Friday, February 1, 2008

লাইব্রেরি কথন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে এখানকার মানুষের লাইব্রেরি প্রীতি দেখে বেশ মুগ্ধ হই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা যমজ শহর শ্যাম্পেইন ও আরবানাতে লাইব্রেরি অনেকগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এক কোটির উপরে বই আছে (বাংলা বইও আছে বেশ কিছু)। এসব বাদেও রয়েছে প্রতিটি শহরের নিজস্ব লাইব্রেরি, আর সেগুলোতে পাঠকের ভীড়ও যথেষ্ট।

এদেশে আসার শুরু থেকেই লাইব্রেরিতে আমিও ঘাঁটি গেড়ে বসেছি। বুয়েটে পড়ার সময় লাইব্রেরি থেকে কাজের বই নিতাম খুব কম - বেশি নিতাম ডানদিকের ধুলো পড়া দেয়াল ঘেঁষে থাকা অ-পাঠ্যপুস্তক এলাকার বই। বুয়েটে ইদানিং আর পাঠ্যবই বাদে অন্য কিচ্ছু কেনা হয় না, কিন্তু ষাটের দশকে মার্কিন দাতব্য সংস্থা বই পাঠিয়েছিলো প্রচুর , দান করা সেই বইয়ের মধ্যে সাহিত্য, গল্প, কবিতা, এরকম অনেক কিছুই ছিলো।

বুয়েটের ছাত্রদের আঁতেল বলে অপবাদ রয়েছে, "আউট বই" (সেকেলে ভাষায় ...) পড়ে সময় নষ্ট করার চাইতে বরং চোথাবাজি টাইপের বা সার্কিট সলিউশন ধরনের শম সিরিজের বইতেই আগ্রহ বেশি। তাই ধুলো জমতে থাকে ঐ শেলফে, বছর বছরে প্রচুর ধুলো। আমি ঐ দিকটায় যাতায়াত শুরু করি ৯৯ সাল থেকে, অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, অনেক বই সেই ষাটের দশক থেকে আজ অবধি কেউ ধরে দেখেনি।

এর পর থেকে ঐ জায়গাটা আমার খুব প্রিয় হয়ে পড়ে। লাইব্রেরিতে যেতাম ঐখানে ঘুরাঘুরি করার জন্য, আর কোনো ইন্টারেস্টিং বই পাওয়ার জন্য। উচ্চমার্গীয় সাহিত্য অবশ্য আমার মিস্তিরি-মাথার উপর দিয়ে যায়, কিন্তু ওখানে আমার ইন্টারেস্ট সাইন্স ফিকশন, আর ইংরেজি ছোটগল্পের প্রচুর বই ছিলো। "ও হেনরি"র গল্প গুচ্ছ (মনে আছে, সেই "ডেলা অ্যান্ড জিম" এর কাহিনী?) ওখানে পেয়েছি, আরো পেয়েছি হালের জুরাসিক পার্কের লেখক মাইকেল ক্রিকটনের শুরুর দিকে লেখা বই "অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইন"। আর শার্লক হোমস? তার সমগ্র পেয়েছিলাম ... পুরাটা ঘেঁটে ফেলেছি।

শেষের দিকে ঐ তাকের সব বই পড়া হয়ে গিয়েছিলো, অধিকাংশই পুরো ৩০ বা ৪০ বছরে আমিই একমাত্র ইস্যু করেছি ... এমন। বইগুলো নেয়ার সময় লাইব্রেরিয়ান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতো আমার দিকে, আজব চিড়িয়া দেখছে, এরকম চাহনীতে। আসে পাশের বিশাল আঁতেল বাহিনী আর বয়েলস্টেডের ইলেক্ট্রনিক্স বইয়ের মাঝে নাক গুঁজে থাকা ছাত্রদের মধ্যে গল্পের বই ইস্যু করতে দেখলে হয়তো চিড়িয়া মনে করাটাই স্বাভাবিক। হাজার হলেও বাঙালি তো, বাধ্য না হলে বই পড়ানো আমাদের কঠিন ... (মুজতবা আলীর লেখাটা হাঁড়ে হাঁড়ে সত্যি)।

No comments: