Wednesday, February 21, 2007

আমি যখন ভূত

সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ছেলে তড়িৎকৌশলের ছাত্র সুবর্ণ যেদিন বুয়েটের রশীদ হলে আত্মহত্যা করলেন, সেদিন হলের সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন। বিশেষ করে তাঁর রুমমেট যিনি লাশটি আবিষ্কার করেন, তাঁর প্রায় পাগলের দশা। অন্য অনেকেই তখন হল ছেড়ে চলে গেলো, যার যার আত্মীয়দের বাসায়।

আর যাদের যাবার জায়গা নেই, তারা হলেই থাকলো, তবে অনেকেই আতংকে একেবারে অবসন্ন হয় থাকলো। যেমন, ঐদিন রাতের বেলাতে, হঠাৎ শুনি আমাদের রুমের দরজার বাইরে থেকে আমার পাশের রুমের এক ভাই তাঁর সহপাঠী আমার রুমমেটকে ডাকছেন। কী ব্যাপার? আসলে উনি বাথরুমে যাবেন, কিন্তু একা যেতে সাহস পাচ্ছেন না!! (একটুও বানিয়ে বলছি না কিন্তু!!)

রাত কাটার পরে অনেকের ভয় কমলো, কিন্তু তবুও পুরা গেলোনা। আমাদের হলের গার্ড একদিন বিকট চিৎকার সহকারে দৌড় দিলো। ঘটনা হলো, সে নাকি গভীর রাতে দেখে ছাদে উল্টা হয়ে কে যেন হাঁটছে।

সম্মিলিত এই ভূতের ভয়ে থাকাটা আসলে আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক বিপর্যয়ের ফল।

এবার আসি, আমি কিভাবে ভূত সাজলাম, তাতে। সেমিস্টার শেষ হয়ে গেলো, দুই সেমিস্টারের ফাঁকের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি গেছে। আমি কিছু ছাত্রকে প্রোগ্রামিং শেখাতাম, তাই হলে রয়ে গেছি।

সময় বাংলাদেশে হরলিক্স বা বুস্ট কোম্পানি থেকে একটা উপহার দিতো ওদের মিল্ক চকোলেট ড্রিংকের পাউডার কিনলে, সবুজ রঙের একটা মুখোশ, যা থেকে অন্ধকারে আলো বের হয়। আসলে আর কিছুই না, অনুপ্রভা একটা উদাহরণ আরকি, মানে মুখোশে খানিক ক্ষণ আলো ফেললে ওটা চার্জ হয়ে থাকে, তার পরে বেশ অনেক্ষণ অন্ধকারেও ওটা জ্বলজ্বল করে জ্বলে।

যাহোক, রাত তখন দুইটা বাজে। আর করার কোনো কাজ নেই, রুমেও আমি একা, একটু বিরক্ত হয়ে আছি কাজ না থাকাতে। দুই তলা নীচে দ্বিতীয় তলায় আমার বন্ধু হিমু থাকে, আমি জানি সেও রুমে একা আছে। ফন্দি আঁটলাম ওকে ভয় দেখানোর। তাই মুখোশটা বেশ করে চার্জ করে ওর রুমের দিকে নামলাম।

দূর থেকে দেখি, বারান্দার অন্য কোনায় গিয়ে দাঁত মাজছে, শোয়ার প্রস্তুতিতে। আমি ওর রুমে ঢুকে বাতিটা নিভিয়ে মুখোশটা পরে বসে থাকলাম। একটু পরে পায়ের শব্দ শুনলাম। হিমু রুমের কাছে এসে একটু থমকে দাঁড়ালো, কারণ বাতিটা জ্বেলে গিয়েছিলো, এখন বাতি নেভানো ঘরের ভেতর।

আমি বুঝতে পারলাম, হিমু আসলে একটু ভয় পেয়েছে, বাতি নিভে যাওয়াতে। মিনিট খানেক পরে সাহস সঞ্চয় করে তার পর আস্তে করে ঘরের দরজাটা খুললো। আমিও আমার যথাসম্ভব নাকি গলাতে বললাম, “হাঁই হিঁমু। কেঁমন আঁছিস তুঁই?“ অন্ধকারে আমাকে দেখা যাচ্ছেনা, শুধু মনে হচ্ছে একটা জ্বলজ্বলে মাথা থেকে এই কথাটা বেরুচ্ছে।

গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে হিমু ছিটকে বেরিয়ে গেলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম, বেচারার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় নাকি!! তাই তাড়াতাড়ি মুখোশ খুলে ওকে শান্ত করলাম।

অবশ্য, হিমু প্রচন্ড ভালো একটা ছেলে। তাই এরকম বাঁদরামী করার পরেও আমাকে মাফ করে দিয়েছে।

[লেখাটি সামহয়ারইনব্লগে ২০০৭/২/২১ তারিখে প্রকাশিত]

No comments: