Wednesday, March 28, 2007

গুগলে আমি

গুগল হলো প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে exciting প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও নিত্য নতুন উদ্ভাবনার মাধ্যমে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে গুগল পৌঁছে গেছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের দিকপাল অনেক গবেষক, যেমন ভিন্ট সার্ফ এখানে এখন গবেষণা করছেন।

গুগলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেইজ নামের দুই তরুণ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র থাকাকালে তাঁরা যে গবেষণা শুরু করেছিলেন, সেই গবেষণারই ফসল হলো গুগলের সার্চ ইঞ্জিন।

গুগলের মটো বা মূলমন্ত্রটাও চমৎকার, Don't Be Evil, অর্থাৎ সোজা বাংলায়, "আমরা খাইস্টামি করবোনা"। অন্য অনেক কোম্পানি জনসাধারণের কথা মাথায় না রেখেই কাজ করে চলে লাভের আশায়, গুগল অনেকাংশে তার ব্যতিক্রম। মার্কিন সরকার সার্চ সংক্রান্ত ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চাইলে ইয়াহু! ও এওএল সাথে সাথে দিয়ে দেয়, কিন্তু গুগল তা দেয়নি, আদালতে গেছে এর বিরুদ্ধে।

যাহোক, গুগলের এতো সব গুণাগুণ থাকার কারণে এখানে কাজ করাটা অত্যন্ত লোভনীয় একটা ব্যাপার। আমি নিজে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ পছন্দ করি, ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার ইচ্ছা আছে। কিন্তু এই গ্রীষ্মে গুগলে ইন্টার্নশীপের ইচ্ছা ছিলো, ওখানকার চমকপ্রদ সব গবেষণায় অংশ নেয়ার জন্য। এই ব্যাপারটা বেশ প্রতিযোগিতামূলক - সারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য সেরা সেরা ছাত্র এর জন্য চেষ্টা করে থাকে। যাহোক, প্রথমে রেজিউমে জমা দেয়ার পরে টেলিফোনে ইন্টারভিউ নেয়ার কথা হলো, এক দিন পর পর দুই ঘন্টা ধরে দুই জনের সাথে ফোনে কথা বললাম। গুগলের ইন্টারভিউ আবার অন্য রকম, ওরা প্রোগ্রামিং বিষয়ে অল্পই প্রশ্ন করে, মূল প্রশ্ন হয় ধাঁধা টাইপের। বিভিন্ন ধরণের ধাঁধা দিয়ে ওরা দেখতে চায়, আমি কীভাবে ওর সমাধান করতে চেষ্টা করছি।

আমার সাথে যে দুই জনের কথা হলো, আমার নিজের গবেষণা বিষয়ে প্রশ্ন ছাড়াও এর পর শুরু হলো এই ধাঁধা পর্ব। ধাঁধা বা সমস্যাগুলো মোটেও সহজ নয়, তবে বেশ মাথা খাটানোর পর সমাধান করতে পেরেছিলাম। তখনি মনে হয়েছিলো, ইন্টারভিউটা ভালোই হয়েছে। কদিন পরেই গুগল থেকে যোগাযোগ করে ইন্টার্নশীপ অফার করলো ওদের সিকিউরিটি গ্রুপের সাথে।

তাই এই গ্রীষ্মের তিনটা মাস আমি গুগলে কাটাবো। ক্যালিফোর্নিয়ার চমৎকার আবহাওয়া আর গুগলের চমকপ্রদ গবেষণা - এই দুই মিলিয়ে মন্দ কাটবেনা, আশা করছি।

Wednesday, March 21, 2007

বাংলাদেশের ছবি

আমাদের দেশটা এতো সুন্দর, কিন্তু এই সৌন্দর্যকে আমরা ক্যামেরাবন্দী করাতে অতোটা সিদ্ধহস্ত হতে পারিনি। ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক স্থানের অভাব নাই। কিন্তু সেই স্থান গুলির ছবি খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হয়


এই ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ঢাকা শহরের উপরে নিবন্ধটাতে কাজ করতে গিয়ে। নিবন্ধটা এখন ইংরেজি উইকিপিডিয়ার সেরা নিবন্ধগুলির বা Featured Article এর তালিকায় ঢুকেছে। উইকিপিডিয়ার নিয়ম হলো, কোনো নিবন্ধকে এই তালিকায় আনতে হলে নিবন্ধটাতে বেশ কিছু ভালো ছবি থাকা দরকার। কিন্তু, ইন্টারনেট হতে চুরি করা (মানে কপি পেস্ট করা) ছবি তো আর উইকিপিডিয়ার মতো মুক্ত বিশ্বকোষে ব্যবহার্য না। তাই মুক্ত লাইসেন্সের ছবি খুঁজতে গেলাম। প্রথমে লাগবে সংসদ ভবনের ছবি ... অনেক ছবিই পাই, কিন্তু সব কপিরাইটেড। অনেক খুঁজে পেতে কার্ল রোহেল নামে এক জার্মান ভদ্রলোকের কাছ থেকে তাঁর তোলা ছবিটা ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সে ব্যবহারের অনুমতি পেলাম।

নগর ভবনের ছবির জন্য কাজে লাগালাম বুয়েটের এক ছাত্র রুপমকে। রিক্সা নিয়ে ঘুরাঘুরি করে বেশ কিছু ভালো ছবি তুলে দিল। বসুন্ধরা সিটির ছবিটা ফ্লিকার থেকে নিলয় নামে একজনের কাছ থেকে পেলাম। এভাবেই পেলাম ঢাকেশ্বরী মন্দির, পহেলা বৈশাখ, ইত্যাদির ছবিগুলা। কিন্তু অনেক অনেক খুঁজেও ঢাকা স্টেডিয়ামের ছবি পেলাম না (মানে মুক্ত লাইসেন্সের অধীন) তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো গ্যালারির কিছু দর্শকের ছবিই Sports অনুচ্ছেদে দিতে হলো।

এই ব্লগে নিয়মিত আসেন, এমন অনেকেই তো ঢাকায় বা বাংলাদেশের অন্যত্র থাকেন। আপনাদের অনেকেরই কাছেই তো ডিজিটাল ক্যামেরা আছে। এই ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য চাই। ছবি যা আপনি নিজে তুলেছেন, এবং যা আপনি ক্রিয়েটিভ কমন্স বা জিএনইউ ফ্রি ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সে দিতে রাজি আছেন, সেটা উইকিমিডিয়া কমন্সে আপলোড করে দিন। আপলোড করার সময় বর্ণনা পাতায় লিখুন [[Category:Bangladesh]] যাতে করে এটা অন্যরা ক্যাটেগরির পাতায় খুঁজে পেতে পারে। আর লাইসেন্স হিসাবে ক্রিয়েটিভ কমন্সের অ্যাট্রিবিউশন লাইসেন্স বেছে নিন ... এর অধীনে দিলে আপনার ছবি ব্যবহার করলে আপনার নাম ফটোগ্রাফার হিসাবে উল্লেখ করতে বাধ্য থাকবে। একটু খেয়াল রাখবেন, ছবি কিন্তু নিজের তোলাটাই আপলোড করবেন, ইন্টারনেটের অন্য সাইট থেকে নেয়া ছবি ওখানে দেয়া যাবে না।

এর মধ্যে অনেকেই ওখানে ছবি আপলোড করেছেন। ছবির গ্যালারি দেখতে হলে ঘুরে আসুন এখানে।

আসুন, আমরা আমাদের এই সুন্দর বাংলাদেশের রূপ সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরি।

এই লেখার উপরের ছবিটি সেইন্ট মার্টিন্স দ্বীপের। তুলেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকৌশলী এম ইসলাম অয়ন, এটা তিনি জিএনইউ ফ্রি ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সে প্রদান করেছেন।


[লেখাটি সামহয়ারইনব্লগে ২০০৬-১০-১৭ তারিখে প্রকাশিত]

Friday, March 9, 2007

মাছ

আগের পোস্টে তপসে মাছ নিয়ে লিখেছিলাম। আজ আবার ঐ কবিতাটা পড়ে মাছ ভাজা খাবার ইচ্ছে হচ্ছে প্রবল।

বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকি, সমূদ্র হতে প্রায় হাজার খানেক মাইল দূরে। আর প্রেইরি ঘাসের মাঠের মধ্যে নদী নালাও নেই। তাই তাজা মাছ কপালে জুটেনা, রুই-ইলিশ কিনতে হলে শ দেড়েক মাইল দূরে যেতে হয় বাজার করতে।

তাই মন্দের ভালো হিসাবে আবিষ্কার করেছি "বাটার ফিশ"। চীনাদের দোকানে এই মাছটা পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা রূপচান্দার ছোট সংস্করণ। অবশ্য অতো প্রস্থে বেশি না। কিন্তু আঁশ ছাড়াবার ঝামেলা নেই, আর পরিষ্কার করাটা খুব সহজ।

আমার স্ত্রীর কাছ থেকে রান্নার কৌশল শিখেছি, ও দেশে বেড়াতে যাওয়াতে কাজে লাগছে। মাছটার মাথা ফেলে দিয়ে, পেটের নাড়িভুড়ি এক টানেই সাফ করে ফেলা যায়। তার পর মশলা মাখিয়ে ঘন্টা খানেক রেখে দেই। এর পরে প্রচুর পিয়াঁজ দিয়ে ভাজা। চমৎকার লাগে খেতে, পুরা রূপচান্দা ভাজার স্বাদ।

অবশ্য, ইলিশ মাছ ভাজার সাথে এর কোনো তুলনাই হয় না ...

Sunday, March 4, 2007

ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের তপসে মাছ কবিতা


বাঙালির মাছ প্রীতি সর্বজন বিদিত। ভাজা মাছের গন্ধ পেলে প্রফেসর শংকুর অবিনাশ বাবুর মতো বাঙালিদের আর বেড়ালের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।

আজ উনিশ শতকের কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের তপসে মাছ কবিতাটা পড়তে গিয়ে এটাই মনে হলো।


কষিত-কনককান্তি কমনীয় কায়।
গালভরা গোঁফ-দাড়ি তপস্বীর প্রায়॥
মানুষের দৃশ্য নও বাস কর নীরে।
মোহন মণির প্রভা ননীর শরীরে॥

পাখি নও কিন্তু ধর মনোহর পাখা।
সমধুর মিষ্ট রস সব-অঙ্গে মাখা॥
একবার রসনায় যে পেয়েছে তার।
আর কিছু মুখে নাহি ভাল লাগে তার॥

দৃশ্য মাত্র সর্বগাত্র প্রফুল্লিত হয়।
সৌরভে আমোদ করে ত্রিভুবনময়॥
প্রাণে নাহি দেরি সয় কাঁটা আঁশ বাছা।
ইচ্ছা করে একেবারে গালে দিই কাঁচা॥
অপরূপ হেরে রূপ পুত্রশোক হরে।
মুখে দেওয়া দূরে থাক গন্ধে পেট ভরে॥

কুড়ি দরে কিনে লই দেখে তাজা তাজা।
টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকাতেলে ভাজা॥
না করে উদর যেই তোমায় গ্রহণ।
বৃথায় জীবন তার বৃথায় জীবন॥

নগরের লোক সব এই কয় মাস।
তোমার কৃপায় করে মহা সুখে বাস॥