Friday, June 29, 2007

ভাষার কড়চা - ৩

ভাষার সৃষ্টি অনেক আগে হলেও ভাষা লেখার পদ্ধতি এসেছে পরে। লিখন পদ্ধতির উদ্ভব হয় প্রথমে সুমের অঞ্চলে (আধুনিক ইরাক)। এর পাশাপাশি মিশরেও লেখালেখি শুরু হয়, আজ থেকে প্রায় হাজার পাঁচেক বছর আগে। সুমেরের লেখাগুলো কাদার টুকরার মধ্যে কাঠি দিয়ে চাপ দিয়ে লেখা হতো। এগুলোকে বলা হয় কিউনিফর্ম লেখা।

মিশরের চিত্রলেখের নাম হায়েরোগ্লিফিক। এই ধরণের লেখায় ছবি বা চিহ্ন দিয়ে বিভিন্ন শব্দকে বোঝানো হতো। একেকটি চিহ্ন বা ছবি একেকটি শব্দ বা বাক্যের প্রতীক।

চীনের লেখাও এরকম চিত্রভিত্তিক। সেই আদিকাল থেকে শুরু হওয়া ঐ পদ্ধতিই এখনও চীনে চালু। চীনা ভাষায় প্রায় ৫০০০ বা তারো বেশি চিহ্ন চালু আছে। কোনো বর্ণমালা নেই। আমার পরিচিত চীনাদের প্রশ্ন করেছিলাম, ওদের পড়াশোনা শিখতে সময় লাগে কী রকম। ওদের কাছ থেকে জেনেছি, পত্র পত্রিকা পড়ার মতো বিদ্যা অর্জন করতে ওদের অন্তত ক্লাস সেভেন বা এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হয়।

চিত্রভিত্তিক এই লিখন পদ্ধতির ঝামেলা অনেক। এর বিকল্প হিসাবে উদ্ভব হয় বর্ণমালা। আর এই বর্ণমালার স্রষ্টা হলো ফিনিশীয় এবং সেমিটীয় জাতির লোকেরা। (ইহুদীরা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেকে এই সেমিটীয় জাতির বংশধর, আর ফিনিশীয়রা ছিল এখনকার লেবানন/সিরিয়া এলাকার বণিক সম্প্রদায়)। যাহোক, এসব লিপিতে ছবির বদলে বর্ণমালার মাধ্যমে শব্দ লেখা হতো। শেখা সহজ বলে চিত্রলেখের চাইতে বর্ণমালার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় সহজেই।

শুরুর দিকের মধ্যপ্রাচ্যের ঐ সব বর্ণমালার লেখাগুলো ডান থেকে বাম দিকে লেখা হতো। ঐ সব লিপির উত্তরসূরী হচ্ছে হিব্রু ও আরবি, যা আজও ডান থেকে বাম দিকে লেখা হয়। উলটা দিকে, অর্থাৎ বাম থেকে ডানে লেখার রীতি শুরু করে গ্রীকরা।

ভারতবর্ষ সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে চালু অধিকাংশ লিপির পূ্ব পুরুষ হলো আরামিক লিপি। তা থেকে আসে ব্রাহ্মী লিপি, প্রায় হাজার দুয়েক বছর আগে। আর সেটা থেকেই ধীরে ধীরে উদ্ভব হয় বাংলার।

No comments: