কাপড় চোপড় কেনার ক্ষেত্রে বঙ্গবাজার হলো আমার দৌড়। মানে প্যান্ট কেনা আর কি। চট্টগ্রামে ছিলো জহুর হকার্স মার্কেট, আর ঢাকায় যখন পড়তে আসলাম বুয়েটে, তখন থেকেই জিন্স কিনতে হলে রিকশায় চেপে সেই বঙ্গবাজারে যাওয়া।
ওখানে কেনাকাটা করার বেশ কিছু কৌশল আছে। যদি খুব মাঞ্জা মেরে যান, দোকানদার আপনাকে মালদার পার্টি মনে করে ঐরকমই দাম চাইবে। বঙ্গ-তে কেনাকাটা করতে হলে তাই আমি সবসময় যেতাম স্যান্ডেল পায়ে, টিশার্ট আর জিন্স পরে।
দামাদামি হলো বঙ্গতে আমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যাপার। জিন্সের দাম চাইতো শুরুতে ৮০০ টাকা। আমি বলতাম ১০০ টাকার নীচে, বা ভালো লাগলে খুব বেশি হলে ১০০টাকা। দোকানদার হয়তো আঁতকে উঠে কিপটামি সংক্রান্ত একটা বাঁকা কথা বলতো। ওসব কথা গায়ে মাখলে আর বঙ্গতে কেনাকাটা করা লাগতো না। তাই দিব্বি বিশাল হাসি বজায় রেখে দোকানদারের সাথে আড্ডা জমাতাম। কারণ, দোকানদার যদি আপনার পিছনে ২০ মিনিট বা আধা ঘন্টা সময় ব্যয় করে, তাহলে এক সময় ঠিক দামেই জিনিষটা দিয়ে দিবে। নইলে তো তার সময়টা গচ্চা গেলো। এরকম আড্ডা মারতে মারতে ৮০০ টাকা দাম হাঁকা ঐ জিন্স কিনতাম ১৮০ বা খুব বেশি হলে ২২০ টাকায়।
ঐযে বলেছিলাম, কাপড় চোপড় দেখে ওরা দাম হাঁকে। বিয়ের পরে একদিন আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ঐ একই দোকানদার একই জিন্সের দাম শুরু করলো ১৫০০ টাকা হতে। অবশ্য দামাদামির স্টাইল দেখে বুঝে নিলো অল্প পরেই যে পুরানো পাবলিক। ২২০ টাকাতেই শেষে দিলো।
বিদেশে যখন পড়তে যাচ্ছি, তখন শীতের বড় জ্যাকেট কিনতে বঙ্গবাজারে গিয়েছিলাম। পিছনের দিকের একটা জায়গায় এগুলো বিক্রি করে। প্রচুর শীতের কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম ঐবার, যার মধ্যে দুইটা বড় জ্যাকেট ছিলো, একটা হাঁটু পর্যন্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর ওখানকার বাংলাদেশীরা ভয় দেখালো। ৫-৬ বছর দেশে যাননি, এমন একজন প্রশ্ন করলেন, ইলিনয়ের শীত তো খুব বেশি, কাপড় কিনবো কবে। আমি জানালাম আমার বঙ্গের জ্যাকেটের কথা। উপস্থিত অনেকে হাসাহাসি করলেন, বললেন বঙ্গের ঐ জ্যাকেটে বাংলাদেশের শীত মানতে পারে, আমেরিকার শীত মানবে না। কাজেই আমি যেন মানে মানে সময় থাকতে এখান থেকে জ্যাকেট কিনে নেই। তখন অবশ্য গরম কাল ছিলো, তাই অন্যরা কী জ্যাকেট পরছে তা দেখিনি। ভাবলাম, বঙ্গ কী শেষ পর্যন্ত ডোবাবে নাকী আমাকে!!
যখন শীতকাল এলো, তখন শেষ হাসিটা আমিই হাসলাম। চারিদিকে সবাই যেই জ্যাকেট পরছে, সবই বঙ্গের জ্যাকেটের কপি। কিন্তু তফাৎটা হলো, এসব জ্যাকেট এরা কিনেছে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ডলার দিয়ে। সেই জায়গায় আমার বঙ্গের একই মানের জ্যাকেটটা কিনেছিলাম ৪০০ টাকায়। একদিন জেসিপেনি নামের শপিং মলের বিশাল দোকানটায় গিয়ে দেখি আমার ঐ জ্যাকেটটাই ঝুলছে। ট্যাগ চেক করে দেখি মেইড ইন বাংলাদেশ!!
আজ এই কথা মনে হলো আবারো, বঙ্গের সেই জ্যাকেট পরে যখন বাইরে বরফ পরিষ্কার করতে বেরিয়েছিলাম। দিব্বি আরামে -১৫ সে তাপমাত্রাতেও গরম ছিলাম।
তাই বারে বারে বলি,
বঙ্গবাজার দীর্ঘজীবী হোক।
Monday, February 19, 2007
বঙ্গবাজার দীর্ঘজীবী হোক!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment