Sunday, November 18, 2007

গুগল কথন - ২ : ডাইনোসরের ছায়ায় স্পেসশীপ

গুগলে কাজ শুরু করি ১৫ই মে। আগের পুরো সপ্তাহ গাড়ি চালিয়ে আমেরিকা মহাদেশের এপার থেকে ওপারে গিয়েছি, প্রায় ২৫০০ মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে। প্রথম দিনে ওরিয়েন্টেশন, নির্দেশ ছিলো সকাল নয়টার সময় গুগলের বিল্ডিং ৪৩-এর লবিতে হাজির থাকার।

গুগলের ক্যাম্পাসে ঢুকতেই সামনে পড়লো প্রকান্ড এক ডাইনোসর। তাও আবার ডাইনোসরদের রাজা টিরানোসরাস রেক্স! বিশাল হা করে বিদঘুটে, ধারালো, তেকোণা দাঁতগুলো মেলে আছে, যেন এই ধরতে আসলো। গুগলের মূল ক্যাম্পাসের চারটি ভবন - বিল্ডিং ৪০, ৪১, ৪২, ও ৪৩ এর মাঝের মাঠে রাখা, ঠিক যেনো ঢুকে পড়া অনাহুত সবার পিলে চমকে দেয়ার জন্য স্থাপিত।

এই ডাইনোসরটির নাম স্ট্যান। ৬৫ মিলিয়ন বছরের পুরনো এই ডাইনোসরটি পাওয়া গিয়েছিলো সাউথ ডাকোটা স্টেইটের এক পাহাড়ে। গুগলে অবশ্য আসল ডাইনোসরের হাড়গোড় নেই, বরং আসলটার ব্রোঞ্জে তৈরী প্রতিমূর্তি রাখা আছে। কেনো গুগলে ঢোকার মুখে এটা রাখা, ওরিয়েন্টেশনে করা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাইনি, তবে মনে হয় ঠাট্টার ছলে এটা রাখা। গুগলের এই অফিসগুলো আগে ছিলো সিলিকন ভ্যালিরই এক নামজাদা কোম্পানি, সিলিকন গ্রাফিক্সের। এক কালে চুটিয়ে ব্যবসা করা সিলিকন গ্রাফিক্স ডাইনোসরদের মতোই হঠাৎ বিলীন হয়ে যায়, ব্যবসায় লালবাতি জ্বেলে। জনশ্রুতি অনুসারে, রসিকতা করে সিলিকন গ্রাফিক্সের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই ডাইনোসর এখানে স্থাপিত। গুগলের ইঞ্জিনিয়ারদের রসবোধের আরো প্রমাণ পেলাম, ডাইনোসরের গলায় গুগলের আইডিকার্ড ঝুলতে দেখে।

ডাইনোসর ডিঙিয়ে লবিতে গিয়ে এবছরে আসা ইন্টার্নদের সাথে পরিচয় হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কানাডা, ইউরোপ, এমন কি অস্ট্রেলিয়া থেকেও অনেকে এসেছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের কঠিন এক ফোন ইন্টারভিউ পেরুতে হয়েছে সবাইকে।

ওরিয়েন্টেশনের প্রাথমিক কথাবার্তা শেষে আমাদের নেয়া হলো গুগল ভবনের এক ট্যুরে। মূল ভবন বিল্ডিং ৪৩এর লবির পাশের দরজা পেরুতেই আবারো চমকে গেলাম, প্রমাণ আকারের একটা স্পেস শীপ ঝুলছে ৪ তলা ভবনের ছাদ থেকে। গাইড হিসাবে যিনি দেখাচ্ছিলেন, তিনি জানালেন, এটা স্পেসশীপ ওয়ান - দুনিয়ার প্রথম বেসরকারী মহাকাশযানের পূর্ণ সংস্করণ। বার্ট রুটানের নকশায় প্রণীত এই স্পেসশীপটি বছর দুয়েক আগে মহাকাশের দোরগোড়ায় পৌছানোর সুবাদে এক্স প্রাইজ জিতে নিয়েছিলো। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ এক্স প্রাইজ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার হওয়াতে স্পেসশীপ ওয়ানের এই পূর্ণ আকারের সংস্করণটি এখানে রাখা।

পাশেই প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেয়ালে দেখানো হচ্ছে, দুনিয়ার বিভিন্ন স্থান হতে আসা গুগল সার্চের একটু অংশ। দ্রুত স্ক্রোল করে যাচ্ছে, ইংরেজি ছাড়াও চীনা, জাপানি, আরবি এরকম সব ভাষাতে কে কী সার্চ করছে এই মুহুর্তে, তা লাইভ দেখানো হচ্ছে। অবশ্য সবটা না, খুব অল্প অংশ। তার পাশেই একটা স্ক্রীনে দেখানো হচ্ছে একটা গ্লোব। ঘুরতে থাকা গ্লোবটাতে বিভিন্ন মহাদেশ হতে নানা বর্নের আলোকরশ্মি বেরিয়ে এসেছে, একেক ভাষার জন্য একেক রঙ। আর রশ্মি গুলো নির্দেশ করছে কোথা থেকে সার্চ আসছে। স্বভাবতই দুনিয়ার যেখানে যেখানে দিন, সেখান থেকে অনেক আলো বেরুচ্ছে। বাংলাদেশের এলাকা থেকে অল্প কিছু আলো বেরুতে দেখলাম, ইংরেজি ভাষার সার্চ নির্দেশ করা। অবশ্য তখন বাংলাদেশে গভীর রাত। আফ্রিকার পুরোটাই ঘন অন্ধকার।

গ্লোব আর প্রজেক্টরের এই দেয়ালের পাশেই রয়েছে মেং এর অ্যালবাম। মেং গুগলের একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। বড়বড় দাঁতে বিশাল এক হাসি দিয়ে বিখ্যাত লোকদের সাথে ছবি তোলাই তার শখ। গুগলে প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের নামজাদা সব লেখক, রাজনীতিবিদ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী - এরা আসেন। আর বিখ্যাত কেউ আসছে শুনলেই, ব্যস, মেং ছুটে যায় ক্যামেরা নিয়ে। ক্লিন্টন, কার্টার থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এদের ছবি তো আছেই, রয়েছে অন্য অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি। রয়েছে হিলারি ক্লিন্টন, থেকে শুরু করে মুহাম্মদ আলীর ছবি, নানা লেখক আর চিত্রতারকাদের ছবি, নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী আর শান্তিকর্মীদের ছবি।

এতো সব ছবি যখন এক এক করে সবাই দেখে চলেছে, তখন আমি তাকিয়ে রয়েছি বিপুল গর্ব নিয়ে মেং এর অ্যালবামের এক প্রান্তে, যেখানে মেং এর সাথে শোভা পেয়েছে আমাদের ডঃ ইউনুসের ছবি।

(ছবিগুলোতে রয়েছে বিল্ডিং ৪৩ এর সামনের বাগানে স্ট্যান টি রেক্সের সাথে আমি ও আমার স্ত্রী জারিয়া। ভবনের ভেতরের ছবি তোলা মানা বলে স্পেসশীপ ওয়ানের ছবি তোলা হয়নি।)

Sunday, September 23, 2007

গুগল কথন - ১ : প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্রে বসবাস

গুগলে তিন মাস টানা কাজ করে যখন ফিরছি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে, তখন মনে হলো, এই তিনটা মাস এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দ্রুত কেটে গেছে। আসলেই, গুগল এক আজব দুনিয়া।

১৯৯৮ সালে গুগলের প্রতিষ্ঠা, স্ট্যানফোর্ডের দুই ছাত্র - সের্গেই ব্রিন আর ল্যারি পেইজের হাতে। এরা দুজনে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট গুলোকে কিভাবে র‌্যাংকিং, বা ক্রম নিরূপণ করা যায়, সেই গবেষণা করছিলেন। তা করতে গিয়ে তাঁরা বের করেন পেইজর‌্যাংক নামের একটি অ্যালগরিদম। আর সেই পেইজর‌্যাংকের চমৎকারিত্বেই গুগলের অনুসন্ধানের মান হয়ে উঠে এতোটা ভালো।

সের্গেই আর ল্যারিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুই-তিন জনে শুরু হওয়া এই গুগল আজ হাজার দশেক প্রোগ্রামারের এক বিশাল প্রতিষ্ঠান। আর গুগলে সার্চ করাটা এতই নিত্যনৈমিত্ত্বিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অনেক অভিধানে "গুগল" নামের ক্রিয়াপদটিও যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ ইন্টারনেটে কারো সম্পর্কে তথ্য বের করা।

ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য-উত্তর ভাগে, সানফ্রান্সিস্কো আর সান হোসে শহরের মাঝে, সেই সুবিখ্যাত সিলিকন ভ্যালির কেন্দ্রস্থলের মাউন্টেইন ভিউ শহরে গুগলের সদরদপ্তর। জায়গাটা চমৎকার, আবহাওয়াটা বাংলাদেশের হেমন্তকালের মতো থাকে সারা বছর জুড়েই। দিনের বেলাতে তাপমাত্রা ২০-২৫ সেলসিয়াস, আর রাতে ১৫-১৬ ডিগ্রির মতো। আর ভারি সুন্দর রৌদ্রকরোজ্জ্বল আকাশ। সানফ্রান্সিস্কোতে অবশ্য ঠান্ডা পড়ে এই গরম কালেও, প্রশান্ত মহাসাগরের শীতল স্রোতের কল্যাণে। কিন্তু উপকূল হতে ৪০ মাইল ভেতরের সিলিকন ভ্যালিতে আসতে আসতে ঠান্ডার প্রকোপ কমে আসে।

আমি আর আমার স্ত্রী জারিয়া বাসা খুঁজে নিয়েছিলাম গুগলের প্রধান দপ্তরের মাইল দুয়েকের মধ্যেই। আমাদের ঐ বাসা হতে মাইল দেড়েক আসলেই হাইওয়ে ১০১ পড়ে, আর তার ওপারেই গুগল। হাইওয়ে ১০১ চলে গেছে সানফ্রান্সিস্কো হতে লস অ্যাঞ্জেলেস অবধি। তবে ভীড়টা হয় সানফ্রান্সিস্কো হতে সান হোসের মধ্যকার অংশে, অর্থাৎ সিলিকন ভ্যালির এলাকাটাতে। এখানেই লাগালাগি করে শহর গুলো গড়ে উঠেছে। সান হোসের পশ্চিমে পর্যায়ক্রমে সান্তা ক্লারা, সানিভেইল, মাউন্টেইন ভিউ, পালো আল্টো (স্ট্যানফোর্ডের ক্যাম্পাস), আর তার পরে আরো কিছু শহর পেরিয়ে সবার পরে হলো সানফ্রান্সিস্কো। এই এলাকার তাবৎ মানুষ তাই হাইওয়ে ১০১ দিয়েই চলাচল করে থাকে। প্রতি পাশে ৪টি করে মোট ৮লেইনের এই হাইওয়ে সারাক্ষণ জমজমাট। বলা হয়ে থাকে, হাইওয়ে ১০১এর ট্রাফিক জ্যাম দেখেই বোঝা যায়, সিলিকন ভ্যালির অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। আমি অবশ্য প্রচন্ড ভীড় দেখেছি, তাই বলতে পারি, এখন এখানকার কোম্পানিগুলোর রমরমা অবস্থা।

তা অবশ্য গুগল, ইয়াহূ!, সান, আর মাইক্রোসফটের বিশাল অফিস গুলো দেখলেই বোঝা যায়। এদের মধ্যে গুগল সবচেয়ে নবীন। তার পরেও প্রায় ২ মাইল এলাকা জুড়ে এদের মোট ১৬টা অফিস ভবন রয়েছে। এর পরেও জায়গা হচ্ছেনা দেখে আশে পাশে আরো অনেক ভবন ভাড়া নেবার পাঁয়তারা চলছে।


তথ্য প্রযুক্তির এই প্রাণকেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা সহজ না। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে পুরো আমেরিকার সব নামজাদা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এখানে ইন্টার্নশীপ, বা তিন মাসের শিক্ষানবিশী কাজের জন্য আবেদন করে থাকে। (গুগল অবশ্য এই তিন মাস ওদের স্থায়ী প্রকৌশলীদের হারেই বেতন দেয় :) )। গত কয়েক বছর গ্রীষ্মকালে কাজ করেছি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারকম্পিউটার সেন্টার এনসিএসএ-তে। তাই এবছরের শুরুতেই ঠিক করি, এবার আর এখানে না, বরং গবেষণা ও প্রোগ্রামিং এর হাতে কলমে কাজ হয়, এমন কোথাও ইন্টার্নশীপ করবো। অফার অবশ্য পেয়েছিলাম বেশ কয়েক জায়গা থেকে। কিন্তু মাইক্রোসফট, এইচপি, কিংবা ইয়াহুর থেকেও গুগলে কাজ করার ইচ্ছাটা অনেক বেশি ছিলো। কারণ, গুগলের সম্পর্কে এতো গল্প চালু, ওদের কাজের পরিবেশের এতো সুনাম, আর এতো প্রচন্ড ইন্টারেস্টিং সব প্রজেক্ট ওদের এখানে চলছে, তাই ভেবেচিন্তে গুগলের ইন্টার্নশীপটাই বেছে নিই।


গুগলে এসে এই তিন মাসে যা দেখেছি, তাতে বুঝেছি, সিদ্ধান্তটা ঠিকই নিয়েছিলাম। প্রথম দিনটি থেকেই শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত চমৎকৃত হয়েছি প্রতিদিনই, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের অসাধারণ প্রয়োগের বিভিন্ন নিদর্শন দেখে দেখে।

(ছবি - গুগলে আমার অফিস ভবনের সামনে আমি, গুগলের মূল ভবন বিল্ডিং ৪০-র পাশে আমি ও জারিয়া, এবং গুগলের মূল চারটি ভবনের মাঝের বাগানে জারিয়া। ডাইনোসরের সাথের ছবি আগামী পর্বে আসছে)

[চলবে]


Wednesday, July 25, 2007

মডারেশন ১০১ (অথবা উইকিপিডিয়াতে মডারেশনের প্রথম পাঠ)

উইকিপিডিয়া দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ, আর ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড়ো কোলাবরেটিভ প্রজেক্ট। সারা দুনিয়ার লাখ লাখ লোক এতে কাজ করছে। এদের মধ্যে ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে যেমন অনেকে এসেছে, আবার অনেকে এসেছে তাদের মতাদর্শ বা পক্ষপাত প্রচারের জন্য। অনেকে আবার নিছক মজা করার জন্য হিজিবিজি ভ্যান্ডালিজম করে থাকে।

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এই প্রজেক্টে তাহলে শান্তি বজায় থাকে কীভাবে? সেটাই আমার এই পোস্টের বিষয়বস্তু।

উইকিপিডিয়াতে হাজারো মানুষের ভিড়ে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য আছে বেশ কিছু নীতিমালা। এর মধ্যে রয়েছে -

  • ব্যক্তিগত আক্রমণ নয় - অন্য কোনো এডিটরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা যাবে না। তর্ক হবে বিষয়ের উপরে, ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ আসবে না। যেমন, কাউকে বলা যাবে না, "তুমি গবেট", বরং বলা যেতে পারে, "তোমার যুক্তিতে ফাঁক আছে", বা দেয়া যাবে যুক্তির পালটা যুক্তি। গালাগাল করা যাবে না।
  • শোভন - কথা বার্তায় শোভন আচরণ করতে হবে।
  • জাতিগত আক্রমণ - কোনো ধরণের জাতিগত আক্রমণ (রেসিস্ট) করা যাবে না।
  • সম্পাদনার ক্ষেত্রে - এক দিনে বড়জোর তিনবার অন্য কারো লেখা আনডু করে নিজের পছন্দের সংস্করণে ফেরত নেয়া যাবে।
  • কপিরাইট মানা - মানতেই হবে। কপিরাইটেড ছবি দেয়া যাবে না।

    [*] ব্যক্তিগত গোপনীয়তা - মানুষের প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে। কারো গোপনীয় ইমেইল, চ্যাট বা অন্য কিছু প্রকাশ করা যাবে না। কারো প্রকৃত নাম ঠিকানা প্রকাশ করা যাবে না একেবারেই।

    যদি কেউ এসব নীতিমালা ভঙ্গ করে, তাহলে প্রথম দিকের অপরাধ গুলো, যেমন ব্যক্তিগত আক্রমণ, অশোভন আচরণ, জাতিগত আক্রমণ, বা কপিরাইট ভঙ্গের জন্য প্রথমে হালকা সতর্কবাণী (দুই থেকে তিন বার দেয়া হয়)। তার পর প্রথমে ৩ থেকে ২৪ ঘন্টার জন্য আইডি এবং আইপি অ্যাড্রেস ব্লক করা হয়। ব্লক শেষে ফেরার পরেও যদি আচরণ না পালটায়, তাহলে হয়তো ব্লকের দৈর্ঘ্য বাড়ে সপ্তাহে, তার পর মাসে।

    ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষেত্রে নীতি আরো কঠোর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাথে সাথে ব্লক করে দেয়া হয়।

    আর কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে এরকম আচরণ চালায়, তাহলে তার নামে শালিশ ডাকা হয়। শালিশে দুই পক্ষের সব কীর্তিকলাপের প্রমাণ হাজির করা হয়, এবং তা থেকে নিরপেক্ষ শালিশকারীরা বিভিন্ন রায় দেন। যেমন, অশোভন আচরণকারী কাউকে হয়তো বলে দেয়া হয়, ভবিষ্যতে একবার কোনো খারাপ মন্তব্য দিলেই বিনা হুঁশিয়ারিতে কয়েক মাসের জন্য ব্লক করা হবে।

    তবে, উইকিপিডিয়ার একটা বড় সুবিধা আছে, সবকিছু খুবই ট্রান্সপারেন্ট, মানে সবার সব আচরণ, সব কমেন্ট, আর সব কথা অন্য যে কেউ যাচাই করে দেখতে পারে। প্রশাসকেরাও তাঁদের আচরণের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য। প্রশাসকেরা কেউ কোনো নীতিমালা ভঙ্গ করলে ছাড় দেয়া হয়না তাদেরকেও। প্রশাসনে যারা আছেন, তাঁদেরকে "চাহিবা মাত্র" তাঁদের সব কাজ কোন নীতিমালার আলোকে, তা ব্যাখ্যা করতে হয়। আর নীতিমালা পাথরে খোদাই করা না, বরং জনমানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই নীতিমালা বিবর্তিত হয় থাকে।

    এসব নীতিমালা এবং তার নিরপেক্ষ প্রয়োগের কারণেই উইকিপিডিয়াতে লাখ লাখ সম্পাদকের ভীড়ে, ভালো এডিটর আর ভ্যান্ডাল/ট্রোলদের মাঝে, শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।

    (পোস্টের নামে ১০১ আছে, আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিষয়ের প্রথম কোর্সের কোর্স নাম্বার হয় ১০১। তাই "মডারেশনের বাল্যশিক্ষা"কে নিয়ে লেখা পোস্টের শিরোনাম ওভাবে দিয়েছি)

  • Thursday, July 5, 2007

    বাংলা উইকিপিডিয়া খুঁজছে - আপনাকেই!!

    বাংলা উইকিপিডিয়া হলো বাংলা ভাষায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বকোষ গড়ে তোলার এক মহা প্রয়াস। আজ বহু বছর ধরে বাংলাতে বিশ্বকোষ লেখার কাজ চলেছে, ছাপা হয়েছে অনেক বিশ্বকোষ। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্বকোষেই স্বল্প কিছু ভুক্তি স্থান পেয়েছে, কিন্তু স্থান পায়নি স্থানাভাবে বাংলার ইতিহাসের অনেক কথা, আমাদের ঐতিহ্যের অনেক কিছু। অথবা, বাংলার উপরে লেখা বিশ্বকোষে স্থান পায়নি বিশ্বের অন্য এলাকার কথা, বা জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা। আর এই সব বিশ্বকোষের মোটা মোটা সব বইগুলো লাইব্রেরিতে, অথবা বড়লোকদের বাড়িতে স্থান পেয়েছে। জনমানুষের কাছে সহজলভ্য একটি বিশ্বজনীন জ্ঞানকোষ আজো পৌছানো যায় নি।



    দুনিয়াটা আজ প্রবেশ করেছে ইন্টারনেট যুগে। এই সময়ে তথ্য এসে গেছে মানুষের হাতের মুঠোয়, কম্পিউটারে মাউজের একটি ক্লিকেই এসে যায় সব তথ্য। সব বিশ্বকোষ এখন এসে গেছে ইন্টারনেটে, আর দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে উইকিপিডিয়া। জনমানুষের, সারা দুনিয়ার লাখ লাখ মানুষের অল্প অল্প প্রচেষ্টা স্থান পেয়েছে এই সমন্বিত জ্ঞান ভান্ডারে।


    এই জ্ঞানকোষের বাংলা সংস্করণ হলো বাংলা উইকিপিডিয়া। গত বছরের শুরু থেকে বাংলা উইকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করার যে চেষ্টা চলছে, তার ফল হিসাবে আজ বাংলা উইকিপিডিয়াতে ভুক্তির সংখ্যা সাড়ে ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। লক্ষ্য করুন, আমি কিন্তু ভুক্তি বলছি, নিবন্ধ বলিনি। কারণ হলো, এই ভুক্তি গুলোর অনেক গুলোতেই বাক্য, কথামালা, তথ্য যুক্ত হয়নি। আর সেটা করতে পারেন, আপনারাই!!


    সম্প্রতি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ২০০০ নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বিতরণ করেছিলো বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। যে অভূতপূর্ব সাড়া আমরা পেয়েছিলাম, তাতে বোঝা যায়, বাঙালির বিশ্বকোষের প্রতি আগ্রহ এই এসএমএস জেনারেশনের যুগেও কমেনি মোটেও। তাই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলাতে বিশ্বকোষের এরকম সিডি সংস্করণ প্রকাশের একটা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।


    বাংলা উইকিপিডিয়ার এই সিডি প্রকল্পে থাকবে ২০০০টি বাংলা নিবন্ধ। মোট ১৩টি বিষয়শ্রেণী - শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্য, দর্শন ও ধর্ম, প্রাত্যহিক জীবন, সমাজ, ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত, প্রযুক্তি, জীবনী, বাংলাদেশ, ভারত (পশ্চিমবঙ্গ) - এর অধীনে অনেক গুলো নিবন্ধের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এর তালিকা পাবেন এখানে। এই ভুক্তি গুলোর অনেকগুলো এখনো তৈরী হয়নি, আবার অনেকগুলোতে তথ্য যোগ, বাক্য যোগ করা দরকার।


    আর সেটা করতে পারেন, আপনারাই।


    বেশি কাজের প্রয়োজন নেই। একটা ভুক্তি খুলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তির ইংরেজি নিবন্ধটা হতে একটা বাক্য অনুবাদ করে দিন। ১০ জনে একটা করে বাক্য অনুবাদ করলেই একটা অনুচ্ছেদ গোটা অনুবাদ হয়ে যায়। আর ছবি তুলে দিতে পারলে তো কথাই নেই, ইতিমধ্যেই সহব্লগার ঝড়ো হাওয়া অনেক ছবি তুলে মুক্ত লাইসেন্সে দিয়েছেন বাংলা উইকিপিডিয়ার জন্য।


    এই ৫ মিনিটের ছোট্ট একটু কাজটাই হতে পারে আগামী দিনের শিশুদের জন্য আপনার উপহার।

    Friday, June 29, 2007

    ভাষার কড়চা - ৩

    ভাষার সৃষ্টি অনেক আগে হলেও ভাষা লেখার পদ্ধতি এসেছে পরে। লিখন পদ্ধতির উদ্ভব হয় প্রথমে সুমের অঞ্চলে (আধুনিক ইরাক)। এর পাশাপাশি মিশরেও লেখালেখি শুরু হয়, আজ থেকে প্রায় হাজার পাঁচেক বছর আগে। সুমেরের লেখাগুলো কাদার টুকরার মধ্যে কাঠি দিয়ে চাপ দিয়ে লেখা হতো। এগুলোকে বলা হয় কিউনিফর্ম লেখা।

    মিশরের চিত্রলেখের নাম হায়েরোগ্লিফিক। এই ধরণের লেখায় ছবি বা চিহ্ন দিয়ে বিভিন্ন শব্দকে বোঝানো হতো। একেকটি চিহ্ন বা ছবি একেকটি শব্দ বা বাক্যের প্রতীক।

    চীনের লেখাও এরকম চিত্রভিত্তিক। সেই আদিকাল থেকে শুরু হওয়া ঐ পদ্ধতিই এখনও চীনে চালু। চীনা ভাষায় প্রায় ৫০০০ বা তারো বেশি চিহ্ন চালু আছে। কোনো বর্ণমালা নেই। আমার পরিচিত চীনাদের প্রশ্ন করেছিলাম, ওদের পড়াশোনা শিখতে সময় লাগে কী রকম। ওদের কাছ থেকে জেনেছি, পত্র পত্রিকা পড়ার মতো বিদ্যা অর্জন করতে ওদের অন্তত ক্লাস সেভেন বা এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হয়।

    চিত্রভিত্তিক এই লিখন পদ্ধতির ঝামেলা অনেক। এর বিকল্প হিসাবে উদ্ভব হয় বর্ণমালা। আর এই বর্ণমালার স্রষ্টা হলো ফিনিশীয় এবং সেমিটীয় জাতির লোকেরা। (ইহুদীরা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেকে এই সেমিটীয় জাতির বংশধর, আর ফিনিশীয়রা ছিল এখনকার লেবানন/সিরিয়া এলাকার বণিক সম্প্রদায়)। যাহোক, এসব লিপিতে ছবির বদলে বর্ণমালার মাধ্যমে শব্দ লেখা হতো। শেখা সহজ বলে চিত্রলেখের চাইতে বর্ণমালার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় সহজেই।

    শুরুর দিকের মধ্যপ্রাচ্যের ঐ সব বর্ণমালার লেখাগুলো ডান থেকে বাম দিকে লেখা হতো। ঐ সব লিপির উত্তরসূরী হচ্ছে হিব্রু ও আরবি, যা আজও ডান থেকে বাম দিকে লেখা হয়। উলটা দিকে, অর্থাৎ বাম থেকে ডানে লেখার রীতি শুরু করে গ্রীকরা।

    ভারতবর্ষ সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে চালু অধিকাংশ লিপির পূ্ব পুরুষ হলো আরামিক লিপি। তা থেকে আসে ব্রাহ্মী লিপি, প্রায় হাজার দুয়েক বছর আগে। আর সেটা থেকেই ধীরে ধীরে উদ্ভব হয় বাংলার।

    Monday, June 25, 2007

    ভাষার কড়চা - ২

    উইকিপিডিয়া নিয়ে কাজ করতে করতে একদিন একটা মূদ্রা দেখে চমকে গেলাম। মূদ্রাটি দশম শতকের, এবং শ্রীলংকার চোল রাজবংশের রাজা উত্তম চোলের শাসনামলে চালু করা মূদ্রা।

    তবে আমার চমকে যাওয়ার কারণটা অন্য। মূদ্রার গায়ে উত্তম চোলের নাম লেখা আছে, বাংলা হরফে!! শ্রীলংকায় কীভাবে গেলো এই বাংলা লেখা? উত্তম চোলের শাসনামল ৯৭০ হতে ৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি। চোল রাজবংশ ছিলো দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলংকার অধিপতি, ১৩শ শতক পর্যন্ত এদের রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিলো মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, সুমাত্রা ও বালি দ্বীপেও।

    যাহোক, এদের মূদ্রায় বাংলা এলো কী করে?

    এই প্রশ্ন রেখেছিলাম উইকিপিডিয়ান সামীরুদ্দৌলা খানের কাছে, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট লস অ্যাঞ্জেলেসে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন। মূদ্রাটা দেখে আমার মতো উনিও চমকে গিয়েছিলেন প্রথমে। পরে বেশ খোঁজাখুজি করে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন।

    আসলে বাংলা হরফের উদ্ভব হয়েছে নাগরী লিপি হতে। নাগরী লিপির উদ্ভব হয় প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মী লিপি হতে। সংস্কৃত লেখা হতো ব্রাহ্মী লিপিতে। নাগরী লিপির এক শাখাতে রয়েছে বাংলা হরফ, যা অসমীয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া-মণিপুরী ভাষা লেখাতেও ব্যবহৃত হয়। এই শাখার নাম হলো পূর্ব-নাগরী লিপি।

    আর অন্য শাখায় রয়েছে দেবনাগরী। আধুনিক সময়ে হিন্দি, মারাঠি, সংস্কৃত, নেপালী ইত্যাদি ভাষা লেখায় এই হরফ ব্যবহৃত হয়।

    সামীরের ব্যাখ্যা হলো, ১০ম শতকের দিকে তৈরী করা এই মূদ্রাতে আসলে নাগরী লিপির এক আদি রূপ দেখতে পাচ্ছি। নাগরী লিপি তখনো পূর্বীয় আর দেবনাগরী - এতো বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যায় নি। চর্যাপদের কথা মনে আছে? বাংলা ভাষার প্রাচীনতম লিখিত নিদর্শন এই চর্যাপদ লেখা হয়েছিলো ৮ম হতে ১১শ শতকের মধ্যে। একই সময়ে চোল রাজবংশের ব্যবহার করা ভাষাতেও এই নাগরী হরফ ব্যবহার করা হয়েছিলো।

    যাহোক, ব্যাখ্যাটা নাহয় পাওয়া গেলো, কিন্তু তার পরেও, আধুনিক বাংলা লিপির সাথে এই মূদ্রাটার এতো প্রচন্ড মিল যে, চমকে যেতে হয়।

    প্রাচীন ভারতের অনেক লিপির পাঠোদ্ধার আজো হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর দূর্বোধ্য শিলালিপি। মিশরের হায়েরোগ্লিফিকের কথা মনে পড়তে পারে, উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ওটাও দূর্বোধ্য ছিলো। নেপোলিয়ন মিশর জয়ের জন্য যখন অভিযান পাঠান, তাঁর সেনাবাহিনীর সাথে কিছু ভাষাবিদও পাঠিয়েছিলেন। এদের একজন, ক্যাপ্টেন পিয়েরে ফ্রাঁসোয়া বুচার্দ মিশরের রশীদ নামের শহরে খুজে পান একটা শিলালিপি, যার নাম দেয়া হয় রোসেট্টা স্টোন (শহরের ফরাসী/ইংরেজি নাম রোসেট্টা হতে)। তার পাঠোদ্ধার করেন ভাষাবিদ জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাঁপোলিও, ১৮২২ সালে।

    পাঠোদ্ধার করলেন কীভাবে? আসলে ঐ শিলালিপিতে হায়েরোগ্লিফিকের (চিত্রলেখ) পাশাপাশি ডেমোটিক ও পুরানো গ্রীক ভাষাতেও একই কথা লেখা ছিলো। লেখা মিলিয়ে মিলিয়ে শাঁপোলিও হায়েরোগ্লিফিকের ছবিগুলোর অর্থ বোঝার পদ্ধতি বের করেন।

    কিন্তু আজো হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর লেখাগুলোর পাঠোদ্ধারের জন্য ওরকম কিছু পাওয়া যায় নি। তাই ভারতের আদি ঐ সভ্যতার কথা, তাদের জীবনকাহিনী রয়ে গেছে অজানাই।

    Sunday, June 24, 2007

    ভাষার কড়চা

    বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের নিজেদের আবেগ, অথবা অবজ্ঞা, কোনোটারই কমতি নেই। আসলে ছোটবেলা থেকে ভাষা বিষয়ে পড়া মানেই ভাব-সম্প্রসারণ, বা কবিতার তাৎপর্য লেখার মতো ভয়াবহ বিষয়ের জন্য মানুষ ভাষার প্রতি আগ্রহ হারায়।

    অথচ ভাষা হলো আমাদের প্রাণের সবচেয়ে কাছের একটা জিনিষ।

    যাহোক, ভাষা নিয়ে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় পড়ছিলাম উইকিপিডিয়ার সুবাদে। আগেই জানতাম, কিন্তু তার পরেও অনেক গুলো ছোটখাট বিষয় হয়তো অনেকের কাছে ইন্টারেস্টিং লাগতে পারে - যেমন -

    বাংলা, তথা সংস্কৃত হতে সৃষ্টি হওয়া সব ভাষাই ইউরোপীয় বিভিন্ন ভাষার সাথে জড়িত। আসলে একই মূল উৎস হতে এসব ভাষার উৎপত্তি। এই ব্যাপারটা অষ্টাদশ শতকে জার্মান ভাষাবিদেরা প্রথম লক্ষ করেন। যেমন, সংস্কৃত পিতা - পিত্র, ইউরোপীয় অনেক ভাষায় ফাদার, পিতার। এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেখানো যায়। এই সব কিছু বিবেচনা করে এই মহাগোষ্ঠীর নাম দেয়া হয়েছে ইন্দো-ইয়ুরোপায়ন ভাষাগোষ্ঠী। পুরা ইউরোপের ইংরেজি, জার্মান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগীজ, রাশিয়ান, ইতালিয়ান, দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দি, উর্দু, বাংলা, মরাঠি, পাঞ্জাবী, - এই সব ভাষাই এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। দুনিয়ার প্রায় ১৬০+ কোটি মানুষের মাতৃভাষা এটা (আরো অনেক বেশি মানুষ এই ভাষাগুলোতে কথা বলতে পারেন)।

    তবে, ইউরোপের সব মানুষ আবার এই ভাষাগোষ্ঠীর ভাষাতে কথা বলেন না। যেমন, স্পেনের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বাস্ক-রা বাস্ক ভাষাতে কথা বলে, যার সাথে আর কোনো ভাষার একেবারেই মিল নেই। সেরকম হাঙ্গেরিয়দের ভাষাও অন্য উৎস হতে আসা।

    দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি বলা একক ভাষা হলো চীনের ম্যান্ডারিন ভাষা (এর নামটা এসেছে সংস্কৃত "মন্ত্রী" হতে, কারণ ভাষাটার চীনা নামটার অর্থ মন্ত্রীদের ভাষা, অর্থাৎ ভদ্রলোকের সাধু ভাষা)। তবে চীনেই বহু ভাষা চালু আছে, এক অঞ্চলের লোক অন্যদের ভাষা একেবারেই বোঝেনা।

    বাংলাদেশের ভাষা বাংলা, তবে এর মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রামের ভাষাকে উপভাষার মর্যাদা দেন অনেকে ভাষাবিদ। চট্টগ্রামের ভাষা আর আরাকানের ভাষা প্রায় এক, লেখার রীতিটাই কেবল আলাদা। ত্রিপুরাতে বাংলা ব্যবহার হয়ে আসলেও ইদানিং ওরা বাংলার বদলে কোকবরক নামের একটা ভাষা চালু করার চেষ্টা করছে।

    বাংলা হরফ শুধু বাংলা নয়, অসমীয়া এবং মণিপুরী ভাষাতেও ব্যবহার করা হয়।

    শ্রীলংকায় পাওয়া ১০ম শতকের একটা মূদ্রায় পরিষ্কার বাংলা লেখা দেখেছি!! অবাক হয়েছিলাম, তবে শ্রীলংকার উপকথায় রয়েছে, বাংলারই এক রাজপুত্র লংকা জয় করেছিলেন।

    [অসমাপ্ত]

    Wednesday, March 28, 2007

    গুগলে আমি

    গুগল হলো প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে exciting প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও নিত্য নতুন উদ্ভাবনার মাধ্যমে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে গুগল পৌঁছে গেছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের দিকপাল অনেক গবেষক, যেমন ভিন্ট সার্ফ এখানে এখন গবেষণা করছেন।

    গুগলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেইজ নামের দুই তরুণ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র থাকাকালে তাঁরা যে গবেষণা শুরু করেছিলেন, সেই গবেষণারই ফসল হলো গুগলের সার্চ ইঞ্জিন।

    গুগলের মটো বা মূলমন্ত্রটাও চমৎকার, Don't Be Evil, অর্থাৎ সোজা বাংলায়, "আমরা খাইস্টামি করবোনা"। অন্য অনেক কোম্পানি জনসাধারণের কথা মাথায় না রেখেই কাজ করে চলে লাভের আশায়, গুগল অনেকাংশে তার ব্যতিক্রম। মার্কিন সরকার সার্চ সংক্রান্ত ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চাইলে ইয়াহু! ও এওএল সাথে সাথে দিয়ে দেয়, কিন্তু গুগল তা দেয়নি, আদালতে গেছে এর বিরুদ্ধে।

    যাহোক, গুগলের এতো সব গুণাগুণ থাকার কারণে এখানে কাজ করাটা অত্যন্ত লোভনীয় একটা ব্যাপার। আমি নিজে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ পছন্দ করি, ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার ইচ্ছা আছে। কিন্তু এই গ্রীষ্মে গুগলে ইন্টার্নশীপের ইচ্ছা ছিলো, ওখানকার চমকপ্রদ সব গবেষণায় অংশ নেয়ার জন্য। এই ব্যাপারটা বেশ প্রতিযোগিতামূলক - সারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য সেরা সেরা ছাত্র এর জন্য চেষ্টা করে থাকে। যাহোক, প্রথমে রেজিউমে জমা দেয়ার পরে টেলিফোনে ইন্টারভিউ নেয়ার কথা হলো, এক দিন পর পর দুই ঘন্টা ধরে দুই জনের সাথে ফোনে কথা বললাম। গুগলের ইন্টারভিউ আবার অন্য রকম, ওরা প্রোগ্রামিং বিষয়ে অল্পই প্রশ্ন করে, মূল প্রশ্ন হয় ধাঁধা টাইপের। বিভিন্ন ধরণের ধাঁধা দিয়ে ওরা দেখতে চায়, আমি কীভাবে ওর সমাধান করতে চেষ্টা করছি।

    আমার সাথে যে দুই জনের কথা হলো, আমার নিজের গবেষণা বিষয়ে প্রশ্ন ছাড়াও এর পর শুরু হলো এই ধাঁধা পর্ব। ধাঁধা বা সমস্যাগুলো মোটেও সহজ নয়, তবে বেশ মাথা খাটানোর পর সমাধান করতে পেরেছিলাম। তখনি মনে হয়েছিলো, ইন্টারভিউটা ভালোই হয়েছে। কদিন পরেই গুগল থেকে যোগাযোগ করে ইন্টার্নশীপ অফার করলো ওদের সিকিউরিটি গ্রুপের সাথে।

    তাই এই গ্রীষ্মের তিনটা মাস আমি গুগলে কাটাবো। ক্যালিফোর্নিয়ার চমৎকার আবহাওয়া আর গুগলের চমকপ্রদ গবেষণা - এই দুই মিলিয়ে মন্দ কাটবেনা, আশা করছি।

    Wednesday, March 21, 2007

    বাংলাদেশের ছবি

    আমাদের দেশটা এতো সুন্দর, কিন্তু এই সৌন্দর্যকে আমরা ক্যামেরাবন্দী করাতে অতোটা সিদ্ধহস্ত হতে পারিনি। ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক স্থানের অভাব নাই। কিন্তু সেই স্থান গুলির ছবি খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হয়


    এই ব্যাপারটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ঢাকা শহরের উপরে নিবন্ধটাতে কাজ করতে গিয়ে। নিবন্ধটা এখন ইংরেজি উইকিপিডিয়ার সেরা নিবন্ধগুলির বা Featured Article এর তালিকায় ঢুকেছে। উইকিপিডিয়ার নিয়ম হলো, কোনো নিবন্ধকে এই তালিকায় আনতে হলে নিবন্ধটাতে বেশ কিছু ভালো ছবি থাকা দরকার। কিন্তু, ইন্টারনেট হতে চুরি করা (মানে কপি পেস্ট করা) ছবি তো আর উইকিপিডিয়ার মতো মুক্ত বিশ্বকোষে ব্যবহার্য না। তাই মুক্ত লাইসেন্সের ছবি খুঁজতে গেলাম। প্রথমে লাগবে সংসদ ভবনের ছবি ... অনেক ছবিই পাই, কিন্তু সব কপিরাইটেড। অনেক খুঁজে পেতে কার্ল রোহেল নামে এক জার্মান ভদ্রলোকের কাছ থেকে তাঁর তোলা ছবিটা ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সে ব্যবহারের অনুমতি পেলাম।

    নগর ভবনের ছবির জন্য কাজে লাগালাম বুয়েটের এক ছাত্র রুপমকে। রিক্সা নিয়ে ঘুরাঘুরি করে বেশ কিছু ভালো ছবি তুলে দিল। বসুন্ধরা সিটির ছবিটা ফ্লিকার থেকে নিলয় নামে একজনের কাছ থেকে পেলাম। এভাবেই পেলাম ঢাকেশ্বরী মন্দির, পহেলা বৈশাখ, ইত্যাদির ছবিগুলা। কিন্তু অনেক অনেক খুঁজেও ঢাকা স্টেডিয়ামের ছবি পেলাম না (মানে মুক্ত লাইসেন্সের অধীন) তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো গ্যালারির কিছু দর্শকের ছবিই Sports অনুচ্ছেদে দিতে হলো।

    এই ব্লগে নিয়মিত আসেন, এমন অনেকেই তো ঢাকায় বা বাংলাদেশের অন্যত্র থাকেন। আপনাদের অনেকেরই কাছেই তো ডিজিটাল ক্যামেরা আছে। এই ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য চাই। ছবি যা আপনি নিজে তুলেছেন, এবং যা আপনি ক্রিয়েটিভ কমন্স বা জিএনইউ ফ্রি ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সে দিতে রাজি আছেন, সেটা উইকিমিডিয়া কমন্সে আপলোড করে দিন। আপলোড করার সময় বর্ণনা পাতায় লিখুন [[Category:Bangladesh]] যাতে করে এটা অন্যরা ক্যাটেগরির পাতায় খুঁজে পেতে পারে। আর লাইসেন্স হিসাবে ক্রিয়েটিভ কমন্সের অ্যাট্রিবিউশন লাইসেন্স বেছে নিন ... এর অধীনে দিলে আপনার ছবি ব্যবহার করলে আপনার নাম ফটোগ্রাফার হিসাবে উল্লেখ করতে বাধ্য থাকবে। একটু খেয়াল রাখবেন, ছবি কিন্তু নিজের তোলাটাই আপলোড করবেন, ইন্টারনেটের অন্য সাইট থেকে নেয়া ছবি ওখানে দেয়া যাবে না।

    এর মধ্যে অনেকেই ওখানে ছবি আপলোড করেছেন। ছবির গ্যালারি দেখতে হলে ঘুরে আসুন এখানে।

    আসুন, আমরা আমাদের এই সুন্দর বাংলাদেশের রূপ সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরি।

    এই লেখার উপরের ছবিটি সেইন্ট মার্টিন্স দ্বীপের। তুলেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকৌশলী এম ইসলাম অয়ন, এটা তিনি জিএনইউ ফ্রি ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সে প্রদান করেছেন।


    [লেখাটি সামহয়ারইনব্লগে ২০০৬-১০-১৭ তারিখে প্রকাশিত]

    Friday, March 9, 2007

    মাছ

    আগের পোস্টে তপসে মাছ নিয়ে লিখেছিলাম। আজ আবার ঐ কবিতাটা পড়ে মাছ ভাজা খাবার ইচ্ছে হচ্ছে প্রবল।

    বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকি, সমূদ্র হতে প্রায় হাজার খানেক মাইল দূরে। আর প্রেইরি ঘাসের মাঠের মধ্যে নদী নালাও নেই। তাই তাজা মাছ কপালে জুটেনা, রুই-ইলিশ কিনতে হলে শ দেড়েক মাইল দূরে যেতে হয় বাজার করতে।

    তাই মন্দের ভালো হিসাবে আবিষ্কার করেছি "বাটার ফিশ"। চীনাদের দোকানে এই মাছটা পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা রূপচান্দার ছোট সংস্করণ। অবশ্য অতো প্রস্থে বেশি না। কিন্তু আঁশ ছাড়াবার ঝামেলা নেই, আর পরিষ্কার করাটা খুব সহজ।

    আমার স্ত্রীর কাছ থেকে রান্নার কৌশল শিখেছি, ও দেশে বেড়াতে যাওয়াতে কাজে লাগছে। মাছটার মাথা ফেলে দিয়ে, পেটের নাড়িভুড়ি এক টানেই সাফ করে ফেলা যায়। তার পর মশলা মাখিয়ে ঘন্টা খানেক রেখে দেই। এর পরে প্রচুর পিয়াঁজ দিয়ে ভাজা। চমৎকার লাগে খেতে, পুরা রূপচান্দা ভাজার স্বাদ।

    অবশ্য, ইলিশ মাছ ভাজার সাথে এর কোনো তুলনাই হয় না ...

    Sunday, March 4, 2007

    ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের তপসে মাছ কবিতা


    বাঙালির মাছ প্রীতি সর্বজন বিদিত। ভাজা মাছের গন্ধ পেলে প্রফেসর শংকুর অবিনাশ বাবুর মতো বাঙালিদের আর বেড়ালের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।

    আজ উনিশ শতকের কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের তপসে মাছ কবিতাটা পড়তে গিয়ে এটাই মনে হলো।


    কষিত-কনককান্তি কমনীয় কায়।
    গালভরা গোঁফ-দাড়ি তপস্বীর প্রায়॥
    মানুষের দৃশ্য নও বাস কর নীরে।
    মোহন মণির প্রভা ননীর শরীরে॥

    পাখি নও কিন্তু ধর মনোহর পাখা।
    সমধুর মিষ্ট রস সব-অঙ্গে মাখা॥
    একবার রসনায় যে পেয়েছে তার।
    আর কিছু মুখে নাহি ভাল লাগে তার॥

    দৃশ্য মাত্র সর্বগাত্র প্রফুল্লিত হয়।
    সৌরভে আমোদ করে ত্রিভুবনময়॥
    প্রাণে নাহি দেরি সয় কাঁটা আঁশ বাছা।
    ইচ্ছা করে একেবারে গালে দিই কাঁচা॥
    অপরূপ হেরে রূপ পুত্রশোক হরে।
    মুখে দেওয়া দূরে থাক গন্ধে পেট ভরে॥

    কুড়ি দরে কিনে লই দেখে তাজা তাজা।
    টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকাতেলে ভাজা॥
    না করে উদর যেই তোমায় গ্রহণ।
    বৃথায় জীবন তার বৃথায় জীবন॥

    নগরের লোক সব এই কয় মাস।
    তোমার কৃপায় করে মহা সুখে বাস॥

    Wednesday, February 28, 2007

    বঙ্গবাণী - আবদুল হাকিমের কাব্য

    মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের নূরনামা কাব্যের এই অংশটি আগে অনেকে পোস্ট করেছেন, কিন্তু তবুও আমার খুব পছন্দের কাব্য বলে আবারো পোস্ট করছি

    কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস।
    সে সবে কহিল মোতে মনে হবিলাষ॥
    তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।
    নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন॥

    আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।
    দেশী ভাষা বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ॥
    আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত।
    যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত॥

    যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।
    সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন॥
    সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।
    বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী॥

    মারফত ভেদে যার নাহিক গমন।
    হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গণ॥

    যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
    সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় জানি॥
    দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে জুয়ায়।
    নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ যায়॥

    মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।
    দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি॥

    সূত্রঃ দীপায়নের সাইট

    উইকিপিডিয়াতে সরাসরি লিখুন বাংলা

    বাংলা উইকিপিডিয়াতে লেখার জন্য অনেক দিন ধরেই আহবান জানাচ্ছি সবাইকে। এই ব্লগে লেখার পরে কেউ কেউ গিয়েছেন, যদিও আরো অনেকে গেলে ভালো হতো। যাই হোক, একটা বড় অভিযোগ ছিলো, বাংলা লিখতে হলে অভ্র বা এধরণের কিছু ইন্সটল করতে হয়। অনেকেই কর্মক্ষেত্রে বা অন্যত্র বাংলা সফটওয়ার ইন্সটলের ঝামেলাতে যেতে চাননা বলে আর লিখতে পারেননি।

    এই সমস্যার সমাধান করতে বাংলা উইকিপিডিয়াতে এখন সরাসরি বাংলা ইউনিকোড লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলা উইকিপিডিয়ার কর্মী ও প্রশাসক অর্ণব জাহিন জাভাস্ক্রিপ্ট এর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা যোগ করেছেন। যেকোনো পৃষ্ঠা সম্পাদনার মোডে খুললেই উপরে একটি চেক বক্স পাবেন, বাংলায় লিখতে চাইলে ওতে টিক দিয়ে দিন। অথবা আরো সহজে, এস্কেপ চাপুন, তাহলে বাংলা চালু হবে, আবার এস্কেপ চাপলে ইংরেজি/স্বাভাবিক মোডে ফেরত যাবেন।

    এর ফলে এখন বাংলা উইকিপিডিয়াতে লেখালেখি করাটা অনেকের জন্যই সহজ হবে বলে আশা করছি। প্রাথমিকভাবে আমরা কেবল অভ্র ফোনেটিক মোড রেখেছি (যা সামহয়ারইনব্লগের ফোনেটিকের খুব কাছাকাছি)।


    তাই, সফটওয়ার ইন্সটল করতে হবে, এই ভয়ে যারা উইকিপিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন, তাঁরা এখন চলে আসুন আমাদের এই প্রজেক্টে। খুব শিঘ্রই আমরা একটা বড় প্রজেক্টে হাত দিতে যাচ্ছি, অচিরেই আমি এর ঘোষণা দিবো। বাংলাতে
    লেখা বিশ্বকোষ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদের উপহার হয়ে থাকবে।


    Tuesday, February 27, 2007

    দেশবিভাগ - সুফল ও কুফল

    মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগে কিছু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। ওদের সাথে নিয়মিত দেখা হলেই আমরা প্রাণ খুলে বাংলায় কথা বলি। যদিও কথার আঞ্চলিক টান দুই বাংলায় দুই রকম, তবু বাংলা ভাষার এই পুরানো বন্ধন এক করে রাখে বাঙালিদের।

    তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ আমাদের কী সুফল দিয়েছে, আর কী সর্বনাশ ডেকেছে।

    সুফলের মধ্যে প্রথমেই আসে পূর্ববঙ্গের উন্নতি। হ্যাঁ, পাকিস্তানী আমলে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, কিন্তু তবুও তো পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় একটা দুটো করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বুয়েট একটা স্থানীয় কলেজ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। কলকাতাকেন্দ্রীক রাজনীতির জন্য পূর্ববঙ্গ সব সময় অবহেলিত হয়েছিলো, নগরায়ন, শিল্পায়ন সব দিকেই পিছিয়ে ছিলো। অন্তত সে দিক হতে আলাদা হয়ে পূর্ববঙ্গ নতুন দিক নির্দেশনা পেয়েছে। এখানকার সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যা হয়েছে, কিন্তু পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের ব্যাপক সামাজিক, শিক্ষাগত সাংস্কৃতিক উন্নতি হয়েছে। আজকেই প্রথম আলোতে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা পড়ছিলাম, উনি লিখেছেন, দেশভাগের পরে পঞ্চাশের দশক হয়েছিলো বাঙালি মুসলমানের বাঙালি হয়ে ওঠার সময়, আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার সূচনার সময়।

    এবার আসি কী সর্বনাশ হয়েছে। পূর্ববঙ্গের এক বিশাল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশ ভাগের সময় পরের বছরগুলোতে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। নিজের দেশ ছাড়তে তাঁদের কী পরিমাণ কষ্ট হয়েছে, তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না কোনোদিনই। আজো অনেক পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির সাথে কথা হলে তাঁরা আমাকে বলেন, তাঁদের বাবা বা মার বাড়ি চট্টগ্রাম, বা বরিশাল, আজো তাদের বাবা-মায়েরা পূর্ববঙ্গের দেশের বাড়ির কথা বলেন। আমরা হারিয়েছি জীবনানন্দ দাশ, অমর্ত্য সেন, মেঘনাদ সাহা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, এদের। পশ্চিমবাংলার বর্তমানের প্রচন্ড খ্যাতনামা অনেক সাহিত্যিকের বাড়িই কিন্তু পূর্ববঙ্গে।

    আরবানার টেগোর ফেস্টিভ্যালে সুনীল আর মমতাজউদ্দিন এসেছিলেন। দুজনের কথাতেই এই বেদনার প্রকাশ ঘটলো। সুনীলের বাড়ি ফরিদপুরে, আর মমতাজউদ্দিনের বাড়ি মালদহে। ৪৭ এর দেশ বিভাগের পরে দুজনেই নিজের মাটি ছেড়ে চলে গেছেন পরদেশে। সুনীলকে কাছ থেকে দেখে সহজেই দেখতে পেলাম, সেই বাঙ্গাল চেহারার ছাপ। কথাতেও আজও কলকাতার প্রভাব অতটা লাগেনি।

    অমর্ত্য সেনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বাড়ি পুরানো ঢাকায়। সেরকমই জ্যোতি বসুর বাড়ি।

    এভাবে দেশ ভাগের ফলে আমাদের বাঙালি সত্ত্বা দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়েছে আজ।

    অবশ্য, সুফল কুফল বিচার করে দেশ বিভাগ না হলে কী হতো, তা বলাও কঠিন। দেশ ভাগ না হলে অমর্ত্য সেন হয়তো ঢাকার অর্থনীতিবিদ হিসাবে আমাদের খুব কাছে থাকতেন, কিন্তু দুলা মিঞা সওদাগরের ছেলে মুহাম্মদ ইউনুস হয়তো ডঃ ইউনুস হতে পারতেন না, সুযোগের অভাবে।

    যাহোক, অনেক লম্বা করে ফেললাম কথা। আসলে একটু আগে আমার অ্যালবামে সুনীল আর মমতাজউদ্দিনের সেই ব্যথিত চাহনির ছবিগুলো চোখে পড়লো, তাই এতো কথা এলো মনের মাঝে। হাজার পাসপোর্ট আর কাঁটা তারের বেড়া সত্ত্বেও দুজনেই বাঙালি, বাংলার মাটির সাথেই নাড়ির টান।

    [লেখাটি সামহয়ারইনব্লগে ২০০৭/২/২৭ তারিখে প্রকাশিত]

    ইতিহাসের সাক্ষী : বিবি মরিয়ম কামান

    বাংলা উইকিপিডিয়া হতে

    বিবি মরিয়ম কামান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত মোগল শাসনামলের একটি নিদর্শন। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মোগল সেনাপতি মীর জুমলার সময় এটি ঢাকায় স্থাপন করা হয়।[]


    সুবাদার মীর জুমলা আসাম অভিযানে এটি ব্যবহার করেছিলেন। ৬৪৮১৫ পাউন্ড ওজনের এই কামানটি পরে তিনি সুবা বাংলার তদানিন্তন রাজধানী ঢাকার বড় কাটরার সামনে সোয়ারীঘাটে এটি স্থাপন করেন। []

    পরবর্তীতে এর অর্ধাংশ বালির তলায় তলিয়ে যায়। ১৮৪০ সালে লেখা কর্নেল ডেভিডসনের রচনায় তার উল্লেখ রয়েছে। ১৮৪০ সালে ঢাকার তদানিন্তন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াল্টার্স ব্রিটিশ প্রকৌশলীদের সহায়তায় সোয়ারীঘাট হতে উত্তোলন করে চকবাজার এলাকায় স্থাপন করেন। [][]

    ১৯১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের পরিচালকের উৎসাহে এটিকে সদরঘাটে স্থাপন করা হয়। পরে ১৯৫৭ সালে ঢাকা ইম্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) এর সভাপতি জিএ মাদানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এটিকে ডিআইটি অ্যাভিনিউ জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (বর্তমানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) এর সংযোগস্থলে স্থানান্তর করেন। ১৯৮০ এর দশকের শেষভাগে এটিকে ওসমানী উদ্যান স্থানান্তরিত করা হয়। []


    *তথ্যসূত্র

    1. মুনতাসীর মামুন, “ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী“, ৩য় সংস্করণ, ৪র্থ মূদ্রণ, জানুয়ারি ২০০৪, অনন্যা প্রকাশনালয়, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৮০, ISBN 9844121043।
    2. এরশাদ আহমেদ, Mir Jumla's Cannon Bibi Mariam.