আর পেইজকে দেখে। প্রতি শুক্রবার গুগলে এক বিশাল পার্টি হয়। টিজিআইএফ, অর্থাৎ থ্যাংক গড ইটস ফ্রাইডে হলো এই পার্টির নাম। আসলে সোমবার থেকে কাজ শুরু হয়ে শুক্রবার আসতে আসতে মানুষের মেজাজ খিঁচড়ে যায়, কাজের চাপে মাথা গরম হয়ে থাকে। শুক্রবার আসলে আসন্ন দুই দিনের উইকেন্ড বা সপ্তাহান্তের ছুটির আনন্দে শুকরিয়া করে ... তাই থেকেই এই মিটিংটার নাম হয়েছে। যাহোক, এই মিটিং এর মোদ্দা কথা হলো, গুগলের বিশাল ক্যাফেটাতে হাজার কয়েক গুগল ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য কর্মী জড়ো হবে, বিশাল একটা খাওয়া দাওয়া চলবে, আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে ব্রিন আর পেইজ গল্প গুজব করবে।<br /><br />ওখানে হাজির তো অবাক। দেশে থাকতে দেখতাম, কোনো কোম্পানির বড়সাহেব, এমন কি সরকারী কোনো অফিসের জিএম সাহেবের বিশাল ভাব, আর আশে পাশে চামচার দল, অনেক সময় সিকিউরিটির লোকজনের হুমকি ধামকি। সে তুলনায় দুনিয়ার বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় ২৬ তম স্থানে থাকা ব্রিন ও পেইজকে (প্রত্যেকের সম্পত্তির পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার করে) দেখে বোঝারই উপায় নেই, ওরাই এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং অধিকাংশ শেয়ারের মালিক। মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতি শুক্রবার ওরা প্রথমে এই সপ্তাহে কি কি প্রডাক্ট গুগল ছাড়ছে, তার কথা বলে খানিক ক্ষণ। অনেক প্রডাক্ট, যেমন স্ট্রিট ভিউ, মার্কেটে আসার আগেই ভিতরের সবাইকে জানানো হয়। এর ফাঁকে ফাঁকে ব্রিন ও পেইজের ভাড়ামি চলতে থাকে, অনেকটা "ইত্যাদি" অনুষ্ঠানের মতো করে দুইজন নানা রকমের রসিকতা করতে থাকে। ব্রিনের জন্ম ও শৈশব কেটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের কড়া সমাজতন্ত্রী শাসনে, সেটা নিয়ে ওকে পেইজ প্রায়ই ঠাট্টা করে। ব্রিনও কপট গাম্ভীর্য দেখিয়ে হাঁসাতে পারে ভালোই।<br /><br />এর পরেই শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে গুগলের কর্মীরা সরাসরি, বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারে ব্রিন, পেইজ, এবং এরিককে। আর এই পুরো ব্যাপারটাই খুব [ইংলিশ]transparent[/ইংলিশ], যে কোনো ধরণের প্রশ্ন যে কেউ নির্ভয়ে বলতে পারে। এমন কি গুগলের কোনো একটা পদক্ষেপ খুব বাজে এবং নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক, এরকম প্রশ্ন করতেও কোনো বাঁধা নেই। আমি যে কয়দিন এই অনুষ্ঠানে গিয়েছি, দেখেছি গুগলের কর্মীরা প্রত্যেক দিনই এরকম প্রশ্ন করছেন। যেমন, গুগল ভিডিও বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কেনো নেয়া হলো, কেনো ইবে কে গুগল খেপিয়ে দিলো, এরকম। অনেক প্রশ্ন এমন, যেন ব্রিন ও পেইজকে রীতিমত জবাবদিহি করতে বলার মতো। ভাবতে পারেন, বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির মালিকদের এরকম প্রশ্ন করা হচ্ছে, আর প্রশ্ন করছে একেবারে নতুন কর্মীরা? গুগলের চমৎকার পরিবেশে আসলে এটাই খুব স্বাভাবিক।<br /><br />ব্রিন আর পেইজকে প্রশ্ন করার সুযোগ আমিও হাতছাড়া করিনি। অনলাইনে যে প্রশ্ন করার ব্যবস্থা আছে, তাতে শুক্রবার সকাল বেলা প্রশ্ন দিলে বিকাল নাগাদ ভোটাভুটিতে যে প্রশ্ন টিকে যায়, সেটাই করা হয়। বেশ কয়েক সপ্তাহ চেষ্টা করে আমার প্রশ্নটা একদিন প্রথম ১০টি প্রশ্নের মধ্যে আসলো। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, বাংলাদেশের দিকে গুগলের নজর কবে পড়বে, আর গুগল যেসব ভাষাকে প্রাধান্য দেয়, তাদের মধ্যে ২৫ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা কবে আসবে।<br /><br />প্রশ্নের জবাব সের্গেই ব্রিন খুব আগ্রহের সাথেই দিলো। বললো, গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারটা অনেকটা অর্থনীতি ভিত্তিক। বাংলাদেশে কয়েক কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী আছে, তাই অচিরেই ঐ দিকে গুগল চিন্তা করবে, মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য কাজ করবে। আরেকটা ব্যাপার হলো, বাংলা ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেমন, সেটা দেখতে হবে ... বাংলাদেশ থেকে যত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁদের কতজন বাংলায় গুগল সার্চ করেন, ইংরেজি গুগলের বদলে, তাও বিবেচ্য। এসব কিছু বিবেচনা করে অচিরেই গুগল বাংলার উপরে কাজ শুরু করবে।<br /><br />ব্রিন অবশ্য সিরিয়াস কমই থাকে, আগেই বলেছি। ব্যাগি প্যান্ট আর টি শার্ট পরা ব্রিনকে দেখলে মনে হয়, ইউনিভার্সিটির ল্যাব থেকে বেরিয়ে এসেছে এই মাত্র। পেইজকেও তাই। আর গুগলের প্রতিষ্ঠাতা হলেও চামচা বাহিনী নিয়ে ঘুরবে, বা তাঁদের ঘিরে বডিগার্ডের দল থাকবে, তা না। একদিন মজার ব্যাপার হলো, আমি সেদিন গিয়েছি বিল্ডিং ৪৩ এর নো-নেইম ক্যাফেতে। খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ মনে হলো, সামনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি ভাবতে ভাবতেই টের পেলাম, এটা সের্গেই ব্রিন। মনে হলো, ভলিবল কোর্টে অন্য কর্মীদের সাথে খেলে এসে এখন খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, অন্য সব সাধারণ গুগল কর্মীদের সাথে।<br /><br />সিলিকন ভ্যালির সবাই বেশ ইনফর্মাল, তবে গুগলের মতো এতোটা না। ব্রিন আর পেইজের মতো মাটির কাছে থাকা মানুষদের দেখলে বোঝা যায়, কেনো গুগলের অন্য কর্মীরা এতো উৎসাহের সাথে কাজ করে থাকে। আর এজন্যেই কাজ করার জায়গা হিসাবে ফর্বস ম্যাগাজিনের জরীপে সব কোম্পানিকে পেছনে ফেলে গুগল এখন ১ নাম্বারে।Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-37750752916240305262008-01-19T00:27:00.000-06:002008-01-19T00:32:00.086-06:00গুগল কথন - ৩ : গুগলপ্লেক্সের ভিতরে বাইরে<div style="text-align: center;"><img style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204);" src="http://media.somewhereinblog.net//images/thumbs/ragibhasanblog_1190552090_6-08-17-07_1550.jpg" /><br /></div>ইন্টার্নশীপের প্রথম দিনেই হাজির হলাম গুগলের সদর দপ্তরে। এতো বিখ্যাত কোম্পানি, কিন্তু নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নেই। প্রথম দিনে লবিতে আমার ইন্টার্নশীপের কাগজপত্র আর আইডি দেখানোর পরে ছবি সহ গুগল ব্যাজ দেয়া হলো। ব্যাস, এই ব্যাজ থাকলে গুগলের সর্বত্র অবাধে আসা যাওয়া করা সম্ভব।<br /><br />গুগলের প্রধান অফিসকে বলা হয় গুগলপ্লেক্স। প্রযু্ক্তির প্রাণকেন্দ্র সিলিকন ভ্যালির একেবারে কেন্দ্রস্থল মাউন্টেইন ভিউ শহরে এর অবস্থান। আসলে সান ফ্রান্সিস্কো হতে সান হোসে পর্য্ত প্রায় ৪০ মাইল লম্বা যেই উপদ্বীপ আকারের এলাকা, তার পুরোটাই আধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসার কেন্দ্র। মাউন্টেইন ভিউ এর পাশেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পালো আল্টো নামের শহরে। প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে এখানে অভাবনীয় সব গবেষণা হয়ে চলেছে শ খানেক বছর ধরেই, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের দিক থেকেও এটা দুনিয়ার প্রথম কাতারে। নামজাদা সব মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত ইদানিংকার অধিকাংশ সফটওয়ার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অনেকেই এখানকার ছাত্র ছিলেন। গুগলের সের্গেই ব্রিন আর ল্যারি পেইজ তো বটেই, ইয়াহু!র প্রতিষ্ঠাতা ফিলো এবং ইয়াং, সানের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাকনিলি, বিনোদ খোসলা - এরা সবাই স্ট্যানফোর্ডে পড়ার সময়ে বা পাস করেই নিজেদের কোম্পানিগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর সেই কারণেই পালো আল্টো বা মাউন্টেইন ভিউতে এই সব কোম্পানির সদর দপ্তর গড়ে উঠেছে।<br /><br />ফিরে আসি গুগলপ্লেক্সের কথায়। গুগলের শুরুটা হয়েছিলো ব্রিন ও পেইজের এক বন্ধুর গ্যারেজে, মাত্র কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে। মেনলো পার্কের ঐ গ্যারেজে পরে গুগল চলে আসে পালো আল্টো শহরে। কিন্তু গুগলের অভাবনীয় সাফল্যের কারণে জায়গার দরকার বাড়তে থাকে অচিরেই। তাই ২০০৩ সাল এক কালের নামকরা কোম্পানি সিলিকন গ্রাফিক্সের ১৬০০ অ্যাম্ফিথিয়েটার পার্কওয়েতে অবস্থিত বিশাল হেড কোয়ার্টারটি গুগল ভাড়া নেয়। এখানে রয়েছে চারটি ভবন - বিল্ডিং ৪০, ৪১, ৪২, এবং ৪৩। আগেই বলেছিলাম, এই চারটি ভবনের মাঝখানের চত্ত্বরের বিশাল ডাইনোসরটির কথা। এছাড়াও মাঝখানের চত্ত্বরে রয়েছে একটি ভলিবল কোর্ট। সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেউ না কেউ খেলে বেড়াচ্ছে ... দেখলে মনে হবে অফিস নয়, বরং একটা হোটেলের খেলার কোর্ট। অনেকের কাছে শুনেছি, বিকেলের দিকে সের্গেই ব্রিন বা পেইজও নাকি যোগ দেয় খেলাতে। আমার অফিসটা অবশ্য একটু অন্যপাশে থাকায় সেই দৃশ্য দেখিনি।<br /><br />এর পাশেই ক্যাফের চত্ত্বর। গুগলের সুবিখ্যাত খাওয়া দাওয়া নিয়ে পরে লিখবো। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সেরা সব রেস্তোঁরার খাওয়াকেই গুগলের ক্যাফেগুলো হার মানায়। মোট ক্যাফের সংখ্যা এখানে ১৫টি। একেক ক্যাফে একেক রকমের - প্রধান ক্যাফেটা গুগলপ্লেক্সের বিল্ডিং ৪০এর চার্লিজ ক্যাফে। ওখানে এক সাথে প্রায় কয়েক হাজার লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় প্রতিদিন।<br /><br />আমাদের ওরিয়েন্টেশন হয়েছিলো বিল্ডিং ৪৩ আর ৪২ এর বিশাল অডিটোরিয়ামে। প্রথম দিনের সব কাজ কর্ম শেষে পুরো গুগলপ্লেক্স ঘুরে দেখানো হলো। প্রতিটি তলাতেই একটু পর পর মাইক্রো কিচেন আছে, যাতে থরে থরে সাজানো আছে নানা রকম ফলের রস, চিপ্স, আইসক্রিম, ডাবের পানি, চকলেট, স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে কতো কি!! এই ব্যাপারে নাকি সের্গেই ব্রিনের একটা নীতি আছে, "কোনো মানুষকেই খাবার দাবারের থেকে দেড়শো ফুটের বেশি দূরে রাখা ঠিক না"। কাজ করতে করতে একটু খিদে পেলেই দূরে যাবার দরকার নেই, অফিস থেকে দুই পা হাঁটলেই একটা মাইক্রোকিচেন, আর সেখানে এরকম জিভে জল আনা সব খাবার।<br /><br />গুগলপ্লেক্সের চারটি ভবন ছাড়াও এই এলাকাতেই কেবল গুগলের অফিস রয়েছে মোট ১৬টি। এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত প্রায় ২ মাইল দূরত্ব। আমার অফিসটি পড়েছিলো পশ্চিম পাশে। অবশ্য এক অফিস থেকে আরেক অফিসে যাবার জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে। পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবনের সামনেই রয়েছে গুগলের মনোগ্রাম লাগানো বাই সাইকেল বা জি-বাইক। যে কেউ যে কোনো জি-বাইক নিয়ে অন্য অফিসের সামনে গিয়ে পার্ক করে রাখে, পরে আবার সেটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে। তালা মারার ব্যাপার নেই। এটা ছাড়াও রয়েছে ইলেকট্রিক স্কুটার, শাটল বাস, এবং দুই চাকার অদ্ভুত যান সেগওয়ে। কিন্তু সবকিছুকে হার মানায় মাকড়শার মতো আকৃতির কনফারেন্স বাইক। প্রথম যেদিন দেখলাম, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মাকড়শার অনেক গুলো পায়ের মতো এই বাইকের সাতটি বসার জায়গা বৃত্তাকারে বসানো, কেন্দ্রের একটি বিন্দুতে যুক্ত। বসার সময় কেন্দ্রের দিকে মুখ করে সবাই বসে। প্রতিটি সিটের নীচে প্যাডেল রয়েছে। সবাই প্যাডেল চালালে এক অদ্ভুত উপায়ে সেটা এক সাথে যুক্ত করে বাইকটিকে চালায়। আটজনের মধ্যে একজনের হাতে স্টিয়ারিং থাকে, সে এটা কোনদিকে যাবে তা ঠিক করে। আর এই বাইকের নাম কেনো কনফারেন্স বাইক হলো? আসলে গুগলের প্রকৌশলীরা কনফারেন্স রুমে মিটিং না করে অনেক সময় এই বাইকে মজা করে চালাতে চালাতে মিটিং করে থাকে, এমনকি ল্যাপটপে করে ইন্টারনেটে যোগাযোগ, সবই করা সম্ভব এটাতে।<br /><br /><br />গুগলপ্লেক্সে মোট কাজ করে হাজার ছয়েক মানুষ। এদের অজস্র গাড়ি পার্ক করার জন্য যে পার্কিং লট রয়েছে, গুগল সেটাকেও অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছে। গুগলপ্লেক্সের স্যাটেলাইট ছবিতেই দেখবেন, পুরো গুগলপ্লেক্সের উপরের ছাদ, এমন কি পার্কিং লটের অনেক অংশের ছাউনির উপরে সোলার প্যানেল বসানো। এই সোলার প্যানেলগুলো থেকে প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয় - দিনে গড়ে ২ মেগাওয়াটেরও বেশি। আর গুগলের নিজস্ব আরেকটা প্রজেক্ট হলো প্লাগ-ইন হাইব্রিডের গবেষণা, অর্থাৎ এমন গাড়ি বানানো, যা বাসার ইলেক্ট্রিক সকেটে প্লাগ ঢুকিয়ে চার্জ করে নেয়া যাবে।<br /><br />থাক, আজ এতটুকুই, পরের পর্বে গুগলের বিখ্যাত খাবার দাবারের গল্প করা যাবে ...Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-38083008199854798332007-11-18T03:44:00.000-06:002007-11-18T03:51:50.277-06:00গুগল কথন - ২ : ডাইনোসরের ছায়ায় স্পেসশীপ<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080622_6-100_0029.JPG"><img style="margin: 0pt 0pt 10px 10px; float: right; cursor: pointer; width: 320px;" src="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080622_6-100_0029.JPG" alt="" border="0" /></a>গুগলে কাজ শুরু করি ১৫ই মে। আগের পুরো সপ্তাহ গাড়ি চালিয়ে আমেরিকা মহাদেশের এপার থেকে ওপারে গিয়েছি, প্রায় ২৫০০ মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে। প্রথম দিনে ওরিয়েন্টেশন, নির্দেশ ছিলো সকাল নয়টার সময় গুগলের বিল্ডিং ৪৩-এর লবিতে হাজির থাকার।<br /><br />গুগলের ক্যাম্পাসে ঢুকতেই সামনে পড়লো প্রকান্ড এক ডাইনোসর। তাও আবার ডাইনোসরদের রাজা টিরানোসরাস রেক্স! বিশাল হা করে বিদঘুটে, ধারালো, তেকোণা দাঁতগুলো মেলে আছে, যেন এই ধরতে আসলো। গুগলের মূল ক্যাম্পাসের চারটি ভবন - বিল্ডিং ৪০, ৪১, ৪২, ও ৪৩ এর মাঝের মাঠে রাখা, ঠিক যেনো ঢুকে পড়া অনাহুত সবার পিলে চমকে দেয়ার জন্য স্থাপিত।<br /><br />এই ডাইনোসরটির নাম স্ট্যান। ৬৫ মিলিয়ন বছরের পুরনো এই ডাইনোসরটি পাওয়া গিয়েছিলো সাউথ ডাকোটা স্টেইটের এক পাহাড়ে। গুগলে অবশ্য আসল ডাইনোসরের হাড়গোড় নেই, বরং আসলটার ব্রোঞ্জে তৈরী প্রতিমূর্তি রাখা আছে। কেনো গুগলে ঢোকার মুখে এটা রাখা, ওরিয়েন্টেশনে করা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাইনি, তবে মনে হয় ঠাট্টার ছলে এটা রাখা। গুগলের এই অফিসগুলো আগে ছিলো সিলিকন ভ্যালিরই এক নামজাদা কোম্পানি, <a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080681_2-100_0022.JPG"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer; width: 320px;" src="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080681_2-100_0022.JPG" alt="" border="0" /></a>সিলিকন গ্রাফিক্সের। এক কালে চুটিয়ে ব্যবসা করা সিলিকন গ্রাফিক্স ডাইনোসরদের মতোই হঠাৎ বিলীন হয়ে যায়, ব্যবসায় লালবাতি জ্বেলে। জনশ্রুতি অনুসারে, রসিকতা করে সিলিকন গ্রাফিক্সের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই ডাইনোসর এখানে স্থাপিত। গুগলের ইঞ্জিনিয়ারদের রসবোধের আরো প্রমাণ পেলাম, ডাইনোসরের গলায় গুগলের আইডিকার্ড ঝুলতে দেখে।<br /><br />ডাইনোসর ডিঙিয়ে লবিতে গিয়ে এবছরে আসা ইন্টার্নদের সাথে পরিচয় হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কানাডা, ইউরোপ, এমন কি অস্ট্রেলিয়া থেকেও অনেকে এসেছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের কঠিন এক ফোন ইন্টারভিউ পেরুতে হয়েছে সবাইকে।<br /><br />ওরিয়েন্টেশনের প্রাথমিক কথাবার্তা শেষে আমাদের নেয়া হলো গুগল ভবনের এক ট্যুরে। মূল ভবন বিল্ডিং ৪৩এর লবির পাশের দরজা পেরুতেই আবারো চমকে গেলাম, প্রমাণ আকারের একটা স্পেস শীপ ঝুলছে ৪ তলা ভবনের ছাদ থেকে। গাইড হিসাবে যিনি দেখাচ্ছিলেন, তিনি জানালেন, এটা স্পেসশীপ ওয়ান - দুনিয়ার প্রথম বেসরকারী মহাকাশযানের পূর্ণ সংস্করণ। বার্ট রুটানের নকশায় প্রণীত এই স্পেসশীপটি বছর দুয়েক আগে মহাকাশের দোরগোড়ায় পৌছানোর সুবাদে এক্স প্রাইজ জিতে নিয়েছিলো। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ এক্স প্রাইজ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার হওয়াতে স্পেসশীপ ওয়ানের এই পূর্ণ আকারের সংস্করণটি এখানে রাখা।<br /><br />পাশেই প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেয়ালে দেখানো হচ্ছে, দুনিয়ার বিভিন্ন স্থান হতে আসা গুগল সার্চের একটু অংশ। দ্রুত স্ক্রোল করে যাচ্ছে, ইংরেজি ছাড়াও চীনা, জাপানি, আরবি এরকম সব ভাষাতে কে কী সার্চ করছে এই মুহুর্তে, তা লাইভ দেখানো হচ্ছে। অবশ্য সবটা না, খুব অল্প অংশ। তার পাশেই একটা স্ক্রীনে দেখানো হচ্ছে একটা গ্লোব। ঘুরতে থাকা গ্লোবটাতে বিভিন্ন মহাদেশ হতে নানা বর্নের আলোকরশ্মি বেরিয়ে এসেছে, একেক ভাষার জন্য একেক রঙ। আর রশ্মি গুলো নির্দেশ করছে কোথা থেকে সার্চ আসছে। স্বভাবতই দুনিয়ার যেখানে যেখানে দিন, সেখান থেকে অনেক আলো বেরুচ্ছে। বাংলাদেশের এলাকা থেকে অল্প কিছু আলো বেরুতে দেখলাম, ইংরেজি ভাষার সার্চ নির্দেশ করা। অবশ্য তখন বাংলাদেশে গভীর রাত। আফ্রিকার পুরোটাই ঘন অন্ধকার।<br /><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080696_3-100_0055.JPG"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer; width: 320px;" src="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080696_3-100_0055.JPG" alt="" border="0" /></a>গ্লোব আর প্রজেক্টরের এই দেয়ালের পাশেই রয়েছে <a target="_blank" href="http://picasaweb.google.com/chademeng">মেং এর অ্যালবাম</a>। মেং গুগলের একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। বড়বড় দাঁতে বিশাল এক হাসি দিয়ে বিখ্যাত লোকদের সাথে ছবি তোলাই তার শখ। গুগলে প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের নামজাদা সব লেখক, রাজনীতিবিদ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী - এরা আসেন। আর বিখ্যাত কেউ আসছে শুনলেই, ব্যস, মেং ছুটে যায় ক্যামেরা নিয়ে। ক্লিন্টন, কার্টার থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এদের ছবি তো আছেই, রয়েছে অন্য অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি। রয়েছে হিলারি ক্লিন্টন, থেকে শুরু করে মুহাম্মদ আলীর ছবি, নানা লেখক আর চিত্রতারকাদের ছবি, নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী আর শান্তিকর্মীদের ছবি।<br /><br />এতো সব ছবি যখন এক এক করে সবাই দেখে চলেছে, তখন আমি তাকিয়ে র<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080721_4-100_0061.JPG"><img style="margin: 0pt 0pt 10px 10px; float: right; cursor: pointer; width: 320px;" src="http://images.somewhereinblog.net/bba/images/ragibhasanblog_1189080721_4-100_0061.JPG" alt="" border="0" /></a>য়েছি বিপুল গর্ব নিয়ে মেং এর অ্যালবামের এক প্রান্তে, যেখানে মেং এর সাথে শোভা পেয়েছে আমাদের ডঃ ইউনুসের ছবি।<br /><br />(ছবিগুলোতে রয়েছে বিল্ডিং ৪৩ এর সামনের বাগানে স্ট্যান টি রেক্সের সাথে আমি ও আমার স্ত্রী জারিয়া। ভবনের ভেতরের ছবি তোলা মানা বলে স্পেসশীপ ওয়ানের ছবি তোলা হয়নি।)Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-5739272933326777536.post-8563797765603696752007-09-23T02:18:00.000-06:002007-09-23T02:20:48.492-06:00গুগল কথন - ১ : প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্রে বসবাস<p style="text-align: center;"> <img style="border: 1px solid rgb(204, 204, 204);" src="http://images.somewhereinblog.net/phpThumb/phpThumb.php?src=../bba/images/ragibhasanblog_1188983770_1-100_0005.JPG&w=400" /> </p> <p style="text-align: left; line-height: 1.8em;"> গুগলে তিন মাস টানা কাজ করে যখন ফিরছি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে, তখন মনে হলো, এই তিনটা মাস এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দ্রুত কেটে গেছে। আসলেই, গুগল এক আজব দুনিয়া।<br /><br />১৯৯৮ সালে গুগলের প্রতিষ্ঠা, স্ট্যানফোর্ডের দুই ছাত্র - সের্গেই ব্রিন আর ল্যারি পেইজের হাতে। এরা দুজনে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট গুলোকে কিভাবে র্যাংকিং, বা ক্রম নিরূপণ করা যায়, সেই গবেষণা করছিলেন। তা করতে গিয়ে তাঁরা বের করেন পেইজর্যাংক নামের একটি অ্যালগরিদম। আর সেই পেইজর্যাংকের চমৎকারিত্বেই গুগলের অনুসন্ধানের মান হয়ে উঠে এতোটা ভালো।<br /><br />সের্গেই আর ল্যারিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুই-তিন জনে শুরু হওয়া এই গুগল আজ হাজার দশেক প্রোগ্রামারের এক বিশাল প্রতিষ্ঠান। আর গুগলে সার্চ করাটা এতই নিত্যনৈমিত্ত্বিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অনেক অভিধানে "গুগল" নামের ক্রিয়াপদটিও যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ ইন্টারনেটে কারো সম্পর্কে তথ্য বের করা।<br /><br />ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য-উত্তর ভাগে, সানফ্রান্সিস্কো আর সান হোসে শহরের মাঝে, সেই সুবিখ্যাত সিলিকন ভ্যালির কেন্দ্রস্থলের মাউন্টেইন ভিউ শহরে গুগলের সদরদপ্তর। জায়গাটা চমৎকার, আবহাওয়াটা বাংলাদেশের হেমন্তকালের মতো থাকে সারা বছর জুড়েই। দিনের বেলাতে তাপমাত্রা ২০-২৫ সেলসিয়াস, আর রাতে ১৫-১৬ ডিগ্রির মতো। আর ভারি সুন্দর রৌদ্রকরোজ্জ্বল আকাশ। সানফ্রান্সিস্কোতে অবশ্য ঠান্ডা পড়ে এই গরম কালেও, প্রশান্ত মহাসাগরের শীতল স্রোতের কল্যাণে। কিন্তু উপকূল হতে ৪০ মাইল ভেতরের সিলিকন ভ্যালিতে আসতে আসতে ঠান্ডার প্রকোপ কমে আসে।<br /><br />আমি আর আমার স্ত্রী জারিয়া বাসা খুঁজে নিয়েছিলাম গুগলের প্রধান দপ্তরের মাইল দুয়েকের মধ্যেই। আমাদের ঐ বাসা হতে মাইল দেড়েক আসলেই হাইওয়ে ১০১ পড়ে, আর তার ওপারেই গুগল। হাইওয়ে ১০১ চলে গেছে সানফ্রান্সিস্কো হতে লস অ্যাঞ্জেলেস অবধি। তবে ভীড়টা হয় সানফ্রান্সিস্কো হতে সান হোসের মধ্যকার অংশে, অর্থাৎ সিলিকন ভ্যালির এলাকাটাতে। এখানেই লাগালাগি করে শহর গুলো গড়ে উঠেছে। সান হোসের পশ্চিমে পর্যায়ক্রমে সান্তা ক্লারা, সানিভেইল, মাউন্টেইন ভিউ, পালো আল্টো (স্ট্যানফোর্ডের ক্যাম্পাস), আর তার পরে আরো কিছু শহর পেরিয়ে সবার পরে হলো সানফ্রান্সিস্কো। এই এলাকার তাবৎ মানুষ তাই হাইওয়ে ১০১ দিয়েই চলাচল করে থাকে। প্রতি পাশে ৪টি করে মোট ৮লেইনের এই হাইওয়ে সারাক্ষণ জমজমাট। বলা হয়ে থাকে, হাইওয়ে ১০১এর ট্রাফিক জ্যাম দেখেই বোঝা যায়, সিলিকন ভ্যালির অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। আমি অবশ্য প্রচন্ড ভীড় দেখেছি, তাই বলতে পারি, এখন এখানকার কোম্পানিগুলোর রমরমা অবস্থা।<br /><br />তা অবশ্য গুগল, ইয়াহূ!, সান, আর মাইক্রোসফটের বিশাল অফিস গুলো দেখলেই বোঝা যায়। এদের মধ্যে গুগল সবচেয়ে নবীন। তার পরেও প্রায় ২ মাইল এলাকা জুড়ে এদের মোট ১৬টা অফিস ভবন রয়েছে। এর পরেও জায়গা হচ্ছেনা দেখে আশে পাশে আরো অনেক ভবন ভাড়া নেবার পাঁয়তারা চলছে।</p><p style="text-align: left; line-height: 1.8em;"><br />তথ্য প্রযুক্তির এই প্রাণকেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা সহজ না। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে পুরো আমেরিকার সব নামজাদা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এখানে ইন্টার্নশীপ, বা তিন মাসের শিক্ষানবিশী কাজের জন্য আবেদন করে থাকে। (গুগল অবশ্য এই তিন মাস ওদের স্থায়ী প্রকৌশলীদের হারেই বেতন দেয় :) )। গত কয়েক বছর গ্রীষ্মকালে কাজ করেছি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারকম্পিউটার সেন্টার এনসিএসএ-তে। তাই এবছরের শুরুতেই ঠিক করি, এবার আর এখানে না, বরং গবেষণা ও প্রোগ্রামিং এর হাতে কলমে কাজ হয়, এমন কোথাও ইন্টার্নশীপ করবো। অফার অবশ্য পেয়েছিলাম বেশ কয়েক জায়গা থেকে। কিন্তু মাইক্রোসফট, এইচপি, কিংবা ইয়াহুর থেকেও গুগলে কাজ করার ইচ্ছাটা অনেক বেশি ছিলো। কারণ, গুগলের সম্পর্কে এতো গল্প চালু, ওদের কাজের পরিবেশের এতো সুনাম, আর এতো প্রচন্ড ইন্টারেস্টিং সব প্রজেক্ট ওদের এখানে চলছে, তাই ভেবেচিন্তে গুগলের ইন্টার্নশীপটাই বেছে নিই।<br /></p><p style="text-align: left; line-height: 1.8em;"><br /> </p><p style="text-align: left; line-height: 1.8em;">গুগলে এসে এই তিন মাসে যা দেখেছি, তাতে বুঝেছি, সিদ্ধান্তটা ঠিকই নিয়েছিলাম। প্রথম দিনটি থেকেই শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত চমৎকৃত হয়েছি প্রতিদিনই, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের অসাধারণ প্রয়োগের বিভিন্ন নিদর্শন দেখে দেখে।<br /><br />(ছবি - গুগলে আমার অফিস ভবনের সামনে আমি, গুগলের মূল ভবন বিল্ডিং ৪০-র পাশে আমি ও জারিয়া, এবং গুগলের মূল চারটি ভবনের মাঝের বাগানে জারিয়া। ডাইনোসরের সাথের ছবি আগামী পর্বে আসছে)<br /><br />[চলবে] </p> <!-- delete - draft options start --> <!-- options end --> <p> <a href="http://images.somewhereinblog.net/phpThumb/phpThumb.php?src=../bba/images/ragibhasanblog_1188983905_2-101_0109.JPG&w=0" target="_blank"><br /></a></p>Ragib Hasanhttp://www.blogger.com/profile/12989917702720113557noreply@blogger.com0